০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৫:১৭:১১ অপরাহ্ন


পশ্চিমাদের চাপে কঠোর থাকতে পারছে না আ.লীগ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০২-২০২৪
পশ্চিমাদের চাপে কঠোর থাকতে পারছে না আ.লীগ


পশ্চিমাদের কঠোর চাপ থাকায় মাঠের প্রধান বিরোধী দলসহ সমমনাদের দাবি দাওয়া আদায়ের আন্দোলন ঠৈকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে সরকার হার্ড লাইনে যেতে পারছে না। অপরদিকে আন্দোলন প্রশ্নে পশ্চিমারা ক্ষমতাসীনদের আগের মতোই চাপে রাখা হবে এমন আশ্বাসও পেয়েছে বিএনপি’র হাইকমান্ড। এসবব কারণে খুব সহসাই আবারো আগের মতো সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি মাঠ কাঁপাতে নামছে। এমনটাই আভাস মিলেছে মাঠের রাজনৈতিক সূত্র থেকে পাওয়া খবরে। 


বাইডেনের চিঠি

রাজনীতিতে এখন একটি খবর দাবড়িয়ে বেরাচ্ছে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক নমনীয়। এপ্রসঙ্গে তারা দোহাই দিচ্ছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সম্প্রতি একটি চিঠি। মাত্র কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাতে তিনি বাংলাদেশের উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে সমর্থনের পাশাপাশি একটি অবাধ ও মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অভিন্ন স্বপ্ন পূরণে অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠায় ঢাকার সঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। বলা হয় যে, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ৪ জানুয়ারি রোববার সকালে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের কাছে এই চিঠি হস্তান্তর করেছেন। 


এমন ঘটনায় আওয়ামী লীগের উৎফুল্ল ভাব

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চিঠি প্রসঙ্গে আওয়ামী চড়া সুরে কথা বলেছেন। দেখানো হচ্ছে ফুরফুরে ভাব। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে ছেড়ে চলে গেছে দাবি করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সরকারের সঙ্গে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার জানানোর পর বিএনপি এখন কী করবে? তাদের এখন কী বলার আছে? ক্ষমতায় বসানোর জন্য কে আসবে? ক্ষমতা থেকে হটানো বা ক্ষমতায় আসার সহায়তা কে করবে?


অন্যদিকে বিএনপি যা বলেছে

গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিএনপির বিবৃতির মাধ্যমে দেখা যাক বিএনপি’র পক্ষ থেকে কি বলা হচ্ছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশের ‘অবৈধ, ডামি’ নির্বাচনকে বৈধতা দেয়নি। আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট কয়েকদিন আগেও ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে যে জালিয়াতি হয়েছে তা স্পষ্টভাবে বলেছে। গণতন্ত্রের প্রশ্নে তারা কোনো ছাড় দিয়েছে বলে আমার জানা নেই।


পাল্টা ঘটনা..অদৃশ্য থেকে গেলো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিঠির ব্যাখ্যা যে যার মতো করে করে যাচ্ছে। লাগানো হচ্ছে নানান ধরনের রং চং। কিন্তু যেদিন এই চিঠি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশ পেয়েছে ঠিক একই দিন আরেকটি খবর প্রকাশিত হয় খুবই নিভৃতে। সেটি ছিল ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে পরিবেশ মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। এই বৈঠক শেষে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। একই দিনে খবরে দেখা যায় বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়নি বলে আবারও মন্তব্য করলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। যদিও বলা হয় যে বাংলাদেশের সঙ্গে জলবায়ুসহ কিছু বিষয় যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করতে চায় বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিঠির খবর যেদিন ফলাও করে প্রচার পায় সেদিনই এটি প্রকাশিত হয়। যা অনেকের কাছে খুবই ইঙ্গিতপূর্ণ ঠেকেছে। আবার কেউ কেউ বলছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন কী প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন? অন্যান্য রাষ্ট্র প্রধানরা যেভাবে অভিনন্দন জানিয়েছেন। নির্বাচনের পরে স্টেট ডিপার্টমেন্টের যে বিবৃতি ছিলো, তাতে বলা হয়েছে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়নি। শেষ অংশে বলা হয়েছে কোয়ার্ড এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে কাজ করতে চায় আমেরিকা। মূলত বিবৃতির শেষ অংশের প্রতিফলন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চিঠিতে।


পশ্চিমাদের ব্যাপারে বিএনপি’র এতো আস্থার নেপথ্যে...

রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেকের মধ্যে এখনো প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে বিএনপি কিসের আসায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের ব্যাপারে এতো আস্থাশীল হয়ে উঠেছিল এবং সেট্ এখনো কি করে বিদ্যমান? রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন প্রশ্ন সর্বত্র ঘুরপাক থাচ্ছে। আর এমনই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিঠির পর এটি আরো জোড়ালো হয়ে উঠেছে। আসলেই কি বিএনপিসহ সমমনাদের নেতৃত্বে ভোটাধিকার রক্ষার আন্দোলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের সহানুভুতির পাশাপাশি কঠোর নজরদারি ছিল? যদিও তা থেকে থাকে তাহলে নির্বাচনের অল্প কিছু মাস আগে ভারতের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টু-প্লাস বৈঠকের পরই কেনো তা বিচ্যুত হলো? গত বছরের নভেম্বরে দিল্লীতে হয়ে গেলো ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের ‘টু-প্লাস-টু’ বৈঠক। বৈঠক শেষে খবরে দেখা যায় যে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে। ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের ‘টু-পাস-টু’ বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের বিদেশ সচিব ভিনয় কোয়াত্রা। তবে খবর বের হয় যে, নিজেদের অবস্থান “খুবই স্পষ্ট করে” যুক্তরাষ্ট্রের সামনে তুলে ধরার বিষয়টিকে বিশ্লেষকরা ব্যাখ্যা করছেন যে আমেরিকা যাতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বেশি চাপ না দেয়, সেই বার্তাই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়েছে ভারত। আর ধারণা করা হয় যে, এমন বার্তার পরই দেখা যায় বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনটি নির্বিগ্নে করে ফেলে সরকার। এরপর ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও কেমন জানি নিরব হয়ে যান। আগে যেমন বেশ ঘটা করে বিএনপিসহ সমমনাদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে বৈঠকের খবর আসতো তা একপ্রকার স্থিমিত হয়ে যায়। 



কিন্তু নির্বাচনের পর চমকে দেয় পশ্চিমারা

বাংলাদেশ ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যখন আওয়ামী নেতারা যখন বেশ উচ্চস্বরে কথা বলে যাচ্ছিল ঠিক সে মুহূর্তেই প্রায় একযোগে বিবৃতি ছুড়ে মারে পশ্চিমারা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য উভয়ে বিবৃতি দেয় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। বাংলাদেশে সাতই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ’অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মানদন্ড’ মেনে অনুষ্ঠিত হয়নি বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য। খবরে দেখা যায়, বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার প্রায় দুইদিন পর পশ্চিমা পরাশক্তির দেশ দুটি এ নিয়ে পৃথক বিবৃতি দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ৮ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টেমন্ট তাদের এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়। অবাক ব্যাপার একই দিনে যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও)ও পৃথক বিবৃতি দেয়। বাংলাদেশের এই নির্বাচন সুষ্ঠ ও অবাধ হয়নি বলে অন্য পর্যবেক্ষকদের প্রতিক্রিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্র একমত বলে জানানো হয় বিবৃতিতে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ”গণতান্ত্রিক নির্বাচন নির্ভর করে বিশ্বাসযোগ্য, মুক্ত ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার ওপর। মানবাধিকার, আইনের শাসন ও যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অপরিহার্য উপাদান। নির্বাচনের সময় এসব মানদন্ড ধারাবাহিকভাবে মেনে চলা হয়নি।


এর পাশাপাশি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার টার্ক এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের গ্রেফতার এবং আটকাবস্থায় মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন। তিনি প্রকৃত ’অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রে’র জন্য সরকারকে ’গতিপথ পরিবর্তন করার’ আহবান জানিয়েছেন। নির্বাচনের আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমের কয়েকটি দেশ বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক এবং অবাধ নির্বাচন করার জন্য তাগিদ দিয়ে আসছিলো। এর পরেও আরো অনেকভাবে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের ফলাফলকে পশ্চিমারা মেনে নিয়েছে বলে আওয়ামী লীগ প্রচার করতে থাকে।


একপর্যায়ে সে প্রসঙ্গেও পশ্চিমাদের মনোভাব প্রকাশ পায় বিভিন্ন ধরনের বিবৃতিতে। সম্প্রতি শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে জাতিসংঘের দেওয়া চিঠির বিষয়ে এক ব্রিফিয়য়ে জানতে চেয়েছিল একজন সাংবাদিক। জাতিসংঘের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মহাসচিবের এমন চিঠি নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘের পূর্বের অবস্থান এবং নির্বাচন নিয়ে মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার যে বিবৃতি দিয়েছেন তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা জানতে চাওয়া হয়? জবাবে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, এটি সাংঘর্ষিক না। জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন যেমনটা বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান বা রাষ্ট্রপ্রানরা পুনঃনিবাচিত হলে মহাসচিব পাঠিয়ে থাকেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রও একিই মনোভাব জানিয়েছে।


সর্বশেষ বিবৃতি আরো কঠোর

খবরে দেখা যোয় গত ৫ জানুয়ারি সোমবার সোমবার ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশে সাম্প্রতিক (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ) নির্বাচন জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায়নি বলে উদ্বেগ রয়েছে। যারা নির্বাচনকে ক্ষুণ্ণ করেছে মার্কিন ভিসা নীতির অধীনে তাদের বিরুদ্ধে ভিসা বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারি? মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপপ্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ভিসা নীতির ক্ষেত্রে জানানোর মতো কোনো আপডেট আমার কাছে নেই। তবে আমি যা বুঝি তা হলো, নির্বাচন শেষ হলেই এই নীতির সমাপ্তি হয় না। বলা হয় এই ভিসানীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। ভিসানীতির বিষয়টি এমন নয় যে, নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে আর তাই সূর্য ডুবে গেছে।



শেষ কথা..

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশেষ করে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পরে পশ্চিমাদের উদ্বেগ উৎকন্ঠার পাশাপাশি এটা তাদের ভূরাজনৈতিক বিষয়। তাই খুব সহজেই এশিয়ার কোনো বৃহৎ দেশ বা শক্তি বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ২০২৪ সালে পশ্চিমাদের বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যকে পাশ কাটিয়ে এককভাবে নাক গলিয়ে কিছু করতে পারে এমনটা কেউ মনে করে না। অনেকে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে পাকিস্তান ইস্যুতে ব্যস্ত আছে। সম্প্রতি মিয়ানমার ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেশ কঠোর ও কৌশলি অবস্থানে আছে। কারো কারো অভিমত মিয়ানমারের এই মারাত্মক অভ্যন্তরীণ সংঘাত কয়েক মাস ধরে চলতে পারে। জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরাকান আর্মিও ভালো করছে। একথা সবার জানা মিয়ানমারে প্রতিবেশী চীন, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের নানা ধরনের প্রভাব এবং স্বার্থ রয়েছে।


কিন্তু পশ্চিমাদের সহযোগিতা আর প্রভাবেই জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিয়োজিতরা হালে পানি পাচ্ছে। পশ্চিমারা অস্ত্রসহ নানা ধরনের সাপোর্ট দিচ্ছে বিদ্রোহীদের। অন্যদিকে বেগতিক অবস্থা বুঝে চীন একইসঙ্গে মিয়ানমার জান্তা এবং বিদ্রোহীদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রেখে চলেছে। ফলে এমন সময়ে বাংলাদেশ হয়তবা পশ্চিমাদের কাছে একটু দূরে চলে গেছে। একারণে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ভোটাধিকারের আন্দোলন বা মানবাধিকার প্রশ্নে পশ্চিমরা সহসা সক্রিয় উঠছে না। তবে বিশ্লেষকরা মনে করে পশ্চিমাদের নজর যে আছে তা মাঝে মাঝে বিভিন্ন ধরনের বিবৃতিতে প্রকাশ পাচ্ছে। একিই দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিঠি আর এর বিপরীতে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে পরিবেশ মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রসঙ্গে ’না’ বলাটিও বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ। আবার ৫ জানুয়ারি সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপপ্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল যে বলেছেন ভিসানীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি বা ভিসানীতির বিষয়টি এমন নয় যে, নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে আর তাই সূর্য ডুবে গেছে- এগুলো সবই ইঙ্গিত পূর্ণ।


রাজনৈতিক সূত্রগুলো এসব বিষয় উল্লেখ করে জানিয়েছে, ঢাকার মাঠে বিএনপিসহ সমমনাদের আন্দোলন করতে না দিলে পশ্চিমারা হয়তো আরো কঠোর হবে। চলে আসবে সভা সমাবেশে বাধার দায়ে আমেরিকা খড়গ, যা সরকারের জন্য এসময়ে মারাত্মক বিষয়। জানা গেছে সরকার উপরে কিছু না বললেও পশ্চিমাদের বহুমুখি চাপেই আছেই। একারণে সরকার এখন বিএনপি’কে মাঠে বাধা দিতে ইতস্তত করছে। ৩০ জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ যে শান্তি মিছিল কর্মসূচি বাতিল করেছে সে-টি তারই অংশ বলে মনে করেন অনেকে। অর্থাৎ ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পরে পশ্চিমারা এখন সরকারের গতিবিধি নজরে রাখছে। এসব বুঝেই বিএনপি’র সাথে আন্দোলনরত অন্যতম শরিক নাগরিক বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, এখন সরকার হাওয়ায় ভাসছে।


জনগণ নেই, ফাউন্ডেশন নেই। যেকোনো সময় ধসে পড়বে। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমেই এ সরকারের পতন হবে। অন্যদিকে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, সরকার পতনে আবারও ঢাকার রাস্তায় ‘জনতার মিছিল’ হবে বলে । তিনি বলেন, এই সংসদ কাজ করতে পারবে না। হতাশা ওদের মধ্যে, আমাদের নয়।

শেয়ার করুন