৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ৬:৩১:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে এবার বন্দুকধারীর গুলিতে তিন আইনশৃংলাবাহিনীর সদস্য নিহত ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ


বাংলাদেশের বিক্রি বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেই
যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের দূষিত চিংড়ি বাজার হারাচ্ছে
মঈনুদ্দীন নাসের
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৪-২০২৪
যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের দূষিত চিংড়ি বাজার হারাচ্ছে


আমেরিকার বাজারে ভারতের দূষিত চিংড়ি বাজার হারাতে বসলেও তা দখলে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের কোনো উদ্যোগ নেই। অন্যদিকে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড এই বাজার দখলের জন্য মাঠে নেমে পড়েছে। ইতিমধ্যে ভারতের দূষিত চিংড়ি আমেরিকার গ্রোসারিগুলো থরে থরে সাজানো থাকলেও তা নিয়ে আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অথরিটি তৎপরতা গ্রহণ করেছে। গত ৪ এপ্রিল অলাভজনক সাংবাদিক প্রতিষ্ঠান ‘আউটল ওসান প্রজেক্ট’-ও এনবিসি অনুসন্ধান করে এক সংবাদ যৌথভাবে ভারতের দূষিত চিংড়ির খবর সবিস্তারে প্রকাশ করেছে। আমেরিকার এক সি-ফুড শিল্পে অভিজ্ঞ ব্যক্তি, যিনি ‘চয়েস ক্যানিং’ নামে একটি সাপ্লাই কোম্পানির হয়ে ভারতে কাজ করতে যান গত ২০২৩ সালের অক্টোবরে, তিনি ভারতীয় সি-ফুড ইন্ডাস্ট্রির হালহকিত দেখে ইন্ডাস্ট্রির ভেতর থেকে এই সংবাদ সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ করেন। পেনসিলভানিয়ার ৪৫ বছর বয়সী ব্যক্তি জসুয়া ফারিনেল্লা খবর প্রকাশ্যে আনার জন্য তাকে ৩ লাখ ডলারের চাকরি খোয়াতে হয়েছে। ‘চয়েস ক্যানিং’ আমেরিকার ওয়ালমার্ট, আলডি, সপরাইট এবং এইচ-ইবিসহ বিভিন্ন গ্রোসারিতে চিংড়ি সরবরাহ করতো। ভারতের অমলাপুরম প্রক্রিয়াজাতকরণ চিংড়ি প্রকল্পে এবং অন্যান্য চিংড়ি প্রকল্পের হালহকিকত ছবি সহকারে প্রকাশ করেছেন জসুয়া। কিন্তু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘চয়েস ক্যানিং’ জসুয়ার দাবিকে সঠিক নয় বলে বর্ণনা করেছে। চয়েস ক্যানিংয়ের আইনজ্ঞরাও বলেছেন, এই দূষণের দাবি ঠিক নয়। কারণ চয়েস ক্যানিংয়ের সঙ্গে জড়িত আছে কোটি কোটি ডলারের চিংড়ি বাণিজ্য। 

চয়েস ক্যানিং দাবি করেছে, তাদের বাণিজ্যিক ইতিহাসে তারা কোনো রকম শঠতার আশ্রয় নেয়নি। তাদের বাণিজ্যিক রেকর্ড কলঙ্কমুক্ত। তারা তাদের স্ট্যান্ডার্ড যথাযথভাবে বজায় রাখে। অন্যদিকে ওয়ালমার্ট এবং আলডি, এনবিসি নিউজকে জানায় যে, তারা জসুয়ার দাবি অনুসন্ধান করে দেখছে। তারা বলেন, তারা চায় যেখান থেকে চিংড়ি আমদানি করা হবে, সেখানে কর্মচারিদের ভালোভাবে দেখভাল করা হচ্ছে। কিন্তু প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, সেখানে কর্মচারিদের সেভাবে যত্ন নেওয়া হয় না। তাদের বেতনভাতাদি নিয়ে কারচুপি করা হয়। তাদের মেঝেতে শুতে দেওয়া হয়। যেখানে পরিচ্ছন্নতা নেই বললেই চলে। তাছাড়া মেঝেতে যেসব বেড বিছানো হয়, সেখানে মানুষের চেয়ে ছারপোকারাই অনেক বেশি আরামে বাস করে। বিছানায় দেখা যায় মোটা মোটা ছারপোকা। অনেক ক্ষেত্রে জোরপূর্বক কাজের জন্য লোক নিয়োগ করা হয়। ওয়ালমার্ট বলেছে, তারা এসব বিষয় খতিয়ে দেখছে। 

আমেরিকার লোকজন চিংড়ি ভালোবাসে। সবচেয়ে বেশি সি-ফুড হিসেবে চিংড়ি মাছই আমেরিকানরা বেশি খায়। আর এই সি-ফুডের ৪০ শতাংশই আসে ভারত থেকে, যা অন্য যে কোনো দেশ থেকেই বেশি। একসময় থাইল্যান্ড ছিল আমেরিকার বাজারে সবচেয়ে বড় রফতানিকারক দেশ। কিন্তু থাইল্যান্ডে একসময় সবচেয়ে বেশি চিংড়ির রোগ ধরা পড়ায় এবং জোরপূর্বক শ্রমিক নিয়োগে বারবার রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ায় থাইল্যান্ডের চিংড়ি ব্যবসা সংকটে পড়ে। ভারত সে সময় তাদের উৎপাদন বৃদ্ধি করে থাইল্যান্ডের বাজার দখলে নেয়। 

এদিকে শিকাগোভিত্তিক একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ করপোরেট অ্যাকাউন্টেবিলিটি ল্যাব (সিএএল) নামে একটি প্রতিষ্ঠান এক নতুন রিপোর্টে জানিয়েছে, ‘জসুয়ার অভিযোগ ভারতীয় চিংড়িশিল্পের বহুবিধ ও সিস্টেম্যাটিক সমস্যার মধ্যে একটি অংশমাত্র।

শিকাগোর অ্যাডভোকেসি গ্রুপের রিপোর্টটি ভারতের চিংড়ি সেক্টরের ১৫০ কর্মচারিরও বেশি লোকের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি করা। সিএএল রিপোর্টে চয়েস ক্যানিংয়ের মধ্যে অনুসন্ধান করা হয়নি। কিন্তু দেখা গেছে যে, ভারতের চিংড়িশিল্প ফোর্সড লেবার বা জোরপূর্বক কাজ করানো শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল। সেখানে কাজের পরিবেশ ভয়ংকর ও নির্দয়ভাবে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে করানো হয়। কারণ, ভারত এভাবে জোরপূর্বক শ্রমিক খাটিয়ে কম পয়সায় চিংড়ি সরবরাহ করে আমেরিকার বাজারে।

সেক্টরের প্রক্রিয়াকরণ বিভাগে শ্রমিকদের গাদাগাদি করে এক রুমে রাখা হয়। অনেক ক্ষেত্রে তাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ছাপ নেই। আর এই গাদাগাদি অবস্থানে শ্রমিকদের জোর করে রাখা হয় কোম্পানির গার্ডদের নির্মম অত্যাচারের মাধ্যমে। তাদের কদাচিৎ শিল্পচত্বর ছেড়ে বের হতে দেওয়া হয়। জসুয়া বলেছেন, তিনি দেখেছেন যে, অভিবাসী কর্মীরা ঘরের মধ্যে বিছানো ম্যাট্রেসে ঘুমাচ্ছে। সেখানে কোনো বালিশ নেই। নেই কোনো চাদর। সিএএল রিপোর্টে বলা হয়, অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকদের ঋণগ্রস্ত করে রেখে তাদের চাকরি ছাড়তে দেওয়া হয় না। কারণ ঋণ শোধ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এই ঋণ বন্ডেজ অত্যন্ত দৃশ্যমান এবং চিংড়ি উৎপাদনেও দেখা যায়, পরিবেশগত দূষণের মধ্যে তা উৎপাদিত হচ্ছে। 

রিপোর্টে খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে কিছু উল্লেখ নেই। তবে এটা বলা হয়েছে যে, ভারতীয় চিংড়িশিল্প দুটি ন্যাশনাল মার্কেটের দিকে নজর রাখে আর তা হচ্ছে-চীন ও আমেরিকা। 

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ভারতীয় রফতানিকৃত চিংড়ির ৫০ শতাংশে ফরমালিন জাতীয় অ্যান্টি-বায়োটিক উদ্্ঘাটন করেছে। আমেরিকায় ২০২৩ সালে মাত্র ১ শতাংশ চিংড়ি পরিদর্শন করা হয়েছে বলে এফডিএ (ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অথরিটি) জানিয়েছে। দেখা যায়, এফডিএর চিংড়ির ৫১টি শিপমেন্ট বাতিল করেছে। কারণ, ফরমালিনযুক্ত অ্যান্টি-বায়োটিক আর এই ৫১টি শিপমেন্টের মধ্যে ৭০ শতাংশ ভারতের। সিএএল রিপোর্ট উল্লেখ করেছে, ভারত থেকে বিশাল পরিমাণে অ্যান্টি-বায়োটিক তথা, ফরমালিনযুক্ত চিংড়ি আমেরিকার বাজারে প্রবেশ করছে।

চিংড়ি চাষিরা অনেক সময় রোগ বিস্তার কমানোর জন্য চিংড়ি চাষে অ্যান্টি-বায়োটিক ব্যবহার করে। কিন্তু এই প্র্যাকটিস অনেক দেশে বন্ধ করা হয়েছে। কারণ, এই দূষিত চিংড়ি অ্যান্টি-বায়োটিকের বিরুদ্ধে মানবশরীরে রেসিটেন্স জমাতে পারে। 

জসুয়া বলেন, তার কোম্পানি অ্যান্টি-বায়োটিক মিশ্রিত চিংড়ি সরবরাহ করে। তিনি বলেন, তার কোম্পানি এই অ্যান্টি-বায়োটিককে ‘অস্কার’ নামে অভিহিত করে। অস্কার হচ্ছে সেই শব্দ, যা ‘দূষিত চিংড়ির’ পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়। অস্কার বললে বুঝতে হবে এই চিংড়িতে অ্যান্টি-বায়োটিক রয়েছে।

জসুয়া বলেন, সে অনিয়মগুলো সহ্য করতে পারেনি বলে এসব কথা ফাঁস করেছেন। ভারতের এই চিংড়ি নিয়ে তেলেসমাতি কারবারের বিরুদ্ধে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার ইতিমধ্যে তাদের প্রক্রিয়াজাত চিংড়ি দিয়ে ভারতীয় বাজার দখলের চেষ্টায় রয়েছে। বাংলাদেশের আমেরিকায় নিযুক্ত ইকোনমিক মিনিস্টার কিংবা অ্যাম্বাসেডরের এ বিষয়ে কোনো তৎপরতা রয়েছে কি?

শেয়ার করুন