০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৭:০২:৩৫ অপরাহ্ন


দেশকে শরীফ নুরুল আম্বিয়া
সরকার এখন আর জনপ্রিয় না
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-১১-২০২৩
সরকার এখন আর জনপ্রিয় না শরীফ নুরুল আম্বিয়া


বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেছেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপি’র সভা ভন্ডুল করেছে পুলিশ, সম্ভবত  পূর্ব পরিকল্পনা মত। তবে ২৮ অক্টোবর বিএনপি’র মহাসমাবেশ ভালোভাবে সম্পন্ন না হলেও ব্যর্থ হয়নি।  অনেক বাধা বিপত্তির পর আগত মানুষদের নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে পারলে হয়তো এটা স্মরণ কালের বৃহত্তম  সমাবেশ হত। সাধারণ মানুষ এখন বলাবলি করছে যে সরকারের লোকরাই এসব করেছে। এ সরকার এখন আর জনপ্রিয় সরকার নয়।

আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ। 

দেশ: ২৮ অক্টোবরে রাজধানীতে যা ঘটে গেলো সে বিষয়ে আপনার মতামত কি? বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপির অহিংস আন্দোলনে এধরনের ঘটনা কিভাবে দেখেন?

শরীফ নুরুল আম্বিয়া: ২৮ অক্টোবর বিএনপি'র মহাসমাবেশ ভালোভাবে সম্পন্ন না হলেও ব্যর্থ হয়নি। অনেক বাধা বিপত্তির পর আগত মানুষদের নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে পারলে হয়তো এটা স্মরণ কালের বৃহত্তম  সমাবেশ হত। সভা ভন্ডুল করেছে পুলিশ, সম্ভবত  পূর্ব পরিকল্পনা মত। তারা সমাবেশ মঞ্চের বেশ দূরেই ঘটে যাওয়া তুচ্ছ বিবাদ নিয়ে সমাবেশ বন্ধ করার জন্য সাউন্ড গ্রেনেড, গোলাগুলিসহ হামলা করে সমাবেশ পন্ড করে দিয়েছে। ফলে বিক্ষুব্ধ জনতা হয়তো কোন কোন ক্ষেত্রে  সহিংস আচরণ করেছে, যা  অস্বাভাবিক বলা যায় না। প্রথম দিনে মিডিয়া যেসব খবর, ছবি এবং লাইভ কভারেজ দিয়েছে তা ঘটনাবলির প্রকৃত ও পুর্ণাঙ্গ চিত্র নয়। ওপেন সোর্স থেকে যা প্রকাশিত হচ্ছে তাতে এখন স্পষ্ট যে অনেক ক্ষেত্রে হামলা অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতায় পুলিশ এবং বিশেষ মহল জড়িত। সাধারণ মানুষ এখন বলাবলি করছে যে সরকারের লোকরাই এসব করেছে। তবে এই ঘটনায় একজন পুলিশ, একজন সাংবাদিক একজন যুব দলের কর্মী মৃত্যুবরণ করেছে, অনেকে আহত হয়েছে,-যা খুবই বেদনাদায়ক। এই সহিংস সংঘাতের রাজনৈতিক দায় প্রধানত সরকারের, কেননা তারা আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট সমাধানের পথে না গিয়ে পাল্টা  সমাবেশ ডেকেছেন এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেছেন। বিএনপির কর্মীরা পুলিশ ও ষড়যন্ত্রকারিদের ফাঁদে পা দিয়ে কর্মসূচির সাফল্য ক্ষুন্ন করেছেন। তবে আমার মনে হয়, সরকার নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া দিয়ে যা-ই প্রচার করুক না কেন, এবং প্রতিপক্ষের উপর যত নির্যাতন করুক না কেন, পরিস্থিতি সরকারের প্রতিকূলে যাবে এবং জনগণ আরো সরকারের উপর বিক্ষুব্ধ হবে। আমরা এখনো মনে করি, সরকার বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট রাজপথে সমাধানের  সিদ্ধান্ত নিয়ে বড় রকমের ভুল করছে।

দেশ: আপনি কি মনে করেন বিশেষ করে বিভিন্ন আন্দোলনে এধরনের ঘটনার পেছনে ঘটনা থাকে। তাই আপনি কি মনে এ-ই ২৮ তারিখে সংহিতার পেছনেই অন্য কিছু আছে?

শরীফ নুরুল আম্বিয়া: যারা জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চায় এবং যে সকল আন্তর্জাতিক শক্তি বাংলাদেশে ক্ষমতায় কারা থাকবে সে বিষয়ে বেশি আগ্রহী তারা এসমস্ত ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে।

দেশ: গত ২৮ অক্টোবরে জামায়াতের উপস্থিতি কিভাবে দেখেন? জামায়াতের এমন উপস্থিতি কি বার্তা দেয়? কারা এ-র পেছনে আছে বলে মনে করেন?

শরীফ নুরুল আম্বিয়া: জামায়াতের সভা সাধারণত বড় ও ভালো হয়। পুলিশের সংগে তলে তলে যে তাদের বোঝাপড়া ভালোই আছে তা স্পষ্ট হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী দল জামায়াতকে সরকার জিইয়ে রেখেছে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক সুবিধার জন্য, ভোটের সময় অনুকূল ভূমিকার পেতে, অন্যথায়  প্রতিপক্ষের উপর মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ট্যাগ লাগানোর জন্য। জামায়াত সক্রিয় হতে বিদেশী সহযোগীতা পেয়ে থাকলে বিস্মিত হব না।

দেশ: আপনি কি মনে করেন আপনারাসহ বিরোধী দল সরকারের জনপ্রিয়তার পাশাপাশি ক্ষমতা কাছে অনেক দুর্বল? মানে জনগণ আসলেই সরকারের উন্নয়ন কেই গুরুত্ব দিচ্ছে। আর সে কারণে বিরোধী দলের আন্দোলনে জোর পাচ্ছে না বা জনসম্পৃক্তিতা নেই?

শরীফ নুরুল আম্বিয়া: এ সরকার এখন আর জনপ্রিয় সরকার নয়। তারা উন্নয়নের নামে প্রকল্প করেছে লুন্ঠনের জন্য, এটা মানুষ এখন বোঝে। সরকার পক্ষের শক্তি, লুণ্ঠিত টাকাকড়ি, পুলিশ-প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা, লুটেরা-দুর্বৃত্তদের সিন্ডিকেট। সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে অপব্যবহার করে ক্ষমতা প্রদর্শন করছে। দীর্ঘদিন একনায়কত্বমূলক ও ভীতিকর শাসনের মধ্যে থাকার কারণে সাধারণ মানুষের অনুভুতির জোর প্রকাশ পায় না। তবে যে কোন সময় মানুষের বিক্ষোভ বিস্ফোরিত হতে পারে।

দেশ: দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে বা আপনাদের ভাষায় গণতন্ত্র উদ্ধারে দেশবাসী কি সফল হবে?

শরীফ নুরুল আম্বিয়া: দেশ ও জনগণের সুরক্ষার স্বার্থে সফল হতেই হবে। গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদী সংগ্রাম করার বিকল্প নেই। বিদ্যমান সংবিধানের সংস্কারেরও প্রয়োজন রয়েছে। এই মুহূর্তে গণতন্ত্রের সড়কে উঠতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী ব্যবস্থা, লুটেরাদের বিচার এবং জবাবদিহিতামূলক সমাজ প্রতষ্ঠা করার প্রাথমিক লক্ষ্য নিয়ে দেশবাসী সংগ্রাম করবে।

শেয়ার করুন