৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ৬:৩১:৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার টার্মিনালের জীবনক্ষয়ী বিস্ফোরণ
বিশ্ববিবেক নাড়া দেয়া দুর্ঘটনা থেকে কী শিখছে বাংলাদেশ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৬-২০২২
বিশ্ববিবেক নাড়া দেয়া দুর্ঘটনা  থেকে কী শিখছে বাংলাদেশ


চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার টার্মিনালের জীবনক্ষয়ী বিস্ফোরণ, অগ্নিকান্ড কেন হয়েছে? কাদের অবহেলায় হয়েছে? কোনো অন্তর্ঘাত তৎপরতা আছে কি-না জানিনা কোনো তদন্তে কখনো সঠিক ভাবে উঠে আসবে কিনা? তবে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর, প্রধান শিল্পনগরীর অন্যতম সংবেদনশীল ঘন বসতি পূর্ণ এলাকায় রাসায়নিক পদার্থ থেকে অগ্নিৎপাত, বিস্ফোরণ জনিত কারণে অন্তত অর্ধশত করুণ মৃত্যু এবং কয়েক শত মানুষ আহত হবার মতো দুর্যোগ বিশ্ব পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুন্ন করেছে। 

সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মহা আনন্দ ম্লান করার জন্য সাবোটাজ কিনা খতিয়ে দেখা হবে। আরো একজন মন্ত্রী বলেছেন প্রতিটি দুর্ঘটনা থেকে আমরা শিখছি। এগুলো আসলেই কী দায়িত্বশীল কথা কি- না বিবেচনার ভার পাঠকের হাতে দিলাম। এই ঘটনায় মৃত্যু, আহত হওয়া এবং সম্পদহানির জন্য সরকারেরও দায়িত্ব কম না।

আসুন কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলি। কনটেইনার টার্মিনালটির কি ধরনের মালামাল গুদামজাত এবং হ্যান্ডলিংয়ের অনুমতি ছিল? কোন কর্তৃপক্ষ কিসের ভিত্তিতে অনুমোদন দিয়েছে? যদি হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের মতো রাসায়নিক দ্রব্য রাখার অনুমতি না দেয়া হয়ে থাকে, তাহলে কিভাবে এতো দিন এখানে এগুলো থাকতে পারলো? বাংলাদেশের বিল্ডিং কোড বা বিস্ফোরক আইনে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় রাসায়নিক দ্রব্যাদি গুদামজাত করার সংস্থান নেই। কি জবাব দেবে বিস্ফোরক অধিদপ্তর? 

অবস্থা দৃষ্টি প্রমাণিত দুর্ঘটনার পর আগুন নেভাতে আশা অগ্নিনির্বাপক দলের জানা ছিল না টার্মিনালে রাসায়নিক দ্রব্যাদি গুদামজাত আছে। থাকলে এতো মৃত্যু এতো সম্পদহানি হতো না। ১০ জন প্রশিক্ষিত ফায়ার সার্ভিস কর্মী হারাতো না বাংলাদেশ। ব্যাত্যয় আছে অনুমোদন প্রক্রিয়ায়, তদারকিতে। ব্যাত্যয় আছে বিভিন্ন সংখ্যা এবং গোয়েন্দা সংস্থার কাজে। যার শিকার হচ্ছে নিরীহ মানুষ। ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে দেশের। 

শুনেছি ১৬ টি বেসরকারি কোম্পানির ১৯ টি আইসিটি কন্টেইনার টার্মিনাল আছে যেখানে রপ্তানি পণ্য কনটেইনারে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হয়। এগুলোর অনুমোদন প্রক্রিয়া , অনুমোদনকারী সংস্থার দক্ষতা, যোগ্যতা, অনুমোদন অনুযায়ী পরিচালনার বিষয় তদারকির ব্যবস্থা পুংখানুপুঙ্খু অনুসন্ধান প্রয়োজন। রাসায়নিক দ্রব্যাদি গুদামজাত রাখার জন্য বিশেষায়িত টার্মিনাল ঘনবসতি পূর্ণ এলাকায় থাকার সুযোগ নেই।

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড পানির থেকে ভারী ঘন। এগুলোতে আগুন ধরলে সেই আগুন পানিতে নেভানো যায় না। বিএম টার্মিনালের রাসায়নিক দ্রব্যাদীর কথা জানা থাকলে নিঃসন্দেহে এই ধরনের দুর্যোগ এড়ানো যেত। এই ধরনের সংকট সামাল দেয়ার জন্য বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আদৌ প্রস্তুত না। রাসায়নিক দ্রব্যাদি জনিত বিস্ফোরণ বা অগ্নিকান্ড সামাল দেয়ার মতো পর্যাপ্ত এবং উপযুক্ত সরঞ্জাম নেই।

চট্টগ্রামে বার্ন ইউনিট বা বিশেষায়িত হাসপাতাল নেই। হয়তো দেখেছেন সাংবাদিকরাও অনেক অযাচিত ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ পরিবেশ করেছেন। এগুলো একটি উন্নয়নশীল দেশ হতে থাকা দাবিদার কোনো দেশের জন্য কোনোভাবে মানায়  না। 

বাংলাদেশে এই ধরণের দুর্ঘটনা নিয়মিত ঘটছে বা ঘটে যাচ্ছে। দুর্ঘটনার পর পর মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তারা অনেক কথা বলছেন। যতদিন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক এবং সোশ্যাল মিডিয়া সরব থাকে কিছু নড়াচড়া থাকে। রাজনীতি হয়। একপক্ষ অন্য পক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। একে পর সবকিছু বিজনেস আজ ইউজুয়াল। কি শিখেছে বাংলাদেশ নিমতলা ট্রাজেডি থেকে? পুরানো ঢাকা থেকে কি রাসায়নিক গুদাম অপসারিত হয়েছে? গ্যাসের দুর্ঘটনায় মসজিদে মুসুল্লিরা মৃত্যু বরন করলো নারায়ণগঞ্জে, খোদ মগবাজরে হলো গ্যাস দুর্ঘটনা। কি শিখেছে বাংলাদেশ? 

জানিনা সর্বশেষ ঘটনায় কোনো মহলের দুরভিসন্ধি আছে কিনা? নিদৃষ্ট ঘনত্বের হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড অবশ্যই এক্সপ্লোসিভ তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। এটি পূর্বে আইন প্রয়োগ কারি সংস্থার অনুসন্ধানে ধরা পর এ সন্ত্রাসীর কাছে এগুলো পাওয়া গেছে। তাই দেখতে হবে স্মার্ট গ্রুপ যারা এই রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করেন এবং টার্মিনালের মালিক তাদের ব্যবসার ধরন কি ছিল? কি ধরনের অনুমোদন ছিল? যদি অনুমোদন ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে থাকেন, তবে অবশ্যই তাদের অবিলম্বে আইনের আওয়ায় এনে দ্রুত বিচার করতে হবে। সেই সঙ্গে বিস্ফোরক অধিদপ্তর, পরিবেশ মন্ত্রণালয়, বন্দর কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সংসদ সদস্যের দায়  দায়িত্ব রয়েছে। 

রানা প্লাজার দুর্ঘটনার মতোই সীতাকুণ্ডের ঘটনা টিও বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে বিশ্বের সেরা প্রচারমাধ্যমগুলো। তুলনা করেছেন তারা- বিশ্বে ঘটে যাওয়া অতীতের বড় বড় দুর্ঘটনার সঙ্গে। বিশ্ববিবেক এ ঘটনায় মর্মাহত, ব্যাথিত। আগুন নেভানোর কাছে নিয়োজিত ১০জন ফায়ার ফাইটার প্রাণ দিয়েছেন-এ ঘটনা বিরল। এর চেয়েও বড় দুর্ঘটনা হলেও বাংলাদেশে (একসাথে ১০ জন ফায়ারফাইটার আগুন নেভাতে চেয়ে অসহায় প্রাণ দেয়া) এমনটা আর ঘটেনি। 

এটি বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। আমরা অবিলম্বে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে অনুসন্ধান করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে চট্টগ্রামসহ সকল শিল্প,বন্দর এলাকায় আধুনিক অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা ও  বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মান এখন সময়ের দাবি।


শেয়ার করুন