২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ৬:৫৮:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


নাগরিক সমাজকে বিরোধীদলের দায়িত্ব পালন করতে হবে : শাহরিয়ার কবির
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০১-২০২৪
নাগরিক সমাজকে বিরোধীদলের দায়িত্ব পালন করতে হবে : শাহরিয়ার কবির বক্তব্য রাখছেন শাহরিয়ার কবীর


একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পর্তুগাল শাখা গঠন উপলক্ষে সংগঠনের পোল্যান্ড শাখা গত ১৫ জানুয়ারি সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় ভার্চুয়াল এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় উপস্থিত ছিলেন নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি লেখক সাংবাদিক ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা শাহরিয়ার কবির, নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, সুইডেন থেকে নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য লেখক সাংবাদিক সাব্বির খান, সুইজারল্যান্ড থেকে নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট লেখক অমি রহমান পিয়াল। 

নির্মূল কমিটির পর্তুগাল শাখার সমন্বয়কারী সমাজকর্মী রনি হোসেনের সভাপতিত্বে ও সঞ্চলনায় উপস্থিত ছিলেন নির্মূল কমিটির পর্তুগাল শাখার সমন্বয়কারী সমাজকর্মী মাহামুদুল হাসান ও সমাজকর্মী বাদল আহমেদ। এছাড়াও নির্মূল কমিটি পর্তুগাল শাখায় যুক্ত থাকতে ইচ্ছুক অনেক নেতাকর্মী সভায় যুক্ত ছিলেন। 

নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছেন। এখন আমাদের দাবি- গণহত্যাকারী সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আমাদের দাবির কারণে ৪ নভেম্বরকে সরকারিভাবে ‘সংবিধান দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। এটা আমাদের একটা সাফল্য। এখন আমাদের সামনে যে চ্যালেঞ্জ সেটি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করা। এটি সফল করবেন আপনারা যারা নতুন প্রজন্মের তরুণরা রয়েছেন।’ 

বাংলাদেশের সদ্য সম্পন্ন সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে এতে কোনও সন্দেহ নেই। জামায়াত আর তারেক রহমানের পাল্লায় পড়ে বিএনপি নির্বাচনে না এসে আত্মহননের পথ গ্রহণ করেছে। তবে এ কথা ভুলে গেলে চলবে না- দ্বাদশ পার্লামেন্টে কার্যত কোনও বিরোধী দল থাকছে না। এটা শুধু সরকারের জন্য নয়, গণতন্ত্রের জন্যেও চ্যালেঞ্জ। পার্লামেন্টে যেহেতু বিরোধী দল থাকছে না- পার্লামেন্টের বাইরে গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজকে কঠোরভাবে বিরোধীদলের দায়িত্ব পালন করতে হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সার্বভৌম মর্যাদা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্নে আমাদের আপোষহীন হতে হবে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য আপনারা যারা প্রবাসী রয়েছেন তাদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা থাকা প্রয়োজন।’ 

নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, ‘পর্তুগালে আমরা নির্মূল কমিটির শাখা গঠনের কার্যক্রম শুরু করেছি। পর্তুগালে অনেক বাংলাদেশী রয়েছেন। ২০২২ সালের ৮ ও ৯ ডিসেম্বর ব্রাসেলসে বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং মিয়ানমার, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানসহ বিশ্বে চলমান গণহত্যাসমূহ প্রতিরোধ এবং মিয়ানমারে গণহত্যার শিকার বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দাবিতে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র সর্বইউরোপীয় শাখার উদ্যোগে মানববন্ধন ও আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আমরা বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। বিশ্বে যারা গণহত্যা প্রতিরোধে সক্রিয়ভাবে যুক্ত, তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করছেন। গত ২১ নভেম্বর (২০২৩) বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপী জনমত গঠনের ক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণের জন্য পোল্যান্ডের ‘নেভার এগেইন অ্যাসোসিয়েশন’-এর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছি।’ 

নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য লেখক সাংবাদিক সাব্বির খান বলেন, ‘বর্তমানে যারা নির্মূল কমিটির বয়োজ্যেষ্ঠ রয়েছেন তারা একসময় ছিলেন তরুণ, যখন জাহানারা ইমাম আন্দোলনটা শুরু করেছিলেন। এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। নির্মূল কমিটিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার তরুণদেরকে ব্যাপকভাবে যুক্ত করতে হবে। পর্তুগালে নতুন কমিটি গঠন করার আগে সকলে একসাথে বসব। একসাথে বসলে যত ধরনের বিভ্রান্তি আছে সেসব দূর হয়ে যাবে। ’ 

নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট লেখক অমি রহমান পিয়াল বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য- মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অভিযাত্রা পর্তুগাল থেকে শুরু করে সারা ইউরোপে ছড়িয়ে দেওয়া এবং তরুণ সদস্য যুক্ত করা। আমরা পর্তুগাল থেকে কাজটি শুরু করতে পেরেছি। পর্তুগালে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত তরুণদেরকে খুঁজে পেয়েছি। তাদেরকে দিয়ে আমরা পর্তুগালে বাংলাদেশের এবং নির্মূল কমিটির পতাকা টানাব।’ 

নির্মূল কমিটি পর্তুগাল শাখার সমন্বয়কারী সমাজকর্মী রনি আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের নির্মূল কমিটি সম্পর্কে আগ্রহ অনেক বেশি। আমরা একত্রিত হয়ে পর্তুগালে শাখা গঠন করতে পারি।’ 

নির্মূল কমিটি পর্তুগাল শাখার সমন্বয়কারী সমাজকর্মী বাদল আহমেদ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। প্রবাসে আসার পর আমাদের দেশপ্রেমটা সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারি। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদেরকে প্রতিহত করার জন্য আমরা একসাথে লড়ে যাব।’ 

অনুষ্ঠানের সভাপতি নির্মূল কমিটির পর্তুগাল শাখার সমন্বয়কারী সমাজকর্মী রনি হোসেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধর্মনিরপেক্ষ মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তোলার আন্দোলন বেগবান করার আহ্বান জানান। 

সভাশেষে সর্বসম্মতিক্রমে সমাজকর্মী ইকবাল হোসাইনকে সভাপতি এবং সমাজকর্মী খাইরুল কবির সরকার শিমুলকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি পর্তুগাল শাখা কমিটি গঠন করা হয়। 

পর্তুগাল শাখা কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ হলেন- সহসভাপতি: আকরাম আজীম, দ্বীন ইসলাম রাজন, মোহাম্মদ শাহীন, মানিক হোসাইন, মোঃ নাজমুল ইসলাম, মোশ্তাকিম রহমান আমীন, সিদ্দিকী রহমান আকাশ, জামিল রশিদ চৌধুরী ও মোঃ ইকবাল হোসেন রয়েল। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক: ইব্রাহীম খলিল শিপন, শাহাদাত হোসাইন ও মোঃ তারিকুল আজিজ। সহ-সম্পাদক: রুহুল আলম, জাদেব আহম্মেদ। সাংগঠনিক সম্পাদক: মোদাম্মদ শাফি, রুবেল কাজী ও কামরুল হাসান শুভ। প্রচার সম্পাদক: বীন ইয়ামিন ও ইব্রাহিম খলিল। দফতর সম্পাদক: মুকুল উদ্দিন ও মাহরাজুল ইসলাম বিজয়। কোষাধ্যক্ষ: মোঃ হাবীবুর রহমান। তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক: অজিত চৌধুরী শান। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক: জাকির হোসেন। আইন বিষয়ক সম্পাদক: জিয়াউর রহমান। নির্বাহী সদস্য: আরিফ হোসেন মৌসুম, রঞ্জন আহম্মেদ, রিজভি খান ও রাকিবুল ইসলাম।

শেয়ার করুন