২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৯:৪৪:১৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


জেনারেল ইব্রাহিমের সাথে তারেক রহমানের কথোপকথনের পোস্টমর্টেম
ইমরান আনসারী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৩-২০২৪
জেনারেল ইব্রাহিমের সাথে তারেক রহমানের কথোপকথনের পোস্টমর্টেম সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ও তারেক রহমান


নিউ ইয়র্কে নির্বাসিত সাংবাদিক ড. কনক সারোয়ারের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের কথোপকথন এসময়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় বলে আমি মনে করি। সাংবাদিকতা জীবনে ঘরোয়া আড্ডায় আমি তারেক রহমান সম্পর্কে কোনো পজিটিভ আলোচনা পাইনি বললেই চলে। কি তাঁর দলের লোক, কি বিরোধী লোক। প্রত্যেকেই দলের দূরাবস্থার জন্য অভিযোগের তীরটি তারেক রহমানের দিকেই ছুড়েছেন। প্রথমে বলে রাখা ভাল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে আমার চার দফা খুব কাছ থেকে কথা বলার সুযোগ হলেও তারেক রহমানের সাথে এখন পর্যন্ত সরাসরি দেখা সাক্ষাত হয়নি। এজন্য আমি তাঁর সম্পর্কে পজিটিভ কিংবা নেগেটিভ কোনো আলোচনা অংশ নেই না। কিন্তু তিনি যখনই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন হয়েছেন তখন থেকেই আমি তিনি কিভাবে কথা বলেন, কি ধরনের সিদ্ধান্ত নেন- এগুলো সাংবাদিক হিসেবে, রাজনীতি বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে দেখবার চেষ্টা করি। পাশাপাশি তাঁর দেয়া বক্তব্য ও সিদ্ধান্তের উপর আমি আমার লেখা কলাম ও ফেসবুকে বিশ্লেষণ করবার চেষ্টা করি। আর এটি এজন্য করি কারণ তিনি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলে চেয়ারপার্সন। তাঁর কথা বলা, সিদ্ধান্তের উপর বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির অনেক কিছু নির্ভর করে, কিংবা করবে। এতে আপনি আমি তাঁকে পছন্দ করি বা না করি। এখন আসি মূল আলোচনায়। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের ক্ষেত্রে প্রায়ই শুনি ওনী কারো ফোন ধরেন না কিংবা কাউকে ফোন করেন না। এ ধারণাটি যে ভুল তা প্রচারিত টেলিফোন আলাপ থেকে প্রমাণিত। তিনি টেলি আলাপের এক যায়গায় বলেছিলেন, গতকাল আমি কর্নেল অলি আহম্মেদের সাথে কথা বলেছি। দ্বিতীয় অভিযোগ করা হয় তিনি সিনিয়রদের সম্মান করেন না। কিন্তু জেনারেল ইবরাহিম সাহেব যখন বললেন চেয়ারম্যান সাহেব কেমন আছেন, তখন তারেক রহমান সাহেব বললেন আপনি আমাকে তুমি বলবেন, আপনি আমার অনেক বড়। জেনারেল ইব্রাহিম সাহেব বললেন এটা হয়না, তাহলে ডেকোরাম ভেঙ্গে যাবে। এতে অনেক সমস্যা হবে। তখন তারেক রহমান সাহেব বললেন, ঠিক আছে আপনি একান্তে যখন কথা বলবেন তখন তুমি বলবেন, আর সবার সামনে আপনি বলবেন। এবার আসা যাক তারেক রহমান সাহেবের নেতা হিসেবে অপরকে কনভিন্স করার ক্ষমতা কেমন তা নিরূপণ করি। জেনারেল ইবরাহিম সাহেবকে তিনি অনুরোধ করলেন আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আরেকজন মুক্তিযোদ্ধাকে অনুরোধ করছি, যেন জেনারেল ইবরাহিম সাহেব তারেক রহমানের পাশে থাকেন। তিনি প্রস্তাবটি শুরু করেছেন একটি আবেগের জায়গা থেকে। তখনই জেনারেল ইব্রাহিম সাহেব কিছুটা অভিযোগের সুরে কিছুটা উত্তেজিত হয়েই বলতে থাকলেন, বিএনপির সঙ্গে থেকে তিনি মূল্যায়িত হননি। রাজনীতি করতে গিয়ে ১০/১২ কোটি টাকা ঋণী হয়েছেন। সরকার তাঁকে বাড়ি ছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে। তাঁর সন্তানরা ভবিষ্যতে কিভাবে থাকবে এটি নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন ইত্যাদি ইত্যাদি। জবাবে তারেক রহমান সাহেব খুবই দক্ষতার সাথে বললেন, আমি আপনার অভিযোগের জবাব দিতে চাই না। তবে যেটি বলতে চাই আপনিসহ আমাদের সাথে আরো যারা আছে প্রত্যেকের একই অবস্থা। আপনার তো বাড়ি আছে। আমার ঢাকা শহরে থাকার কোনো যায়গা নেই। আমার বাড়ি ঘর ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। আমার শুধু বগুড়ায় কিছু খালি যায়গা আছে। তখন জেনারেল ইবরাহিম সাহেব বলে উঠলেন, এখন চলুন আন্দোলন নিয়ে কথা বলা যাক। আপনি আমাদের আলোকবর্তিকা। তারেক রহমান সাহেব ভদ্রতা দেখিয়ে বললেন। আমি একা আলোকবর্তিকা নই। আপনারা যারা দেশে আছেন তারা আলোক বর্তিকা। দেশের মানুষ আলোকবর্তিকা। তারেক রহমান আরো বলেন, আমার অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। আমি হাজার মাইল দূরে থাকি। এছাড়া আমাকে সার্বিকভাবে একটা কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের দলের সীমাবদ্ধতার কারণেই অনেক যোগ্য লোককে মূল্যায়ন করতে পারিনি। আমার যদি সুযোগ আসে আপনার মত অনেক গুণী লোককে মূল্যায়ন করি কি না সেটা একবার দেখুন। এখনতো কোনো কথা বলে লাভ নেই। এই কথোপকথনে আমার দৃষ্টিতে ব্যক্তি তারেক রহমানের ম্যানেজমেন্ট এন্ড কনভিন্সিং ক্যাপাসিটি ফুটে উঠেছে। নেতৃত্ব নিয়ে ম্যাক্স ডিপ্রী-এর একটি উক্তি এখানে প্রাণিধানযোগ্য - The first responsibility of a leader is to define reality. The last is to say thank you. In between, the leader is a servant. তারেক রহমান তাঁর টেলিআলাপে খুবই দক্ষতার সাথে বাস্তবতাকে সংজ্ঞায়িত করতে পেরেছেন এবং নিজেকে একজন সেবক হিসেবে উপস্থাপন করতে পেরেছেন বলে আমি মনে করি। তবে এই ফোনালাপে একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে তা হচ্ছে- মেজর ইবরাহিমের মত লোক ৮ বার ফোন করে তারেক রহমান সাহেবকে পাননি। এটি অগ্রহণযোগ্য। এরজন্য অবশ্য তারেক রহমান সাহেব উদারতা দেখিয়ে জেনারেল ইবরাহিমকে সরি বলেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- বিএনপি ও বিএনপির বাইরের অনেক গুণীজন ও গুরুত্বপূর্ণ লোক দলীয় চেয়ারপার্সনের সাথে কথা বলতে চান। কারা এপথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় এটির একটি সমাধান তারেক রহমান সাহবেকেই করতে হবে। অনেকেই হয়তো বলবেন তারেক রহমান নিয়ে হঠাৎ কেন এত উতলা হয়ে উঠলাম। এর জবাব হচ্ছে- ভুল হউক, দুর্বল হউক এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ইসলাম ও জাতীয়তাবাদের পক্ষে তারেক রহমান ব্যতিত অন্য কোনো বিকল্প তৈরি হয়নি। সর্বোপুরি তিনি একজন মাজলুম নেতা। তাঁর মা পৃথিবীর সবচেয়ে মাজলুম নেত্রী। মু’মিনের কাজ হচ্ছে মাজলুমের পক্ষে। আমি আজ মাজলুমের পক্ষে থাকা। আপনি? 

লেখক: সাংবাদিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক

শেয়ার করুন