০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৮:৩৮:৪৭ অপরাহ্ন


প্রসঙ্গ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষ
জলে কুমির ডাঙায় বাঘ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৫-২০২২
জলে কুমির ডাঙায় বাঘ


২০২৩ সালের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম। একটি স্রোত সরকারের উন্নয়নের দোহাই দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক অর্জন নিয়ে বিরোধীশক্তিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে। আবার নির্বাচনে বিএনপিসহ সকল নিবন্ধিত দলকে নির্বাচনে আনার কথা বলছে। ২০১৪, ২০১৮ সালের বিগত দুই জাতীয় নির্বাচনের তিক্ত অভিজ্ঞতা স্মরণে রেখে, কোন আশ্বাসে, কোন বিশ্বাসে, সকল দল নির্বাচনে আসবে? আমলা-নির্ভর নির্বাচন কমিশন কি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে? এ মুহূর্তে এ প্রশ্নটাই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। 

আরেকটি স্রোত নানাভাবে সরকারের চরিত্র হনন করছে। তথাকথিত নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না- বলে গো ধরে বসে আছে। বাংলাদেশে এমন কোনো নিরপেক্ষ মানুষ, কোনো নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান আছে কি? অথচ বিরোধীদল জনঘনিষ্ঠ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাজপথে সরকারের বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলন জমাতে পারছেনা?

আমি দেশপ্রেমিক বাংলাদেশিদের কাছে প্রশ্ন করি, উন্নয়নের জোয়ারে ভাসা দেশের রাজধানী ঢাকায় কেন নিত্য যানজট,শব্দদূষণ, সামান্য বৃষ্টিতে প্রচণ্ডরকম জলজট,বায়ুদূষণ? কেন রেলের একজন টিকেট কালেক্টর রাষ্ট্রের দেয়া দায়িত্বটা সঠিকভাবে সাহসী হয়ে কাজ করে বরখাস্ত হয়? কেন দুর্নীতি দমন সংস্থার সাহসী কর্মকর্তাকে আমলাদের দুর্নীতির তদন্ত করে, চাকরি হারাতে হয়? 

কেন আন্দোলন করে তেঁতুলতলা সাধারণ ছেলেমেয়েদের ও প্রতিদিনকার বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান করা মাঠরক্ষা করতে হয়? কীভাবে ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে ঢাকা নিউমার্কেটে সরকারিদলের অঙ্গসংগঠনের ক্যাডার নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা করার সাহস পেলো? কেন সরকারের মন্ত্রীকে বলতে হয়, ব্যবসায়ীরা কথা রাখেনি? কেন আরেক মন্ত্রী (রেল) বলেন, তার স্ত্রী তাকে বুঝতে পারছেন না? 

এগুলো কি একটি জনপ্রিয় গণতান্ত্রিক সরকারের শাসনামলে কাক্সিক্ষত ঘটনা? এই ধরনের ঘটনা আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো সরকারের আমলে ঘটলে দেশ আন্দোলনে অচল হয়ে যেতো।কিন্তু বিরোধীদল কি সেই ধরনের কিছু করতে পড়েছে? 

ভিন্নভাবে বলি, বিরোধী রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপি কয়েকবার বৈধ-অবৈধ নানাভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল। তাদের আমলের অনিয়ম-দুর্নীতি,সন্ত্রাসের কথা জনগণ কিন্তু ভুলে যায়নি। এখন জনগণ পড়েছে সংকটে।জলে কুমির ডাঙায় বাঘ এমনি উভয় সংকট। কিন্তু প্রশ্ন হলো, দেশের সমস্যা বিদেশে নিয়ে যাওয়া মোটেই কাক্সিক্ষত হতে পারে না। 

দায়িত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতারা অবশ্যই চাইবেন না হঠকারী কোনো কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিকাশমান অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত হোক। বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ গার্মেন্টস, টেক্সটাইলে রফতানিতে চীন, ভিয়েতনাম থেকে এগিয়ে যাবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। দেশের রাজনীতি দেশে থাকলে ২০২৩ নাগাদ বাংলাদেশের গতিশীল অর্থনীতি আরো এগিয়ে যাবে। ২০২৪ থেকে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে তারা একটি সুদৃঢ় অর্থনীতি আসবে।

আমি মনে করি, দেশের দুর্নীতি, সুশাসনের অভাব, বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে ঘনীয়মান সংকট থেকে প্রতিরক্ষার পরিকল্পনা জনগণের কাছে তুলে ধরে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেয়া সকল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল এগিয়ে আসা উচিত। প্রধানমন্ত্রী যে ভাষায় কথা বলছেন, সেটি যেমন সুশ্রুত নয়, তেমনি বিএনপি প্রতিনিধির একরোখা অবস্থান শুভ ইঙ্গিতবাহী নয়।

দেশে কি কনস্টিটিউশনের চার মূলনীতি সুরক্ষিত আছে? দেশ কি স্বাধীনতার আদর্শ ধরে রেখেছে? আওয়ামী লীগ কি বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের আদর্শে পরিচালিত হচ্ছে? দেশের সকল অংশের সাধারণ জনগণ কি সমভাবে উন্নয়নের অংশীদার হতে পারছে? দেশ কি ২২ পরিবারের স্থানে ২২ হাজার ব্যবসায়ী পরিবার আর কিছু লুটেরার কাছে পণবন্দি হয়ে পড়ছে না? 

আমি মনে করি, ২০২২ আর ২০১৪ বা ২০১৮ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমলানির্ভর হয়ে যেনতেনভাবে নির্বাচনের নদী পেরোনো সম্ভব নাও হতে পারে।তবে সবকিছু নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ড কতটা শক্তিশালী? আমার মনে হয়, রাষ্ট্রপতি দেশের অভিভাবক হিসেবে উদ্যোগ নিতে পারেন। বিএনপিসহ প্রধানমন্ত্রীর ভাষার ডান-বাম,বুদ্ধিমান মানুষরা রাষ্ট্রপতিকে তাদের সুপারিশসমূহ তুলে ধরতে পারেন। 

নির্বাচনকালে পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৬০ দিনের জন্য দায়িত্ব নিতে পারে। সরকার নিজেদের হাইব্রিড মুক্ত করে দুর্নীতিবাজদের বহিষ্কার করলে নির্বাচনে পরাজিত হবেনা বলতেই পারি।


শেয়ার করুন