২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৪:৩০:৩০ পূর্বাহ্ন


প্রভাব চোখে পড়ছে না
হ্যালো ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা’
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-১২-২০২৩
হ্যালো ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা’


বাংলাদেশের জন্য স্পেশাল ভিসানীতি প্রয়োগ যুক্তরাষ্ট্রর জন্যই নয়, গোটা বিশ্বে বিরল ঘটনা। এ ধরনের ভিসা নিষেধাজ্ঞা অন্য কোনো দেশের বেলায় দেওয়া হয়নি যা মার্কিনিরাই জানিয়েছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞা তারা অন্য দেশের বেলায়ও দিয়ে আসছে, সেটা কোনো ঘটনার পরিপেক্ষিতে। কিন্তু বাংলাদেশের বেলায় যা ঘটেছে সেটা অনেক আগাম। বা সতর্কতামূলক। নজিরবিহীন-এগুলো এখন পুরোনো বাক্য। 

কিন্তু সে পরিপেক্ষিতে ওই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বাংলাদেশের ইমেজ লজ্জার মধ্যে ফেলে দেওয়া, সেটাতে কতটুকু কাজ হবে বা হচ্ছে সেটা এখন আলোচিত হচ্ছে। বিষয়টা নিয়ে কৌতুকও করা হচ্ছে ব্যাপক। অবশ্য এর কবলে যারা পড়বে তাদের অনেক সমস্যা। কিন্তু এ পর্যন্ত এমন কারোর নামই শোনা যায়নি, বা প্রকাশিত হয়নি যারা এর দ্বারা আক্রান্ত। 

অবশ্য ভিসা নিষেধাজ্ঞা একটা সম্পূর্ণ সিক্রেট ঘটনা। কার ওপর এটা আরোপিত হলে সে এটা মুখেও আনবে না। কিন্তু বাংলাদেশে যে কারণে, যে উদ্দেশ্য, যে কাজের (অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য,অংশগ্রহণমূলক) আগাম সতর্কতার জন্য ওই ভিসানীতি-সে কাজে এর ছিটেফোঁটাও প্রভাব পড়ছে বলে মনে হচ্ছে না। 

বিশেষ করে বিরোধী মত দমনকারী, তাকে সহায়তাকারীর যে বিষয়টা উল্লেখ রয়েছে তা ২৮ অক্টোবরের বিএনপির মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে হয়েছে। কিন্তু ভিসানীতি কারোর ওপর প্রভাব পড়ছে বলে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এরপরও বিরোধী মতের ওপর দমননীতি অব্যাহত। যেমনটা বিএনপির দাবি, তাদের অন্তত ২০ হাজার নেতাকর্মী ওই ঘটনার পর থেকে গ্রেফতার হয়েছেন। 

বিষয়টা যে শুধু সরকার দলের জন্য প্রযোজ্য সেটাও নয়। বিরোধীদলের ওপরও প্রযোজ্য। কিন্তু অবরোধ, হরতালের মত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি ও তাদের মিত্র। এতে দেশের অর্থনীতির উপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। জীবনযাত্রার মান ব্যাহত হচ্ছে। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না, আতঙ্কে। স্বাভাবিক কাজকর্ম প্রতিনিয়ত রিশিডিউল হচ্ছে। এটা দেশের অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। কিন্তু এ ব্যাপারেও ভিসানীতির কোনো প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে না। 

গতানুগতিক ধারায় আওয়ামী লীগ 

একটা সমঝোতার উদ্যোগের কথা বলা হয়েছিল, খোদ মার্কিন প্রশাসনের থেকে (সর্বশেষ ডোনাল্ড লু’র চিঠি)। সেটাও উড়িয়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে সর্বত্র অমন একটা সমঝোতার মাধ্যমে দেশে বিরাজমান অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানোরও আহ্বান ছিল। সেটাও উপেক্ষিত। ফলে যে প্রক্রিয়া ২০১৪ সনের নির্বাচনটা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। ঠিক একই প্রক্রিয়ায় এগিয়ে চলছে ১০ বছর পরের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। বিরোধীদল বিশেষ করে বিএনপি যে দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছে, তাদের দাবির প্রতি ন্যূনতম সম্মানবোধ দেখানো হয়নি। এমনকি নির্বাচন সামনে রেখে গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে দলটির শীর্ষনেতাদের পাইকারি হারে গ্রেফতার করে এবং অবশিষ্ট যারা তাদের ভেতরে একটা গ্রেফতার আতঙ্ক তৈরি করে অনেকটা পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকতে বাধ্য করে মূলত ক্ষমতাসীন বিএনপি যাতে নির্বাচনে না-ই অংশ নিতে পারে সে পথই হেটেছে, যা অনেকটাই ২০১৪-এর আদলে। 

দেশ ভবিষ্যতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হবে, এগুলো এলে একটা প্রোপাগান্ডা হিসেবেই এখন সাধারণ মানুষ দেখতে শুরু করেছে। কারণ ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা হলেও আন্তর্জাতিক বিশ্ব যখন সে নির্বাচনগুলো মেনে নিয়েছে। প্রশ্নও তোলেনি তেমন, বরং সমর্থন ছিল। তাহলে এবার দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ওই দুইবারের চেয়ে আরো সচ্ছতা ও অংশগ্রহণমূলক করতেই ক্ষমতাসীন দল আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা তো ওই সব মহলের জন্য আশাব্যঞ্জক বটে। বারবার তারা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে এবার নির্বাচন হবে স্বচ্ছ। আসলেই সেটা হবে এটা এখন সাধারণ মানুষের সরল বিশ্বাস। কেননা বিএনপিসহ বিশাল একটা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে পাশ কাটিয়ে যে নির্বাচন, সেটাকে শুধু স্বচ্ছতা কেন, ক্রিস্টাল ক্লিয়ার করা দুরূহ কোনো বিষয় নয়। কঠিন প্রতিপক্ষই যেখানে নেই, সেখানে অস্বচ্ছতার আবরণ দিতে আসবেই বা কীসের জন্য? আওয়ামী লীগসহ নির্বাচনে অংশ নেওয়া দল ও নির্বাচনে পরিচালনাকারীদের আত্মবিশ্বাস সুন্দর একটা নির্বাচন উপহার দিয়ে বিশ্ববাসীর ব্যাপক সমার্থন তারা আদায়ে সমর্থন হবে, যা তারা প্রত্যাশা করেই আসছে। 

কী করছে বিএনপি

বিএনপি দেশে অন্যতম বৃহত্তর রাজনৈতিক দল। কিন্তু এ দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ২৮ অক্টোবর থেকে তালাবদ্ধ। দলের এমন কেউ নেই, যে ওই অফিস খুলে বসে স্বাভাবিক কাজকর্ম পরিচালনা করবে। গ্রেফতার এড়িয়ে যারা রয়েছেন, তাদের কেউ কেউ অফিস খোলার ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেন বটে, কিন্তু যদি আটক করা হয়, সে ভয়ে তটস্থ। বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মী এ ঘটনায় বিরক্ত। মনোবলে আঘাত পাচ্ছে। 

বিএনপির নেতৃত্ব এখন একটা রীতিতে চলছে, যা হলো যদি কেউ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন গ্রেফতার, অসুস্থ বা অন্য যে কোনো কারণে। তাহলে তার পরবর্তীজন দায়িত্ব কাঁধে তুলবে। কিন্তু এ নিয়মই যদি চলতে থাকে, তাহলে কেন্দ্রীয় কার্যালয় খোলার কোনো নেতা কেন খুঁজে পাচ্ছে না তারা। তবে হতে পারে এটা কোনো টেকনিক। আন্তর্জাতিক বিশ্বকে দেখিয়ে দেওয়া যে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়টাও অবরুদ্ধ। তালা খুলতে দেওয়া হচ্ছে না। আসলে এ ধরনের পলিসি কোনো কাজে আসে না শেষ পর্যন্ত। যেমনটা কাজে আসেনি ২০১৩-’১৪ সালের অব্যাহত অবরোধ। যে অবরোধের পরিসমাপ্তি কখনোই দেয়নি বিএনপি। আওয়ামী লীগের নেতারা যা এখনো উল্লেখ করেন তাদের বক্তব্যে। 

দেশের বিষয়ের সিদ্ধান্ত দেশের জনগণকেই নিতে হবে। বিএনপি নির্বাচন না করলে সমস্যা নেই সেটা বিএনপির নেতারাও বলছেন। যে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, সেটাতে অংশ নেওয়ার যুক্তি নেই। তাই বলে এক জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের বৃহত্তর একটা রাজনৈতিক দলের অপমৃত্যু ঘটবে না, এটাই স্বাভাবিক। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের কার্যক্রম যেভাবে পারবে চালাবে-এটাও এক ধরনের রাজনীতির সক্ষমতা। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে এমন মানসিক শক্তির প্রভাব দেখানোও শক্ত ভীতের উপর দলটি তার প্রমাণ মেলে। এটা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে আওয়ামী লীগের ব্যাপক উন্নতিই পরিলক্ষিত হচ্ছে। 

তাছাড়া দেশ ও আন্তর্জাতিক বিশ্বে তাদের সাপোর্ট আছে বিধায়, অনেক শক্তিধর দেশের নির্দেশনা, প্রত্যাশা পাশ কাটিয়ে নিজের প্ল্যান মোতাবেক কাজগুলো করতে পারছে। যেদিন ওই সাপোর্ট শূন্য হবে, সেদিন তারাও পারবে না। কিন্তু যেদিন ব্যর্থ হবেন তারা, বিএনপি সেদিন তো নতুন করে নবোদ্যমে রাজনীতি শুরু করবে না? তাছাড়া বিএনপির নেতৃবৃন্দ এমন কন্ট্রাক্টও পায়নি যে, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দায়িত্বটা শুধু তারাই পালন করবে। যেহেতু এর সুফল সবাই ভোগ করবেন, তাহলে একটি সত্যিকারের গণতন্ত্রের আন্দোলনে দলমত নির্বিশেষে বিশেষ করে ক্ষমতার হালুয়া-রুটি বঞ্চিত বা ভাগ নিতে পছন্দ করেন না সবাইকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামা উচিত যে যার অবস্থান থেকে। কিন্তু সে পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। 

বিএনপির স্বাভাবিকভাবেই চেয়ে রয়েছে বহির্বিশ্বের শক্তির দিকনির্দেশনার দিকে। কিন্তু সেটাও যে কতটা ওই দলটির জন্য সহায়ক সেটাও ভেবে দেখা উচিত। কারণ বহির্বিশ্বের সব দেশ তাদের নিজস্ব কিছু স্বার্থ প্রত্যাশা নিয়েই অন্য দেশের ভালোমন্দ দেখতে আসছে, পূর্বেও এসেছে। ফলে সে প্রত্যাশা, চাওয়া যে নিঃস্বার্থ সেটা ভাবার সুযোগ নেই। যার কুফল হতে পারে কোনো না কোনো সময় দেশের আপামর মানুষের জন্য ক্ষতিকারক। বিশেষ করে এ মুহূর্তে বিভিন্নস্তর থেকে আভাস দেওয়া হচ্ছে, একটা বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার। এটার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে বলে মনে হয় না। কিন্তু অমন নিষেধাজ্ঞা যদি দেওয়াই হয় সেটাতে ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতায় থাকা অসহ্য যন্ত্রণা হয়ে যাবে হয়তো, কিন্তু ওটাতে চিড়েচ্যাপ্টা হবে সাধারণ জনগণ। যে জনগণের ন্যায্য দাবি, ভোটের অধিকারের জন্য এতোকিছু, তারাই যদি পদদলিত হয়, কর্মশূন্য হতে হয়, না খেয়ে মরতে হয়, তাহলে তেমন গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার কে চাইতে যাবে। 

সর্বশেষ

সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যদি কারোর ইচ্ছা হয়, সেটা কোনো না কোনোদিন প্রতিষ্ঠা হবেই। যুগ যুগ এমনটাই হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য, স্বাধীনতা, একটি মুক্ত দেশের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধে বহু মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। তারা আর ফিরবেন না। এখন বাংলাদেশের মানুষ যে স্বাধীনতা ভোগ করছে-সেটাও তারা উপভোগ করছে না। সুফলও পাচ্ছে না। কারণ তারা মৃত। এটা তারাও জানতেন। জেনেশুনেই দেশের জন্য লড়াই করে প্রাণ বিলিয়ে দিতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। এটাই রীতি। ফলে এখন হয়তো সত্যিকারের গণতন্ত্রের জন্য কিছু মানুষ জানমাল প্রাণ দেবে। একদিন সত্যিকারের গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাও পাবে। কিন্তু অনেকেই এটার সুফল ভোগ করবে না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বর্তমান ধারাতে বিভিন্ন কায়দায় দেশের মানুষকে অতিষ্ঠ করে, দেশের সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ছন্দপতন ঘটিয়ে কিছু হওয়া, এটা দেশের স্বার্থ বিরোধী বলেই এখন মানুষ ভাবতে শুরু করেছে বৈকি!

শেয়ার করুন