২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৬:৫২:০৬ পূর্বাহ্ন


এ অবস্থায় নির্বাচনে গেলে স্যাংশন আসতে পারে : জি এম কাদের
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-১১-২০২৩
এ অবস্থায় নির্বাচনে গেলে স্যাংশন আসতে পারে : জি এম কাদের বক্তব্য রাখছেন জি এম কাদের


জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, এখনো নির্বাচনে যাওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। এই অবস্থায় নির্বাচনে গেলে আমাদের ওপর স্যাংশন আসতে পারে। গত ১৩ নভেম্বর রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভার সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সারা দেশ থেকে নেতারা অংশ নেন। তারা বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দলের করণীয় নিয়ে নানা পরামর্শ দেন। 

জিএম কাদের নেতাদের উদ্দেশ্যে তার বক্তব্যে বলেন, এই মুহূর্তে আমরা যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারি আমাদের অস্তিত্বে সংকট দেখা দিতে পারে। অক্টোবর বলেছিলাম, নভেম্বর চলে যাচ্ছে আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। কারণ পরিস্থিতি এতোটাই অস্পষ্ট। আমাদের নানাভাবে বঞ্চনা, নিগৃহ করা হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের কোনো সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়নি। অনেকে সম্মানটুকুও পাননি।

সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, সকলের মতামতের প্রতিফলন নাও হতে পারে। কিন্তু সকলকে একসঙ্গে থাকতে হবে। আপনারা সবাই আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে আপসে একমত না। এখন প্রশ্ন হলো- বর্তমান পরিস্থিতিতে সঠিকভাবে নির্বাচন হওয়া সম্ভব না। এটা আমরা সবাই বুঝি। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন করা অর্থহীন। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন বর্জন করলে কী হবে? আমাদের দলের উপর একটা চাপ সৃষ্টি হতে পারে। আর নির্বাচনে গেলে? সরকার যদি পরবর্তীতে সমস্যায় পড়ে আমাদের কী হবে? আমাদের কিন্তু দলকেও বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সমস্যা হলে আমাদের মাথাতেও আঘাত আসবে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র দেয়া চিঠি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন, আমেরিকা চায় সকল দলের নিঃশর্ত সংলাপ। আমারও চাই সংলাপ হোক। একচেটিয়া ক্ষমতা ধরে রাখবেন এটাতো হতে পারে না। তা না হলে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। সুষ্ঠু নির্বাচন যদি না হয়, সরকার যদি সংলাপ না করে তারপরও নির্বাচনে আমরা গেলে আমাদের উপরও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। সরকার যদি আলাপ-আলোচনা না করে সরকারের উপরও নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। সেই প্রেক্ষিতে আমরা মনে করছি সরকার একটা সংলাপের ব্যবস্থা করতেও পারে। সেখানে বিএনপি আসতেও পারে। সেই সংলাপে আমরা কিছু প্রস্তাব দেবো। বিএনপিও কিছু প্রস্তাব দেবে। এরপর এই প্রস্তাব মেনে নেয়া হলে বিএনপি নির্বাচনে আসতেও পারে। তিনি নেতাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে বলেন, তখন আমরা কী করবো? আপনারা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন সেহেতু আমাকে নানা বিষয়ে খেয়াল রাখতে হচ্ছে।

ওদিকে সভায় আলোচনার বিষয়ে দলটির একাধিক নেতা বলেন, তারা তাদের মনের কষ্টের কথাগুলো তুলে ধরেছেন। উত্তরবঙ্গ থেকে আগত এক নেতা বলেন, জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতাকর্মীরা আছেন কে কে আসন পাবেন কে মন্ত্রী হবেন এসব নিয়ে। কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগের জোট হয়েও কোনো সুবিধাতো দূরের কথা, নিপীড়নের শিকার হচ্ছি। এমনকি জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য থাকার পরও আমাদের নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়। সব গ্রাস করে রেখেছে আওয়ামী লীগ।

একই সুরে কথা বলেন একই জেলার আরেক নেতা। তিনি বলেন, আমরা হয়তো দল হিসেবে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার মতো না। কিন্তু আওয়ামী লীগ আমাদের ব্যবহার করে সুবিধা নেয়, আবার ছুড়ে ফেলে। তিনি বলেন, এভাবে আমরা আর চলতে চাই না। প্রয়োজনে বিএনপি’র সঙ্গেও জোট বাধা যেতে পারে। 

রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির একজন নেতা বলেন, আমরা সারা জীবন জাতীয় পার্টির রাজনীতি করে আসছি। আমরা কখনো সহিংসতা চাই না। আমরা শান্তির পথে থাকতে চাই। আওয়ামী লীগকে আমরা ক্ষমতায় থাকতে সহযোগিতা করেছি। তারা আমাদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করে আসছে। তবে প্রত্যেক নেতাকর্মীই জিএম কাদেরের উপর আস্থা রাখেন। তাদের বিশ্বাস তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা দলের জন্য, সবার জন্য ভালো হবে।

বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের উপর ক্ষুব্ধ। তারা জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য মত দিয়েছেন।

প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, আসন্ন নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টির অবস্থান কী হবে, প্রান্তিক পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কী চান এগুলোই আমরা তুলে ধরেছি। আমরা মতামত দিয়েছি যে, এই অবস্থায় নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পার্টির বাইরে গিয়ে যখনই যে সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ নিয়েছে সেটাই হিতে বিপরীত হয়েছে। জাতীয় পার্টি এখন ঐক্যবদ্ধ আছে। পার্টি চেয়ারম্যানের উপর আমাদের আস্থা আছে। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা আমরা মাঠ পর্যায় থেকে বাস্তবায়ন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

সভায় দলের মহাসচিব বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বাস্তবতা হলো- কারও আশ্বাসে আমি আর বিশ্বাসী না। যদি এই পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে হয় তুমি ক্ষমতায় আর আমি ক্ষমতার বাইরে তা হবে না। বিশ্বাস করে আমরা অনেকবার ঠকেছি। আমরা কারও বিরুদ্ধে বলতে চাই না, দোষ যদি থাকে আমাদেরই দোষ। বিগত নির্বাচনগুলো থেকে শিক্ষা নিয়েছি।

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ

ওদিকে গত ১৪ নভেম্বর রাতে বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। রাত ৮টায় তিনি বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা অবস্থান করেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিশেষ দূত মাসরুর মাওলা সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এটি সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

শেয়ার করুন