২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৩:৩১:৬ পূর্বাহ্ন


হৃদয়ের ভালোবাসায় মোড়া ছিল বাংলাদেশ কনভেনশন
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৯-২০২২
হৃদয়ের ভালোবাসায় মোড়া ছিল বাংলাদেশ কনভেনশন বাংলাদেশ কনভেনশন উদ্বোধন করছেন আবু জাফর মাহমুদ


হৃদয়ের ভালোবাসায় মোড়া ছিল চতুর্থ বাংলাদেশ কনভেশন। তিনদিনব্যাপী বাংলাদেশ কনভেনশনের আয়োজক সংগঠন ছিল বাংলাদেশ কনভেনশন অব নর্থ আমেরিকা। লগোয়ার্ডিয়া মেরিয়ট হোটেলের বলরুমে এই কনভেনশনের আয়োজন করা হয়। কনভেনশনে ছিল আলোচনা সভা, সেমিনার, কাব্য জলসা, ট্যালেন্ট শো, ফ্যাশন শো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং অ্যাওয়ার্ড বিতরণ। বাংলাদেশ কনভেনশন শুরু হয় ২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল বাংলাদেশ। উঠে এসেছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম এবং বর্তমান অবস্থা। এই সম্মেলনের উদ্বোধন করে বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলা সিডিপ্যাপের চেয়ারম্যান আবু জাফর মাহমুদ। তিনি ফিতা কেটে এই কনভেনশনের উদ্বোধন করেন। এই সময় উপস্থিত ছিলেন কনভেনশনের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. চৌধুরী সারওয়ারুল হাসান, সদস্য সচিব আলমগীর খান আলম, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, একুশে পদকপ্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী রথীন্দ্র নাথ রায়, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী শহীদ হাসান, বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর নূরুল আজিম, লায়ন্স ক্লাবের সভাপতি আহসান হাবিব, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত সভাপতি বদরুল হোসেন খান, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুন নাহার খান মিতা, বাংলাদেশ সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, লায়ন্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হাসান জিলানী, কো-কনভেনর হেলাল মিয়া, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ এ খালেক, রিদওয়ান হক, লেখক ইশতিয়াক রূপু, আব্দুর রশিদ বাবু, শিবলি সাদেক, খায়রুল ইসলাম খোকন, কাজল মাহমুদ, মোর্শেদ আলম প্রমুখ।

আবু জাফর মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ কনভেনশনের সাথে বাংলাদেশের নাম যুক্ত আছে। যেখানে বাংলাদেশের নাম সেখানে আমি আছি। বাংলাদেশ কনভেনশন তারাই আয়োজন করেছেন যারা বাংলাদেশকে ভালোবাসেন, হৃদয়ে লালন করেন। তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। এই দেশকে রক্ষা করবা এবং এই দেশের উন্নয়নে কাজ করা আমাদের দায়িত্ব। সেই সাথে দেশের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোও আমাদের ইমানি দায়িত্ব। তিনি বলেন, আমরা চাই আমাদের প্রিয় জন্মভূমি ভালো থাকুন এবং বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকুক। তবে বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নিতে হলে সমাজের ভালো মানুষদের এগিয়ে আসা উচিত এবং নতুন প্রজন্মকে আরো সম্পৃক্ত করা উচিত।

ডা. চৌধুরী সারওয়ারুল হাসান বলেন, বাংলাদেশ কনভেনশন আমাদের প্রিয় জন্মভ‚মি বাংলাদেশকে ঘিরেই। যে কারণে আমাদের এবারের স্লোগান প্রবাসে শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হোক আমাদের নতুন কিছু করার প্রত্যয়। তিনি তিনদিনব্যাপী কনভেনশন সফল করার আহ্বান জানান। সেই সাথে সমাপনী বক্তব্যে তিনি কনভেনশন সফল করার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আগামী সম্মেলনের আমন্ত্রণ জানান।

রথীন্দ্র নাথ বলেন, আমরা যা কিছু করি না কেন আমাদের সবার মাথায় রাখতে হবে দেশ। আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই দেশ পেয়েছি। আমরা যে লক্ষ্যে দেশ স্বাধীন করেছি, সেই লক্ষ্য পূরণে আমাদের কাজ করতে হবে।

শহীদ হাসান বাংলাদেশ কনভেনশনের সাফল্য কামনা করে বলেন, বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ, বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য এবং সংস্কৃতিকে লালন করা এবং উপস্থাপন করা অনেক বড় কাজ। এই কাজ যারা করছেন, তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি।

আলমগীর খান আলম বলেন, আজকে আমার কাছে খুবই ভালো লাগছে এই কারণে যে চতুর্থ বাংলাদেশ কনভেনশন চারজন শ্রেষ্ঠ সন্তান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রয়েছেন। তারা আমাদের সাথে রয়েছেন। তিনি আরো বলেন, এই কনভেনশন সফল করতে যারা সাহায্য সহযাগিতা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

নূরুল আজিম বাংলাদেশ কনভেনশনের সফলতা কামনা করেন।

বদরুন নাহার খান মিতা বাংলাদেশ কনভেশনে নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণ আরো বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বাংলাদেশ কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন বহ্নিশিখা সংগীত নিকেতনের ছাত্রছাত্রীরা। যার নেতৃত্বে ছিলেন শিল্পী সবিতা দাস। আরো সংগীত পরিবেশন করেন রথীন্দ্র নাথ রায়, শহীদ হাসান। প্রথম দিনে আরো ছিল সাংবাদিক শামীম আহমেদের উপস্থাপনায় স্বাস্থ্যবিষয়ক সেমিনার। 


সাহিত্যে সোনিয়া কাদের ও সমাজসেবায় সম্মাননা পেলেন মুক্তিযাদ্ধা আবু জাফর আহমদ


বাংলাদেশ কনভেনশনের দ্বিতীয় দিন শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচিত্র  প্রদর্শনীর মাধ্যমে। পরের পর্ব ছিল নিউইয়র্কের সাহিত্য অঙ্গনের বিশিষ্ট কবিদের পরিবেশনায় কাব্য জলসা। কবি  ইশতিয়াক রূপুর সঞ্চালনায় স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন কবি রওশন হাসান, কবি এ বি এম সালেহ উদ্দিন, কবি সৈয়দ মামুনুর রশীদ, কবি শাহিন দিলওয়ার, লেখক সোনিয়া কাদির, কামরুজ্জামান বাচ্চু  ও সাহিত্য নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন মুক্তিযাদ্ধা ড. মহসীন আলী। উপস্থাপক কামরুজ্জামান বাবু পরিবেশনায় শামসুর রহমানের স্বাধীনতা কবিতা আবৃত্তির দিয়ে সমাপ্ত হয় কাব্য জলসা অনুষ্ঠান। নৃত্য পরিবেশন করে বাংলাদেশ থেকে আগত নৃত্যশিল্পী নওরিন। সংগীত পরিবেশন করেন, কামরুল ইসলাম, বিনা কামিজ দিফতী, প্রমি তাজ, রায়ান তাজ, শামীম সিদ্দিকী, ত্রিনিয়া হাসান,  চন্দন চৌধুরীসহ বিশিষ্ট লোকগীতিশিল্পী কালা মিয়া ও সর্বশেষে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে ঘণ্টাব্যাপী জনপ্রিয় আধুনিক গান পরিবেশন করেন শিল্পী সামিনা চৌধুরী। এর পূর্বে অনুষ্ঠানে আগত বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা বাংলাদেশ কনভেনশন-২০২২ এর সফলতা কামনা করে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। যাদের মধ্যে ছিলেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, সমাজসেবক এবং বাংলা সিডিপ্যাপ ও আলগেরা হোম কেয়ারের চেয়ারম্যান আবু জাফর মাহমুদ। বাংলাদেশ কনভেনশন-২০২২ এর দ্বিতীয় দিনের মূল আকর্ষণ ছিল সম্মাননা প্রদান পর্ব। 

তিনদিনের এই কনভেনশন নিউইয়র্কের সাহিত্য, সমাজসেবাসহ বিভিন্ন স্তরে অসামান্য অবদান রাখার জন্য মোট ৪টি সম্মাননা প্রদানের দ্বিতীয় দিনে দেয়া হলো দুটো। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিভাগের সম্মাননা পেলেন বিশিষ্ট লেখিকা সোনিয়া কাদের। যিনি আমেরিকায় অভিবাসী বসতের শত বছরের ইতিহাস তথা, আমাদের শিকড় নিয়ে তথ্যসমৃদ্ধ বই রচনা করেছেন খুবই আন্তরিকতা নিয়ে। বাংলাদেশ টু আমেরিকা বই রচনায় অক্লান্ত পরিশ্রম ও ভালোবাসা প্রদর্শনের জন্য লেখিকাকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্প্রতি মহাপ্রলয় ও সর্বনাশা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বানভাসিদের পাশে প্রথম দাঁড়ানো প্রবাসী ও দানবীর বীর মুক্তিযাদ্ধা আবু জাফর আহমদকে সমাজসেবায় সম্মাননা প্রদান করা হয়। 


তৃতীয় দিন

বাংলাদেশ সম্মেলনের ৩য় দিনের শুরুতে প্রদর্শিত হয় প্রামাণ্য চিত্র। এরপর মঞ্চে আসেন স্যোসাল মিডিয়ায় বিপুল জনপ্রিয়তা পাওয়া মিষ্টিভাষী প্রিসিলা। ষাট লক্ষ  ফলোয়ার নিয়ে স্যোসাল মিডিয়ায় ব্যস্ত প্রিসিলা আমেরিকায় বসবাসকারী বাংলাদেশী তরুণ এবং তরুণীদের জীবনে আরো সফল হওয়ার পথে আরো উদ্যোমী ও পরিশ্রম করার পরামর্শ দেন। প্রশ্নত্তোর পর্বে নিউইয়র্কের বিশিষ্ট জনের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন সাবলীল ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে। এর পর শুরু দলীয় নৃত্যানুষ্ঠান পর্ব। পরিচালনায় ছিলো প্রিয়া ড্যান্স একাডেমীর নৃত্য শিল্পীরা। মনোরম ও দর্শক নন্দিত নৃত্য পরিবেশন করে দর্শকদের প্রশংসা কুড়ান।

সঙ্গীত আয়োজনের প্রথম পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শশী, তুলি, লেমন চৌধুরী ও কৃষ্ণা তিথি। সম্মাননা পর্ব প্রদান পর্বে সম্মেলনের ৩য় দিনে প্রথমে নর্থ আমেরিকাসহ দেশের লক্ষ লক্ষ মেধাবী শিক্ষার্থীদের সুযোগ করে দিতে এবং গত দশ বছর যাবত হাজার হাজার হতাশ শিক্ষিত অভিবাসীদের আইটি প্রশিক্ষণ দিয়ে বাৎসরিক লক্ষ ডলার আয়ের সুযোগ দানকারী ভার্জিনিয়াস্থ গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান আবু বকর হানিপকে সম্মাননা দেয়া হয়। পাশাপাশি নিউইয়র্কের অন্যতম সমাজ সংগঠক বাংলাদেশ সোসাইটির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান সেলিমকে সমাজ সেবায় অবদান রাখার জন্য সম্মান প্রদান করা হয়। দুটো সম্মাননা তুলে দেন বাংলাদেশ সম্মেলনের আহ্বায়ক ডাঃ চৌধুরী সারওয়ারুল হাসান। সঙ্গীত আয়োজনের ২য় পর্বে মঞ্চে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফেরদৌস আরা। পরে যথাক্রমে সঙ্গীত পরিবেশন করেন নিউইয়র্কের জনপ্রিয় শিল্পী শাহ মাহবুব এবং রিজিয়া পারভীন। সব শেষে সম্মেলনের সফল সদস্য সচিব আলমগীর খান আলম তিনদিনের এই আয়োজনে সকল পৃষ্ঠপোষক সহকমিটির সকল সদস্য ও মিডিয়ার সকল কর্মীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

শেয়ার করুন