২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৫:২৮:৪৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


সমঝোতায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের সম্ভাবনা
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-১২-২০২২
সমঝোতায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের সম্ভাবনা


বিশ্বজুড়ে কোভিড অতিমারীর মহাতাণ্ডব আর এরই সঙ্গে যোগ হওয়া পরাশক্তিদের ছায়াযুদ্ধের মাঝেও কিন্তু বাংলাদেশ হাজার চ্যালেঞ্জ নিয়েও টিকে আছে। উন্নয়নের মাইলফলক উপহার দিয়েও ঘরের শত্রু বিভীষণের কারণে লাভের গুড় পিঁপড়ায় খেয়েছে। বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রাম করেছেন ২২ বেনিয়া  পরিবারের বিরুদ্ধে। তারই মেয়ে শেখ হাসিনা সরকারের চ্যালেঞ্জ ২২শ কোটি বৈধ অবৈধ অর্থের মালিক তথা, শোষক পরিবারবর্গের বিরুদ্ধে। উন্নয়নের চোরাগলি পথে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে দেশের বাইরে। চোখ রাঙাচ্ছে গভীর অর্থনৈতিক সংকট দুর্ভিক্ষ। এরই মাঝে এগিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচন। এরই সঙ্গে বিশ্ব মোড়লদের যতোসব দাদাগিরি চলছে নির্বাচন ঘিরে। এমতাবস্থায় কোন পথে বাংলাদেশ? এ প্রশ্নটা এখন মুখে মুখে। 

জানি না কীভাবে উত্তরণ হবে, রাজনৈতিক সমঝোতা সৃষ্টি করে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন? তৃতীয়পক্ষ এসে কোনো বিশেষ দলকে ক্ষমতায় বসাবে সেই সম্ভাবনা একেবারেই তিরোহিত। নির্বাচনেই নির্ধারিত হবে সবকিছু। তবে সেই নির্বাচন বর্তমান সরকারের অধীনেই হবে কিনা সেটিই দেখার বিষয়। তবে যতোদূর মনে হচ্ছে, সমঝোতার ভিত্তিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে। দেশের চেয়ে বড় কিছু নেই। দেশ ১৬ কোটি মানুষের। সময় বয়ে যাচ্ছে। তবে রাজনৈতিক সমঝোতা সৃষ্টি না হলে মহাবিপদ। আমি দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবীদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, যুদ্ধংদেহী দু’পক্ষকে আলোচনার টেবিলে আনার চেষ্টা করার। না হলে দীর্ঘ সময়ব্যাপী অরাজকতা সৃষ্টি হবে।  

প্রবাসে অবস্থানের কারণে ডিসেম্বর মাসটা নাতি-নাতনিদের সাথে সেখানেই থাকতে হয় আর ২০১৯-২০২১ পর্যন্ত কোভিড অতিমারীর কারণে ঘরবন্দি। মুক্তিযুদ্ধ-ঘনিষ্ঠ মানুষ বিধায় ডিসেম্বর, ফেব্রুয়ারি, মার্চ আমার বাংলাদেশে কাটাতে ইচ্ছা হয়। দেশে আসলেই জ্বালানি, বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর সাথে, ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। মিডিয়াগুলো কথা বলতে চায়। এবার আবার বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জ্বালানি দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে কীভাবে কি করা যায়, জানতে চাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সবকিছু ছাড়িয়ে ২০২৪ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষ করে ঘনায়মান রাজনৈতিক অস্থিরতা আমাকে কিছুটা উদ্বিগ্ন করছে। 

ক্ষমতাসীন দল আর বিরোধীদল অরাজনৈতিক কারণগুলোকে মুখ্য না করে যদি সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে, তাহলে আসন্ন দুর্যোগ সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিবস্থা বজায় থাকবে। উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হলে কিন্তু বিশ্ব পরিস্থিতি বাংলাদেশকে দুর্যোগে ফেলবে। 

সরকারি দল নানা কারণে নিজেরাই কিন্তু নিজেদের বিতর্কিত করেছে। ১৪ বছর ক্রমাগত ক্ষমতায় থেকে দেশে অনেক মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। সমগ্র দেশবাসী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু দক্ষিণ বাংলার ১৯ জেলাকে সারা দেশের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করেছে। পায়রা, রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিকল্প সৃষ্টি করেছে। মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি জ্বালানি হাব অচিরেই চালু হবে। কিন্তু সমন্বয়ের অভাব, নিরঙ্কুশ আমলাতন্ত্র, অবাধ দুর্নীতির কারণে মেগা প্রকল্পগুলোর সুফল জনগণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে নি সেভাবে।  বরং আর্থিক খাতে ব্যাংকসমূহ হতে দুর্বৃত্তদের অর্থপাচার, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটসমূহের দৌরাত্ম্য সরকারি দলের প্রতি সাধারণ মানুষকে বীতশ্রদ্ধ করেছে। একইসঙ্গে বিরোধীদলসমূহের হঠকারিতা, বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। জনগণ দিশেহারা। এটাও ঠিক বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদল কোনোভাবেই সরকারি দলের বিকল্প হতে পারে না।  

বাংলাদেশের নাজুক পরিস্থিতির কারণে বিদেশি রাষ্ট্রসমূহ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং পাশের বাড়ির প্রতিবেশী সরাসরি নাক গোলানো শুরু করেছে। সরকারি দল আর বিরোধীদলসমূহ দু’পক্ষই জনগণের পরিবর্তে বিদেশি শক্তির দ্বারস্থ হচ্ছে। ভুলে যাচ্ছে রক্তের দামে কেনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা কারো দয়ার দান নয়। মুক্তিযুদ্ধের মিত্র ভারত, সোভিয়েট  ইউনিয়নের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমাদের ভূমিকাও আমরা ভুলিনি। আমাদের দেশ চলবে আমাদের ইচ্ছায়। কোনো দল বিদেশি শক্তির সহায়তা নিয়ে চিরদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। বাংলাদেশের জনগণ কালো-সাদার পার্থক্য বোঝে। কিছু মানুষকে কিছুদিনের জন্য বিভ্রান্ত করা যায়, কিন্তু সবাইকে সব সময়ের জন্য চোখে ধুলো দেয়া যায় না। বাংলাদেশের জনগণকে চিরদিন দাবিয়ে রাখা যাবে না। তরুণ প্রজন্ম প্রশ্ন করতে শুরু করেছে। জানার জন্য ক্ষুধা সৃষ্টি হয়েছে। 

আশা করি, রাজনৈতিক দলগুলো হঠকারিতা পরিহার করে জনতার দরবারে হাজির হবে নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে, নির্বাচন হবেই। নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন হবে।

শেয়ার করুন