২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৯:৩৫:৪৮ পূর্বাহ্ন


বাইডেন বললেন এই রায় নিষ্ঠুর
গর্ভপাত বিষয়ে ঐতিহাসিক রায় পরিবর্তন করলো সুপ্রিম কোর্ট
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৬-২০২২
গর্ভপাত বিষয়ে ঐতিহাসিক রায় পরিবর্তন করলো সুপ্রিম কোর্ট ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের বাইরে গর্ভপাত-বিরোধীদের আনন্দ উচ্ছ্বাস


গর্ভপাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা প্রায় অর্ধশতাব্দী পুরোনো এক রায়কে উল্টে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট। অনেকেই আগেই এমন এক পদেেপর ব্যাপারে অনুমান করেছিলেন। এর ফলে গর্ভপাতের অনুমতি দেয়া বা না দেয়ার বিষয়টি অঙ্গরাজ্যগুলোর এখতিয়ারে চলে গেল। অন্যদিকে এই রায়ের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছে পুরো আমেরিকা। বিভিন্ন স্টেটে চলছে বিক্ষোভ। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের এই রায় নিষ্ঠুর। সেই সাথে তিনি জনগণকে রাস্তায় নামার ডাক দিয়েছেন।

গত ২৪ জুন আদালতের রণশীলদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে এই রায় দেয়া হয়। এর মাত্র দুই মাসেরও কম সময় আগে, এমন সিদ্ধান্তের খসড়া এক সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইটে ফাঁস হয়েছিল। এর ফলে গর্ভপাতের অধিকারের পরে সক্রিয়বাদীরা দেশব্যাপী প্রতিবাদ আরম্ভ করেছিলেন। ১৯৭৩ সালের রো বনাম ওয়েড নামের এক মামলা এবং প্ল্যান্ড প্যারেন্টহুড বনাম কেসি নামের পৃথক আরেকটি মামলার রায় উল্টে দেয় আদালত। যদিও এর ফলে গর্ভপাতের ওপর সরাসরি কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি, তবুও প্রায় অবিলম্বেই দেশব্যাপী এর আইনি প্রভাব পড়বে। গুটমাখের ইনস্টিটিউট নামক, ব্যক্তিগত অভিমতের পাবলম্বী এক গবেষণা সংস্থার অনুমান বলছে যে, রো বনাম ওয়েডের রায় প্রত্যাহার করায় এখন মূলত দণিাঞ্চল ও মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলের ২৬টি অঙ্গরাজ্য গর্ভপাত নিষিদ্ধ ঘোষণা করবে। এর ফলে ল ল নারী বাধ্য হবে গর্ভপাত করাতে এমন কোনো অঙ্গরাজ্যে সফর করতে, যেখানে গর্ভপাতের অধিকার রা করা হয়েছে। মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যের এক আইন বিষয়ে করা মামলায় সুপ্রিম কোর্ট এমন রায় দিলো। ওই আইনে গর্ভধারণের ১৫তম সপ্তাহের পর থেকে সকল গর্ভপাতকে নিষিদ্ধ করা হয়। এই সময়সীমাটি রো বনাম ওয়েড এর রায়ের আওতায় দেয়া সময়সীমার থেকে কয়েক সপ্তাহ কম। মিসিসিপির একমাত্র গর্ভপাত কিনিক, জ্যাকসন উইমেন’স হেলথ অর্গানাইজেশন ২০১৮ সালের এই আইনকে ফেডারেল আদালতে চ্যালেঞ্জ করে। তারা যুক্তি দেয় যে, এমন আইনের ফলে সুপ্রিম কোর্টের প্রায় ৫০ বছরের নজির ভঙ্গ হবে।

এর আগে দুই নিম্নতর আদালত কিনিকটির পে রায় দেয়। তারপরই আরো ২৫টি রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত অঙ্গরাজ্যের সমর্থন নিয়ে মিসিসিপি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। তারা বিচারকদের কাছে রো এবং কেসি, উভয় মামলার রায় পাল্টে ফেলার আবেদন জানায়। তাদের আবেদনে তারা দাবি করে যে, সংবিধানে কোনো কিছুই এমন নেই, যা কিনা গর্ভপাতের অধিকার সমর্থন করে।

হাইকোর্টের ছয় বিচারপতি তাতে সম্মত হন। তারা সকলেই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টদের মনোনীত ছিলেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিদের দেয়া মতামতটিতে রণশীল বিচারপতি স্যামুয়েল আলিটো লেখেন, সংবিধানে গর্ভপাতের বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি এবং এমন কোনো অধিকার সাংবিধানিক বিধান দ্বারা অন্তর্নিহিতরূপে সুরতি না, যার মধ্যে ১৪তম সংশোধনীর যথাযথ প্রক্রিয়াও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

১৪তম সংশোধনীতে বলা হয়েছে যে, কোনো অঙ্গরাজ্যই যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ব্যতীত কোনো মানুষকে জীবন, স্বাধীনতা, বা সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে সংবিধানে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই এমন অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে সুপ্রিম কোর্ট এই সংশোধনীটি ব্যবহার করেছে, যেমন সমলিঙ্গ বিবাহের অধিকার। তবে আলিটো যুক্তি দেখান যে, এমন যে কোনো অধিকারের অবশ্যই ‘এই দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে গভীর ভিত্তি থাকতে হবে’ ফাঁস হয়ে যাওয়া ওই খসড়ায় তিনি লেখেন, গর্ভপাতের অধিকার এই শ্রেণির মধ্যে পড়ে না। মতামতটিতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের পরিবর্তে অঙ্গরাজ্যগুলোর উচিত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া, যে গর্ভপাতের অনুমতি দেয়া হবে কিনা।

অন্যদিকে আদালতের তিনজন উদারপন্থী বিচারক এবং রণশীল প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন।


গর্ভপাত ইস্যু

সুপ্রিম কোর্টের রায় ‘নিষ্ঠুর’, জনগণকে রাস্তায় নামার ডাক বাইডেনের

 মার্কিন নারীদের গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে, তাকে ‘নিষ্ঠুর’ বলে আখ্যায়িত করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পাশাপাশি এই রায়ের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে বিােভ- প্রতিবাদ শুরু করতে অধিকারকর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। হোয়াইট হাউসে দেয়া এক ভাষণে বাইডেন বলেন, ‘আজকের দিনটি আমাদের ইতিহাসের একটি দুঃখের দিন। আদালত মানুষের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, যা আমরা আগে কখনো দেখিনি।’ ‘এই রায় এতোটাই নিষ্ঠুর যে, এখন থেকে একজন মার্কিন নারী ও তরুণীরা ধর্ষকদের সন্তানও জন্ম দিতে বাধ্য থাকবে।’

১৯৭৩ সালে ঐতিহাসিক ‘রো বনাম ওয়েড’ মামলার রায়ের মাধ্যমে নারীদের গর্ভপাতের অধিকারকে যে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট, শুক্রবার তা বাতিল করা হয়েছে। মিসিসিপির রাজ্য সরকার গর্ভধারণের ১৫ সপ্তাহের পর গর্ভপাত নিষিদ্ধ করাকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা এক মামলায় রাজ্য সরকারের পে রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।

ফলে মার্কিন নারীরা গত ৫০ বছর ধরে থেকে গর্ভপাতের যে সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করে আসছিলেন, তা কার্যত রোহিত হয়ে যায় এবং গর্ভপাতের অনুমোদন দেয়া বা না দেয়ার মতা প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু এই রায়ের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট আসলে যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের জীবন ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে ফেলেছে উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, ‘আমাদের দেশের নারীদের স্বাস্থ্য ও জীবন আজ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে; আর একটি ব্যাপার হলো- এই রায় আমাদের সমাজের মূলনীতিতে কুঠারাঘাত করেছে।’ ‘যুক্তরাষ্ট্রের সমাজব্যবস্থা সমতার ওপর প্রতিষ্ঠিত, এই সমাজে একজন নারী তার নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণের মতা রাখেন; আজ আদালত নারীর সেই অধিকার কেড়ে নিলো।’

এই রায়ের বিরুদ্ধে জনগণকে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘কিন্তু এখানেই শেষ নয়। যারা যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে লড়ে যাচ্ছেন, এখনো শেষ কথা বলার বাকি আছে।’ ‘আমি কেবল অনুরোধ জানাবো- এই লড়াই যেন শান্তিপূর্ণ হয়।’

শেয়ার করুন