০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৫:২৬:৩৩ পূর্বাহ্ন


২০২৪ : বিশ্বের সঙ্গে বদলে যাবে বাংলাদেশ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০১-২০২৪
২০২৪ : বিশ্বের সঙ্গে বদলে যাবে বাংলাদেশ


সবাই স্বীকার করবে বাংলাদেশে নানা ঘটনার মধ্যদিয়ে কেটেছে ২০২৩। ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দাভাব, মুদ্রাস্ফীতি, বিশ্ববাজারে জ্বালানিমূল্যের উঠানামা বাংলাদেশের মত উন্নয়াশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে গভীর অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি কিছু দুর্নীতিবাজ চক্র সিন্ডিকেট সৃষ্টি করে কৃত্তিমভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদীর অগ্নিমূল্য সৃষ্টি করে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করে। সমাজ জীবনে সুশাসনের অভাব এবং সরকারের অতিমাত্রায় আমলা নির্ভরতার কারণে জ্বালানি নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ায় উন্নয়ন ব্যাহত হয়। দেশের প্রাথমিক জ্বালানি সম্পদ আহরণ এবং ব্যবহার উপেক্ষা করে ক্রমাগত আমদানির দিতে ধাবিত হওয়ায় গভীর সংকট সৃষ্টি হয়। বিশেষত প্রমাণিত গ্যাস সম্পদ দ্রুত নিঃশেষ হতে থাকা, ডলার সংকটের কারণে কয়লা, তেল, এলএনজি আমদানিতে সংকট সৃষ্টি হওয়ায় ২৭০০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা নিয়েও ১২০০০-১৩০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হিমশিম খায় বিদ্যুৎ খাত। অর্থসংকটে প্রায় দেউলিয়া হয়ে পরে বিপিডিবি, পেট্রোবাংলা এবং বিপিসির মত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠাগুলোকে চাহিদা মাফিক গ্যাস বিদ্যুৎ সরবরাহ করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। 

এমনি অবস্থায় আসছে ৭ জানুয়ারি ২০২৪ অনুষ্ঠিত হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তাদের দাবি দাওয়া পূরণ না হওয়ায় নির্বাচন বয়কট করে এখনো রাজপথে স্তিমিত আন্দোলন করছে। কখন, কিভাবে আসবে তাদের আন্দোলনের সাফল্য। অনেকটা নিশ্চিত বর্তমান সরকারি দল আবারো। আবারও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করবে। বিশ্ব পরিস্থিতি এখন ভূরাজনীতির কারণে বিক্ষুব্ধ। ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। প্যালেস্টাইনের গাজা উপত্যকায় ইজরাইলী গণহত্যা চলছে। মধ্য প্রচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এমন অবস্থায় বিশ্ব ২০২৪ দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরে বিভক্ত। নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে পরিবর্তিত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

এটা ভাববার সুযোগ নেই যে কোনো প্রভাবশালী বিদেশী শক্তি বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে ক্ষমতায় আনবে। অর্থনৈতিক অবরোধ প্রয়োগ করবে। কিন্তু বর্তমান সরকারের অনেক ভুল নীতি এবং কৌশলকে সমর্থনও করার সুযোগ নেই। বিশেষত দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের ব্যর্থ জেহাদকে অর্থনৈতিক সংকটের অন্যতম কারণ। সুযোগসন্ধানী আমলা এবং একশ্রেণীর দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবসায়ীদের বর্তমান সংকটের জন্য দায়ী। তথাপি খাদ্য, যাতায়াত ব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অর্জনে সরকারের অর্জনও আমার দৃষ্টি এড়ায় না। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প আমদানি অব্যাহত রাখা ছাড়া বিশ্ব বড় বড় আমদানিকারকদের কোনো বিকল্প আছে। সুলভ মূল্যে মানসম্পন্ন তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন সুদৃঢ় অবস্থানে। বাণিজ্য, অর্থনীতি কিন্তু সবসময় রাজনীতি দিয়ে প্রভাবিত হয় না। বাংলাদেশ যদি রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোকে চাহিদা মাফিক বিদ্যুৎ গ্যাস সরবরাহ করতে পারে তাহলে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হবে। বিদেশী মুদ্রার সঞ্চয় বাড়বে। 

সরকার জ্বালানি বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের মত কারিগরি ঘন সেক্টরগুলোকে আমলা নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া উচিৎ। ২০২৪ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে আসলে এবং সবগুলো কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পূর্ণ ক্ষমতায় চালু থাকলে সংকট হবে না। তবে সরকারকে জ্বালানি কেনার বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি গ্যাস বিদ্যুতের অপচয়, চুরি বন্ধ করতে হবে, নিজস্ব জ্বালানি আহরণ এবং উন্নয়ন অনেক জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে সৌর বিদ্যুতের দ্রুত প্রসার ঘটানোর জন্য যথাপ্রযোজ্য প্রণোদনা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। এতদ বিষয়ে নতুন সরকার দুই বছরের ক্রাশ প্রোগ্রাম নিয়ে সংকটের সমাধান করবে। 

দেশের উন্নয়নকে রাজনীতির বাইরে রাখলে বর্তমান অবস্থা থেকে দেশ দ্রুত উন্নয়নের দিকে ধাবিত হবে। ২০২৪ এলিভেটেড এক্সপ্রেসের অবশিষ্ট কাজ শেষ হবে, গাজীপুর-বিমানবন্দর বাস রেপিড ট্রানজিট শেষ হবে, মেট্রোরেলের অবদান বৃদ্ধি পাবে। পদ্মা বহুমুখী সেতুর অবদান বৃদ্ধি পাবে। মংলা, পায়রা বন্দরগুলোর অবদান ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে অর্থনীতি স্বনির্ভর হবে। তবে সরকারের মূল চ্যালেঞ্জ হবে রাজনীতিকে দুর্বৃত্তায়ন থেকে মুক্ত রাখা, মেধাবী তরুণদের স্বাধীন মুক্তভাবে কাজ করার সুযোগ করে দেয়া।

শেয়ার করুন