২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ৬:১১:৫৪ পূর্বাহ্ন


মূল্য নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট ভাঙাতে
‘উৎপাদক ও ক্রেতা’ সমবায় গড়ে তোলার আহ্বান সিপিবি’র
নিজস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৯-২০২৩
‘উৎপাদক ও ক্রেতা’ সমবায় গড়ে তোলার আহ্বান   সিপিবি’র



২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর

দেশব্যাপী বিক্ষোভ

ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম জোরদার করা এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট ভাঙা, উৎপাদক ও ক্রেতা সমবায় গড়ে তোলা, সারাদেশে রেশন ব্যবস্থা চালুসহ বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। আজ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, পুরানা পল্টনস্থ পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে সকাল ১১.৩০টায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. এম. এম আকাশ। সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বক্তব্য রাখেন ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এ সময় সিপিবি’র সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমান, সম্পাদক অ্যাড. আনোয়ার হোসেন রেজা, কোষাধ্যক্ষ ডা. ফজলুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ।


সরকারের নীতিই এই সংকট তৈরি করেছে। এর অবসানে চলমান দুঃশাসন হটানোর সাথে সাথে ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম অগ্রসর করতে হবে। লিখিত বক্তব্যে বলা হয় বাজারে গেলে মানুষ এখন আর হাসিমুখে ঘরে ফিরতে পারেন না। প্রতি মুহূর্তে তিনি টের পাচ্ছেন যে তার টাকার দাম কমে গেছে। যে হারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে সে হারে আয় বৃদ্ধি পায়নি। ফলে বাজেট থেকে প্রথমে শখের পণ্য, পরে প্রয়োজনীয় পণ্য ছেঁটে ফেলে কায়Ñক্লেশে জীবন ধারণ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে প্রায় ৪ কোটি লোক প্রয়োজনীয় ক্যালরির খাবার পাচ্ছেন না। সংবাদ সম্মেলনে শ্রীলংকার উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, অসহনীয় পরিস্থিতিতেও দেখা গেল অসৎ আমলা, অসৎ ব্যবসায়ী ও অসৎ রাজনীতিবিদরা জোট বেঁধে দুর্নীতি করছেন, বাজেটে ঘাটতি ব্যয় মেটানোর জন্য টাকা ছাপাচ্ছেন,  মিথ্যা বাগাড়ম্বর করছেনÑ তখন সেখানে গণঅভ্যূত্থান সৃষ্টি হয়েছিল।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আমাদের কৃষি উৎপাদনে, পোশাক শিল্পে, রেমিট্যান্স ও ফরেন ইনভেস্টমেন্টে এই মুহূর্তে কোনো উল্লেখযোগ্য উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে না।


আর সেটার জন্য গণতন্ত্র, সুশাসন ও মৌলিক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনাটা জরুরি। এসব না করে প্রচলিত ব্যবস্থা বহল রেখে মুক্তবাজারের নামে সবকিছু বাজারের উপরে ছেড়ে দিয়ে, সিন্ডিকেট তোষণ করে, ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে হম্বি-তম্বি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে আরও বলা হয়, বিশেষ করে বাংলাদেশ এখন দাঁড়িয়ে আছে এক রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে। অর্থাৎ অসৎ ব্যবসায়ী, অসৎ আমলা এবং অসৎ রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে যে ক্ষমতা কাঠামো গঠন করে শাসক শ্রেণি সমাজে তার শক্তি বিস্তার করে রয়েছে এবং তারই কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, অস্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার শূন্যতা বজায় রেখে নিজের বৈভব গড়ে তুলেছে-তারা খুব সহজে তাদের সুবিধাগুলি ছেড়ে দিবেন না। এদের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন-গণ সংগ্রাম গড়ে তোলা ছাড়া মুক্তি পাওয়া যাবে না। সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ মানুষের যুক্তিসঙ্গত আয় নিশ্চিত করার জন্য সংগঠিত-অসংগঠিত শ্রমিক, ক্ষেতমজুরদের জন্য যুক্তিসঙ্গত জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ ও তার প্রদান নিশ্চিত করা এবং মজুরি কমিশনের মাধ্যমে মজুরির হার নির্ধারণ করাসহ তিন প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে-সিন্ডিকেট ভাঙা, রেশন ব্যবস্থা ও ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু, উৎপাদক ও ক্রেতা সমবায় চালুসহ ১৩টি প্রস্তাব দেওয়া হয়।


এসব প্রস্তাবে রয়েছে বিএডিসির কার্যক্রমকে ব্যাপকভাবে প্রসারিত করে সারাদেশে সার, বীজ, কীটনাশক, বিদ্যুৎ সেচ যন্ত্রপাতিসহ কৃষি উপকরণ ন্যায্যমূল্যে এবং সময়মতো খোদ কৃষকের কাছে সরাসরি সরবরাহের ব্যবস্থা করাÑ যাতে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় কমে আসে; উৎপাদিত ফসলের লাভজনক মূল্য নিশ্চিত করা; পণ্য পরিবহনে দুর্নীতি, হয়রানি ও চাঁদাবাজি, হাটবাজারে ইজারাদারি ব্যবস্থা ও তোলা আদায়ের অত্যাচার বন্ধ; দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্তভাবে টিসিবির কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে অত্যাবশ্যক পণ্যসামগ্রীর আমদানি, মজুত ও সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখা; রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে খাদ্যদ্রব্যসহ অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যসামগ্রীর বাফার স্টক গড়ে তোলা, পাইকারি ও খোলাবাজারে পণ্যমূল্য তদারকির জন্য ‘মূল্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ প্রতিষ্ঠা করা।
আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আপৎকালীন দ্রুততার সঙ্গে ‘ঝটিকা কার্যক্রম’ পরিচালনার প্রস্তুতি রাখা, পৃথক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মাধ্যমে গ্রাম-শহরসহ সারাদেশে সাশ্রয়ী, দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত ‘গণবণ্টন ব্যবস্থা’ চালু করারও দাবি জানানো হয়।


সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের উত্তরে সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, সিন্ডিকেটের দখল থেকে বাজারকে মুক্ত না করে আইওয়াশ করে, দু-একটি জিনিসের দাম বেঁধে দিয়ে তামাশা করে মানুষের সংকট দূর করা যাবে না। তিনি দেশের সর্বত্র দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। রুহিন হোসেন প্রিন্স জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকারের আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কার্যকর গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা ছাড়া উন্নয়নের বুলি মানুষ প্রত্যাখ্যান করবে।

সংবাদ সম্মেলনে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, সিন্ডিকেট ভাঙা, সারাদেশে রেশন ব্যবস্থা, ন্যায্য মূল্যের দোকান চালুসহ উৎপাদক ও ক্রেতা সমবায় গড়ে তোলার দাবিতে আগামী ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।




শেয়ার করুন