২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৪:৪৭:০২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


ইন্দো প্যাসেফিকে চীনের আধিপত্য হ্রাস
বাংলাদেশে ইমানুয়েল ম্যাক্র’র তাৎপর্যপূর্ণ সফর
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৯-২০২৩
বাংলাদেশে ইমানুয়েল ম্যাক্র’র তাৎপর্যপূর্ণ সফর


মানবাধিকার ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আইনশৃংখলা সংস্থা র‌্যাবের ও এর শীর্ষ ৬ কর্মকর্তাকে শ্যাংসন প্রদানের পর থেকেই দুই দেশের সরকারের মধ্যে সম্পর্কে শীতলতা নেমে আসে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বেশ ক’বার র‌্যাবের উপর দেয়া শ্যাংসন তুলে নেয়ার আহ্বান জানানো হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনঢ়। তবে সম্পর্কের তেমন আর উন্নতি ঘটেনি। এরই মধ্যে বাংলাদেশের বিমান বহরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বোয়িংয়ের প্রভাব কমাতে ফ্রান্সের এয়ারবাসের দিকে ঝুঁকে। ২০২১ সনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সের সফরকালীন সময়েই ওই বিষয়ে কিঞ্চিৎ আলোচনাও হয়। এবার দিল্লিতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন শেষে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের দুইদিন ব্যাপী বাংলাদেশ সফরে দ্বিপাক্ষিক বেশ কিছু বিষয়ে আলাপ হয়। এর মধ্যে এয়ারবাস ক্রয়ের ব্যাপারেও আলোচনার অগ্রগতি অনেক দূর এগিয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

এদিকে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্র’র বাংলাদেশ সফরের প্রসঙ্গে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ফ্রান্স তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলকে “শক্তিশালী” করতে এবং এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বা “নতুন সাম্রাজ্যবাদ” প্রতিরোধের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে সফর করছে। দেশটি তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের অংশ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেন, “ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নতুন সাম্রাজ্যবাদের মুখোমুখি। এখন আমরা গণতান্ত্রিক নীতি এবং আইনের শাসনের উপর ভিত্তি করে একটি তৃতীয় উপায় প্রস্তাব করতে চাই -যেখানে আমাদের কোন অংশীদারকে খাটো করা হবেনা বা তাদেরকে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া হবে না।”

এএফপি আরো জানাচ্ছে, মূলত যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন, ইন্দো-প্যাসিফিকের বিস্তৃত অঞ্চলে প্রভাব খাটানোর জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে সেখানে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সকে একটি বিকল্প হিসাবে সামনে দাঁড় করাতে চাইছে। মি. ম্যাক্র তার সফরে বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি “অসাধারণ সাফল্য” অর্জন করেছে, বাংলাদেশ বিশ্ব মঞ্চে তার স্থান ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার করছে”।

প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা বিশ্বের অষ্টম জনবহুল এই দেশটি তাদের অর্থনীতি দ্রুত বর্ধনশীল রেখেছে বলেও ম্যাক্র মন্তব্য করেন। এহেন প্রেক্ষাপটে ফ্রান্স বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে যেসব খাতে ফ্রান্স শক্তিশালী, সেসব খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করতে চায় ন্যাটোর প্রভাবশালী এ দেশটি। মি. ম্যাক্র বলেন, “রাশিয়া যখন ইউরোপে প্রভাব বিস্তার করতে যুদ্ধ পরিচালনা করছে, এই অবস্থায় আমাদের দায়িত্ব দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুদের সাথে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা এবং টেকসই বিকল্প প্রস্তাব করা। আমরা বাংলাদেশের সাথে এই পথে চলতে চাই।” 

ফরাসী প্রেসিডেন্টের সফরকালীন সময়ে মি. ম্যাক্র ও শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট এবং বাংলাদেশের নগর অবকাঠামো উন্নয়ন বিষয়ে দুটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। 

এর আগে রবিবার নৈশভোজে মি. ম্যাক্র’র উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেছেন,“কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের জন্য আপনার গুরুত্ব আরোপ মূলত আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমরা আপনাকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিশুদ্ধ বাতাসের নিঃশ্বাস হিসেবে দেখি।” 

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ফ্রান্সের মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান থালোস ইতোমধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাডার ব্যবস্থা স্থাপনের কাজ করছে। একই প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালে উৎক্ষেপণ করা বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ তৈরি করেছিল। ২০২১ সালে শেখ হাসিনার ফ্রান্স সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে লেটার অব ইনটেন্ট সই হয়।

এবারে দ্বিতীয় স্যাটেলাইট ফ্রান্স কেনার বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হল। সেইসাথে সরকার বাংলাদেশ বিমানের জন্য তাদের যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং উড়োজাহাজ বহর থেকে সরে এসে ফ্রান্সের এয়ারবাসের কাছ থেকে ১০টি বিমান কেনার বিষয়েও চেষ্টা করছে। 

চলতি বছরের শুরুতে ফ্রান্সের এয়ারবাস কোম্পানি থেকে দশটি বিমান কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। এছাড়াও ফরাসি প্রেসিডেন্টের এই সফর আরও কয়েকটি কারণে বিশেষ তৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।

শেয়ার করুন