২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৩:৬:৩৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


দুটি কবিতার বই ও বড় কবিদের মান নিয়ে দুয়েকটি মন্তব্য
কাজী জহিরুল ইসলাম
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৪-২০২২
দুটি কবিতার বই ও বড় কবিদের মান নিয়ে দুয়েকটি মন্তব্য


এনআরবি স্কলারস পাবলিশার্সের সিইও চৌধুরী শামীম আমাকে দুটি বই উপহার দেন। একটি ‘শামসুর রাহমানের প্রিয় কবিতা’, অন্যটি আবদুল গাফফার চৌধুরীর ‘সময়ের ঘড়ি’। গাফফার চৌধুরীর এটিই প্রথম এবং একমাত্র কবিতার বই। তার কবিতাগুলো পড়তে গিয়ে বেশ কষ্ট এবং এবং বিরক্তি লেগেছে। কবি হিসেবে তার ততো খ্যাতি না থাকলেও একুশে ফেব্রæয়ারির গানের কারণে এবং আরো কিছু কবিতা বিভিন্ন সময়ে লেখার কারণে সাধারণে এই ধারণাও দৃঢ়ভাবে প্রোথিত যে, তিনি খুব বড়মাপের একজন কবি।

সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি এই দুটি বই গভীর অভিনিবেশের সঙ্গে বেশ ক’বার পাঠ করলাম। গাফফার চৌধুরীর কবিতাগুলোর মধ্যে সবদিক থেকে শুদ্ধ, মানোত্তীর্ণ কবিতা প্রায় নেই বললেই চলে। ‘একুশের গান’ কবিতার যে তিনটি লাইন আমরা গেয়ে থাকি সেই তিন লাইন ছাড়া কবিতার বাকি লাইনগুলো খুব দুর্বল ও অশুদ্ধ। তিনি এটি গানের ফর্মেই লিখেছেন। প্রতি স্তবকে ব্রিজ লাইন আছে। এই সময়ের দুর্বল গীতিকারদের মতো তার এই গান বা কবিতায় তিনি যেন/বুনো, চেনা/ঘৃণা, ডাকে/বাঁকে এ জাতীয় দুর্বল (এখন আমরা এগুলোকে বরং অশুদ্ধই বলি) অন্তমিল ব্যবহার করেছেন। এসব খুঁটিনাটি বিষয় দিয়েই একজন কবির মেধার ধারটা বোঝা যায়।

শামসুর রাহমানের বইটিতে বেশকিছু ভালো কবিতা আছে। তার বড় গুণ ছিল তিনি শুদ্ধ পয়ার রচনা করতে পারতেন। যে কবিতাগুলো অরবৃত্তে লিখেছেন, তা তিনি জীবনানন্দের মতো শুদ্ধ পর্বেই লিখেছেন। প্রয়োজনে দুর্বল শব্দ ব্যবহার করেছেন, কিন্তু দুর্বল বা ভুল পর্বে লেখেননি।

তবে তিনি যেসব প্রতিবাদী কবিতা লিখেছেন, তার ভাষা এতো নরম, পড়লে শান্তিনিকেতনের ‘ছেলেদের’ গল্প মনে পড়ে যায়। ওই যে একটা গল্প আছে না, পথে গরু দাঁড়িয়ে থাকলে গরুর দিকে গোলাপ ছুড়ে বলে, এই গরু যাহ, সেই রকম শামসুর রাহমানের দ্রোহের ভাষা।

স্বরবৃত্ত ছন্দে তিনি লিখেছেন, ‘ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা’ কবিতাটি। এই কবিতায় বলছেন, ‘শিউলি ফোটা সকাল নেবো।/ ঘাতক তুমি বাধ সেধো না, এবার আমি/ গোলাপ নেবো।’ এই ভাষায় ঘাতকের সাথে কথা বললে ঘাতক শুনবে? সেদিন এক আলোচনায় কবি আতাহার খানকে বলছিলাম, আমাদের বড় কবিদের কবিতা যতো পড়ছি, ততোই হতাশ হচ্ছি। যাদেরকে অনেক বড় বলে মানি, ভক্তি করি, তারা আসলে ততোটা বড় নন। অসাধারণ বাংলা কবিতার খোঁজে প্রতিনিয়ত চষে বেড়াচ্ছি বাংলা কবিতার অঙ্গন, কিন্তু হতাশই হচ্ছি বেশি।

দেখবেন, হাজার হাজার, ল ল কবিতা লেখা হচ্ছে, কিন্তু কোনো একটা বিষয়ের জন্য ভালো কবিতা খুঁজতে যান, তেমন কিছুই খুঁজে পাবেন না। ভালো কবিতার বড় অভাব। 

যে বই দুটির কথা শুরুতে বললাম, এগুলির মুদ্রণ মান অতি উঁচুমাপের। এই স্ট্যান্ডার্ডের বাংলা বই আমি খুব কমই দেখেছি। আজকাল সবাই প্রোডাকশন ভালো করে, তবে স্কলার্সের এই বই দুটোর মুদ্রণ মান ভালোদের মধ্যে সেরা। 

হলিসউড, নিউইয়র্ক 

শেয়ার করুন