২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ৬:৩৮:০৫ অপরাহ্ন


রাজপথে বিএনপিকে চাঙ্গা করছে আ.লীগ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০১-২০২৪
রাজপথে বিএনপিকে চাঙ্গা করছে আ.লীগ


তখনো সংসদে বসেনি নতুন সাংসদগণ। এর আগেই এক চোট রাজপথ পরখ করে ফেলেছে টানা চতুর্থবার ক্ষমতার মসনদে আসীন আওয়ামী লীগ। ২৭ জানুয়ারি শনিবার তারা রাজপথে নেমেছিল শান্তি সমাবেশে অংশ নিতে। এর ক’দিন আগে ৭ জানুয়ারি হয়ে গেছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। তাতে নিরঙ্কুশ জয়লাভ করে সরকার গঠন করেছে দলটি। সরাসরি আসন জয় করেছেন তারা ২২৩টি। এর সঙ্গে স্বতন্ত্র হিসেবে যারা তার সবটাই। বিএনপিসহ বিরোধীদলসমূহের নির্বাচন বর্জনের নির্বাচন শেষে ৮ জানুয়ারির ঘোষণা ছিল কোনোরকম আনন্দ উদযাপন নয়। তবে ১০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে মহাসমাবেশ হয়। তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রথম মাঠে নেমেছে দলটি ২৭ জানুয়ারি। এর মধ্যে দলীয় সাংসদদের শপথ গ্রহণ, মন্ত্রিপরিষদের শপথসহ নানা কর্মকাণ্ডে ছিলেন ব্যস্ত। আগামী পাঁচ বছরের জন্য ম্যান্ডেট পাওয়া আওয়ামী লীগের এখন আর কোনো দুশ্চিন্তা থাকার কথাই নয়। মাঠে যদি বিরোধীদলের কোনো সংঘর্ষ বা শৃঙ্খলা ভঙ্গের কাজ করে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। যেমনটা জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ রাখতে দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত সবাই অংশ নিয়েছিলেন, যার মধ্যে ছিল সেনাবাহিনীও। মাঠ প্রশাসনকে সাহায্য করতে প্রয়োজনে সবাই মাঠে নামতেই পারে। কিন্তু দেশের এমনি মুহূর্তে অর্থাৎ যখন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনী মাসটাই অতিক্রান্ত হলো না, এরই মধ্যে রাজপথে আওয়ামী লীগের মাঠে নামার তৎপর্য কেন? এ প্রশ্ন সর্বত্র। 

২৭ জানুয়ারির ওই শান্তি সমাবেশের প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, রাজপথের আন্দোলন অব্যাহত রাখার কথা। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘৩০ জানুয়ারি শান্তি, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন সমাবেশ হবে সব মহানগর, জেলা ও উপজেলায়। সেদিন আপনারা লাল-সবুজ পতাকা হাতে গণতন্ত্র, শান্তি ও উন্নয়ন কীভাবে হবে, সেই কথা বলবেন। সারা দেশে আমাদের নেতাকর্মীরা পাহারায় থাকবেন।’ 

বিএনপির কালো পতাকা মিছিলকে ‘শোক মিছিল’ বলে অ্যাখ্যা দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘কালো পতাকা মিছিল আরেক ভুয়া। ৩০ তারিখে আবার ডাকছে, সেটাও ভুয়া। লোকজন নেই, জনগণ নেই, নেতাকর্মীরা হতাশ। কারণ লন্ডনে থাকা তারেক জিয়ার প্রতি কোনো আস্থা নেই। যাদের সঙ্গে জনগণ নেই, তারা ভুয়া। নির্বাচনের খেলা শেষ। এখন খেলা হবে রাজনীতির।’

এতোক্ষণে আওয়ামী লীগের রাজপথে নামার কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন শেষে বিএনপি যখন মাঠে নামার চেষ্টা করছিল, নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল, ঠিক সে মুহূর্তে বিএনপিকে অনেকটাই উজ্জীবিত করতেই সম্ভবত আওয়ামী লীগের ওই মাঠে নামা। যার সূত্র ধরে নীরব-নিস্তব্ধ রাজনৈতিক মাঠ আবার শুরু হয়েছে উত্তপ্ত হতে। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে যদি মাঠে নেমে যেতে পারে, তাহলে বিএনপি যে ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে যেসব দাবি-দাওয়া পূরণের আন্দোল করে যাচ্ছে, সেখানে তো তারা মাঠে নামার সুযোগটা এক ধাপ এগিয়ে নামতেই পারেন। 

এক্ষেত্রে বিএনপি আওয়ামী লীগকে ক্রেডিটটা দিতেই পারে। কারণ বিএনপি টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় যেতে না পারা এবং নির্বাচন বর্জনের পর আওয়ামী লীগ যখন সবকিছু করে ফেলেছে নির্বিঘেœ, তখন বিএনপি তাদের তৃণমূলের কর্মীদের চাঙ্গা কীভাবে করবে সে দুশ্চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তাছাড়া একটা নির্বাচনের পর পরই সে সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে আন্দোলন করা এটা সাধারণ মানুষের কাছেও ছিল দৃষ্টিকটু। বিএনপি চেষ্টা করছিল ছোট ছোট কর্মসূচি দিয়ে নিজেদের গুছিয়ে নিতে। কিন্তু এক কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচিতেই (২৬ ও ২৭ জানুয়ারি) শুধু বিএনপি নয়, চাঙ্গা এখন দেশের রাজনীতির মাঠ।

গত ২১ জানুয়ারি সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের নির্বাচনোত্তর মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। 

তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তি, সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, অবৈধ সংসদ বাতিলসহ একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দুই দিনের কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করছি। গত ২৬ জানুয়ারি দেশের সব জেলা সদরে এবং ২৭ জানুয়ারি দেশের সকল মহানগরে কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।’

ওই ঘোষণার পরই আওয়ামী লীগও শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দেয় এবং সেটা ২৭ জানুয়ারি। বিএনপি এরপর নতুন কর্মসূচি দেয় আবারও ‘কালো পতাকা মিছিল’। সেটা ৩০ জানুয়ারি যেদিন প্রথম সংসদ অধিবেশন শুরু হবে সেদিন। ওইদিন বিএনপি’র ওই ঘোষণার পর আওয়ামী লীগও ৩০ জানুয়ারি কর্মসূচি দেয়। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর নয়াপল্টনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দলের নেতা কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তৃপ্তি নিয়ে ঘরে ফিরলে হবে না, আমাদের রাজপথে কর্মসূচি পালন করে যেতে হবে।’

৩০ জানুয়ারি দেশের সব মহানগর, জেলা, উপজেলা, থানা ও পৌরসভায় কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। ‘অবৈধ ডামি সংসদ বাতিল ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের’ দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করবে ঘোষণা দেয় দলটি। 

এরপর রাজধানীর গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সেখানে তিনি ৩০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ঢাকাসহ দেশের সব শহর, জেলা ও থানায় ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ সমাবেশ করবে বলে ঘোষণা দেয়। 

ওই সময় ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, ‘আমরা সতর্ক থাকব। কোনো অপশক্তিকে রেহাই দেওয়া হবে না। সব ষড়যন্ত্রের উপযুক্ত জবাব দেবো।’ যার অর্থ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের বছর খানেক আগ থেকেই বিএনপি যেদিন কর্মসূচি দিত, আওয়ামী লীগও ঠিক সেদিন শান্তি সমাবেশ করে আসছিল। এমনকি ২৮ অক্টোবরে যেদিন বিএনপির পল্টনে মহাসমাবেশ পণ্ড হয়েছিল সেদিনও ছিল আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে। 

আওয়ামী লীগ বিএনপির সঙ্গে আবারও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেওয়া শুরু করেছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পরও। যদিও আওয়ামী লীগ এটাকে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি বলতে নারাজ। বলছেন, ‘আমরা রাজপথে সতর্ক থাকবো।’ কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পরও দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক দলসমূহের রাজপথে সরগরম থাকার বিষয়টি সাধারণ মানুষ এটাকে কীভাবে গ্রহণ করছে সেটাই এখন প্রশ্ন। কেননা নির্বাচনী ডামাডোলে ব্যবসা বাজিণ্য থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে কিছুটা উত্তপ্ত সময় গেছে। কী হয়, কে ক্ষমতায় আসে এ নিয়ে বরাবরই শঙ্কা থাকে সর্বত্র। এবারও ছিল না এর ব্যাতিক্রম। কিন্তু একটি ডামি জাতীয় নির্বাচনের পর, একটি মাস না যেতেই আবারও মাঠে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা, কিন্তু কেন? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হয়রান সাধারণ মানুষ।

শেয়ার করুন