২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৪:১৪:৫৮ পূর্বাহ্ন


কর্মসূচিতে পুলিশি বাধা
জনগণ দ্বাদশ জাতীয় সংসদকে ঘৃণা জানাচ্ছে : বিএনপি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০১-২০২৪
জনগণ দ্বাদশ জাতীয় সংসদকে ঘৃণা জানাচ্ছে : বিএনপি বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশি বাধা


‘কালো পতাকা নিয়ে সারাদেশের জনগণ দ্বাদশ জাতীয় সংসদকে ঘৃণা জানাচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। গত ৩০ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকালে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে এক মানবন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ডামি নির্বাচনের সংসদ বসছে বিকাল তিনটায়। সকাল থেকে সারা দেশে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কেউ লাল পতাকা, কেউ কালো পতাকা নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় হাঁটা-জনগণ কি উদযাপন করছে এই সংসদ? অর্থাৎ তিরস্কার দিচ্ছে, ঘৃণা জানাচ্ছে, ক্ষোভ প্রকাশ করছে। কিন্তু যাদের লাজ-লজ্জা-ভয় নেই- তাদের দ্বারাই এরকম সংসদে বসা যায়।” 

বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘লড়াই আমাদের চলমান, লড়াই আমাদের থেমে নেই। অর্থাৎ বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে লড়াইয়ের কৌশল পরিবর্তন হয়। আজকে (৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনের দিন) অনেকের দাবি ছিলো, অনেকের প্রস্তাব ছিলো আমরা যেন হরতাল দেই, বিএনপি আজকে সেই হরতালটি ঘোষণা করেনি। বিএনপি যেভাবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিগত দিন চলছে, সেই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে, গণতান্ত্রিক রীতিনীতির মধ্যেই বিএনপি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন করে যাচ্ছে এবং করে যাবে। আমরা রেকর্ড করতে পারিনি এক সরকারের মেয়াদে ১৭৩ দিন হরতাল দেয়ার, আমরা রেকর্ড করতে পারিনি গানপাউডার দিয়ে শেরাটনের সামনে বাসে মানুষ মরা, আমরা এখনো দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারিনি, চলমান পথিককে বিবস্ত্র করা, আমরা এখনো পারিনি লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ মেরে তার উপরে নাচ-গান করা। এইরকম সংস্কৃতি কাদের মনে যারা গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে না। এরকম সংস্কৃতি কাদের মনে যারা জোর করে ভোট ছাড়া ক্ষমতায় থাকে।” বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোরে ঐক্য সুদৃঢ় করেই সরকারের পতন ঘটানো হবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। 

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বেগম খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তি এবং ‘ডামি’ সংসদ বাতিলের দাবিতে এই মানববন্ধন হয়। সরকারের লুটপাট-দুর্নীতির কঠোর সমালোচনা করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘‘লুটপাট করতে হলে একটা সরকারের পক্ষে একা সম্ভব হয় না। তার সাথে পার্টনার লাগে, যেটা সরকার ও সরকারের সহযোগীরা এক হয়েছে, সরকার ও দুর্নীতিবাজরা আজকে একাকার হয়ে গেছে। সেজন্য বাংলাদেশের কোষাগার শূণ্য। উন্নয়নের এতো স্বাদ কেনো- কারণ উন্নয়নের অপর নাম দুর্নীতি, লুটপাট। এই লুটপাটের মধ্য দিয়ে সেই টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। কোনো কর্মসংস্থানে ব্যবস্থা নেই, দিনের পর দিন বেকার এতো বাড়ছে, দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে আমরা যে স্ট্রাগল অব ইউনিটি করে ৭ জানুয়ারি ভোট বর্জনে সফল হয়েছি। এখন আমাদের ইউনিটি অব স্ট্রাগল অর্থাৎ এই জাতীয় ইউনিটি নিয়ে আগামী দিন আমাদের লড়াই করতে হবে, সরকারের পতন ঘটাতে হবে।” 

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরীর সঞ্চালনায় ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের রুহুল আমিন গাজী, জিয়া পরিষদের অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, ইউনির্ভাসিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের ওবায়দুল কবির খান, এগ্ররিচালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের শফিকুর রহমান শফিক, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের শহীদুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের মাহবুবুল আলম শামীম, নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের জাহানারা সিদ্দিকী, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশসের সাখাওয়াত হোসেন, ডিপ্লোমা এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের জিয়াউর হায়দার পলাশ, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম, এমট্যাবের হাফিজুর রহমান প্রমুখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।

বিএনপির অভিযোগ 

দ্বাদশ সংসদ বাতিলের দাবিতে রাজধানীর সাতটি স্পটে ‘কালো পতাকা মিছিল’ করতে দেয়নি পুলিশ। উত্তরার ১২ সেক্টার থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানকে পুলিশ গাড়িতে করে উত্তরা থানায় নেওয়ার পরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আজিমপুর, পীরজঙ্গি মাজারসহ বিভিন্ন স্পট থেকে ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। 

পীরজঙ্গি মাজারে কালো পতাক মিছিলের কর্মসূচিতে এসে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বচন্দ্র রায় বলেন, ‘‘মিছিল-মিটিং-শোভাযাত্রা এটা একটা গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার। আমরা যথারীতি নিয়ম মেনে পুলিশ কমিশনার বরাবর চিঠি দিয়েছি, অবহিত করেছি, আমরা সারা ঢাকায় নয়, ৭টি স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে কালো পতাকার এই কর্মসূচি করব। কিন্তু পুলিশ আমাদেরকে সবখানে বাধা দিয়েছে। আমরা পুলিশের এহেন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। উত্তরা থেকে আমাদের দলের নেতা আবদুল মঈন খানকে পুলিশ আটক নিয়ে গেছে। সার্বিক পরিস্থিতি অবলোকন করার পরে আমরা এটাই বুঝতেছি যে, অযথা আমার কর্মীদের দাঁড়াতে দেয়া হচ্ছে না, অযথা বাধা দেয়া হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে, আমাদেরকে কর্মসূচি করতে দিচ্ছে না পুলিশ।” 

রাজধানীতে বিএনপির কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি ছিলো সাতটি স্পটে। এগুলো হলো উত্তরা ১২ নং সেক্টার, মিরপুর ১২ নং, বাড্ডা লিংক রোড, পীরজঙ্গি মাজার সড়ক মোড়, নিউ মার্কেট, দয়াগঞ্জ ও যাত্রাবাড়ি। 

ডামি নির্বাচনের অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় তত্ত্বাবায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচন, খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে ৩০ জানুয়ারি মঙ্গলবার দ্বাদশ সংসদ অধিবেশনের দিন ঢাকাসহ সারাদেশে এই কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচির ডাক দেয় বিএনপি এবং সমমনা জোটগুলো। 

বেলা ২টায় উত্তরার ১২ সেক্টার কবরাস্থানের কাছে কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচিতে আসেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। গাড়ি থেকে নামার পরপরই পুলিশ তাকে ঘিরে ফেলে এবং কোনো কর্মসূচি করতে দেবে না বলে জানিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশ তাকে গাড়ি উঠে নিয়ে যায়। 

বেলা ২টা ২০ মিনিটে মতিঝিলের পীরজঙ্গি মাজার সড়কের মোড়ে আসেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি গাড়ি থেকে নেমেই গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের মুখে পড়েন। 

গয়েশ্বর অভিযোগ করে বলেন, ‘‘পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করতে দিচ্ছে না, বাধা দিচ্ছে, আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করছে। আজকে আমাদের নেতা-কর্মীরা এখানে এসেছে। তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তারা পুলিশের সংঘর্ষ সৃষ্টি করার কর্মসূচি আমাদের উদ্দেশ্য না। তিনি বলেন, এই সংসদ বৈধ সংসদ নয়। জনগণের অংশগ্রহণবিহীন এই সংসদ। তাদের আত্মতৃপ্তি তারা সরকার গঠন করেছে। কিন্তু আমাদের চলমান একদফার আন্দোলন এটা চলমান থাকবে, আমরা আমাদের আন্দোলন গণতান্ত্রিকভাবে ও শান্তিপূর্ণ পথে অব্যাহত রাখবো। পরে গয়েশ্বর গাড়িতে করে চলে যান। কালো পতাকা মিছিল উপলক্ষে পীরজঙ্গি মাজারে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

শেয়ার করুন