২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০১:৪৬:৩১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


সাকিব টেষ্ট ক্যাপ্টেন নির্বাচন কতটা যুক্তিগ্রাহ্য?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৬-২০২২
সাকিব টেষ্ট ক্যাপ্টেন নির্বাচন কতটা যুক্তিগ্রাহ্য? সাকিবের সাথে একান্তে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন/ফাইল ছবি


বিসিবি সাকিব আল হাসানকে ওয়েস্টইন্ডিজ সফরে টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসাবে ঘোষণা দেয়ায় নৈকট্য বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে।  ক্রমাগত হারের বৃত্তে বন্দি বাংলাদেশ দখল এখন পূর্ণাঙ্গ সফরে ওয়েস্টইন্ডিজে।  খেলবে দুই  টেস্ট, তিন ওডিআই এবং তিন টি-২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচের সিরিজ। ওডিআই অধিনায়ক তামিম ইকবাল, টি ২০ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হকের স্থানে নতুন করে তৃতীয় টার্মে অধিনায়ক নির্বাচন করা হয়েছে তুখোড় চৌকষ খেলোয়াড় সাকিব আল হাসানকে। সহ অধিনায়ক হিসাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ইদানিং জ্বলজ্বলে ব্যাটিং ফর্মে থাকা লিটন কুমার দাসকে। সাকিবকে অনিদৃস্ট সময়ের জন্য অধিনায়ক করা হলো।


স্মরণ করা যেতে পারে ২০১৯ ভারতীয় বাজিকরদের সঙ্গে সংযোগের কথা গোপন রাখার গুরুতর অভিযোগে সাকিবকে আইসিসি সকল ধরণের ক্রিকেট থেকে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় মুমিনুল হককে টেস্ট অধিনায়ক করা হয়েছিল। সাকিব একবছরের নিষেধাজ্ঞা কাটানোর পর ফিরে এসে নিয়মিত ব্যাক্তিগত কারণে টেস্ট ক্রিকেট থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখে। 

এই সময়ে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে হাবুডুবু খেতে থাকে।  মুমিনুলের নিজের ব্যাটিং ফর্ম অনিশ্চিত হয়ে পরে। গত কয়েকমাসে বাংলাদেশ পাকিস্তান, নিউজিল্যাণ্ড , দক্ষিণ আফ্রিকা এবং শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ৮ টি টেস্ট খেলে ৬ টিতে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়।  পুরো দলের খেলা বিশেষত মমিনুলের অধিনায়কত্ব কঠিন সমালোচনার মুখে পরে।  অনেকটা গত্যন্তর না থাকায় বিসিবিকে অধিনায়ক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

কথা থাকে নৈতিক স্খলনের দায়ে দুষ্ট হয়ে সাজা প্রাপ্ত একজন খেলোয়াড়কে অধিনায়কের দায়িত্ব দিয়ে নবীন প্রজন্মের কাছে কি দৃষ্টান্ত রাখলো বিসিবি? স্মরণীয় যে, স্পট ফিক্সিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার গুরুত্বপূর্ন দুই ক্রিকেটার স্টিভ স্মিথ বা ডেভিড ওয়ার্নারকে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়কের দায়িত্বে ফিরিয়ে আনেনি। 

বাংলাদেশ নিজেরাও ম্যাচ ফিক্সিংয়ের জন্য নিষিদ্ধ মোহাম্মদ আশরাফুলকে আজঅব্দি কোনো ধরণের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিবেচনা করেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। সে দিব বিচেনা করলে সাকিবকে অধিনায়ক করার বিষয়ে দ্বি-মত ওটা যুক্তিযুক্ত। এছাড়া সাকিব বাংলাদেশের ক্রিকেট সিডিউলে থাকা আগামীর সব টেস্ট সিরিজ খেলবে, এমন কোনো গ্যারান্টিও নেই। 

অতীতে নানা অজুহাতে টেষ্টম্যাচ থেকে দুরে থাকতে তো দেখা গেছে। একই সঙ্গে টেষ্ট খেলার প্রতি তার যে একটা অনীহা রয়েছে- সেটা সে ইতিপূর্বে প্রকাশও করেছেন। ফলে এতসব বিবেচনা করলে ওর ডেপুটি হিসাবে নির্বাচিত লিটনের কিন্তু কোনো পর্যায়ে অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতা নেই। ফলে সাকিবের অনুপুস্থিতিতে ডেপুটি কী ক্যাপ্টেনসীর মত গুরুদ্বায়িত্বটা যথার্থভাবে পালণ করতে পারবেন? নাকি আবারও অন্য কাউকে খুঁজে তার কাধে দ্বায়িত্ব দিতে হবে। 

তেমন পরিস্থিতির যদি অবতারনাই হয়, সেক্ষেত্রে কী লিটনের উপর আস্থা না রেখে অণ্য কাউকে দেয়া হয় দ্বায়িত্ব সেক্ষেত্রে লিটনের মন মানসিকতা,ইজ্জত সন্মানের উপর প্রভাব পড়বে না- এর কী কোনো গ্যারান্টি আছে? যদিও এগুলো অনেক পরের কথা- কিন্তু এটাও ঠিক, বিসিবি একটা প্রফেশনাল বোর্ড। পেশাদারিত্ব রয়েছে এখানে। সুদুর প্রসারী চিন্তা না করে হুটহাট সিদ্ধান্ত নিলে সেটা তো দলের পারফরমেন্সের উপরও প্রভাব পরবে। সে দায়টা কার?  

কি করতে পারতো বিসিবি? তামিম টেস্ট অধিনায়কত্ব করবে না। মাহমুদুল্লাহ টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছে। মুশফিক কোনো ফরম্যাটেই আর কখনো অধিনায়কত্ব করবে না। এই ধরণের পরিস্থিতির জন্য বিসিবি কম বেশি দায়ী বলা যায়। টেস্ট ক্রিকেট অধিনায়ক হতে হলে প্রথমে পারফরমেন্স দিয়ে দলে অটোমেটিক চয়েস হতে হবে। সেই সূত্রে দোলে হাতে গোনা চার পাঁচ জনের বেশি নেই।

লিটন বেশ কিছু দিন অনিশ্চিত ফর্মে থাকার পর এখন ভালো খেলছে। এই মুহূর্তে ওকে দায়িত্ব দেয়া কতটা যুক্তিযুক্ত হয়েছে সেটি ভবিষ্যতি বলবে। সিদ্ধান্তটি হিতে বিপরীত না হলেই ভালো। দীর্ঘ সময়ের বিবেচনায় মেহেদী মিরাজকে দায়িত্ব দেয়া যেত। সেই অনুর্ধ- ১৯ থেকেই মিরাজ অধিনায়ক হিসাবে সফলতা দেখিয়েছে। তবে তামিম, মুশফিক ,সাকিবদের গোধূলি বেলায় দলের কোনঠাসা অবস্থায় বিসিবি মিরাজকে অধিনায়ক করার ঝুঁকি নেয়নি। তাই হয়তো সাকিবকে অধিনায়ক করেছে সেরা  অপসন হিসেবে। 

অধিনায়ক হিসাবে সাকিবের উপযুক্ততা তর্কের উর্ধে।  এই মুহূর্তে দলকে নিজের অবদানকে উপমা হিসাবে উপস্থাপন করে দলকে বদলে দিতে পারে সাকিব সন্দেহ নেই। তবে ২০২৪ থেকে বাংলাদেশের দীর্ঘ সময়ের জন্য সব ফরম্যাটে নতুন অধিনায়ক প্রয়োজন হবে আমার মনে হয় না তামিম, মুশফিক ,মাহমুদুল্লাহ বা এমনকি সাকিব এই সময়ের পর দলে নিয়মিত থাকবে। মিরাজকে বিবেচনায় নেয়া এই সময় যথাযথ হতো বলে আমি মনে করি। 


শেয়ার করুন