০৩ মে ২০১২, শুক্রবার, ০৭:৩০:৪২ পূর্বাহ্ন


সরকারের কৌশলের কাছে বিএনপি কৌশল পরাভূত
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-১১-২০২৩
সরকারের কৌশলের কাছে বিএনপি কৌশল পরাভূত বিএনপির সমাবেশ


বাংলাদেশে নির্বাচনী হাওয়া লেগে গেছে। অন্যতম বিরোধী দল বিএনপি এবং সমমনা কয়েকটি প্রান্তিক দল এখনো নির্বাচন বর্জন বিষয়ে তাদের অবস্থান বজায় রেখে নির্বাচন প্রতিরোধের জন্য রাজপথে আন্দোলন করছে। আমি মনে করি না অন্যতম বিরোধী দল বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলনে সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছে। নির্বাচন একটি রাজনৈতিক দলের রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতা অর্জনের প্রধান মাধ্যম। 

জনগণ চায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে, সীমিত আয়ে সাদামাটা জীবন যাপন করতে। জনগণ অবশ্যই চায় নির্বিঘ্নে ভোট প্রদানের অধিকার। যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়া বাংলাদেশের নিরীহ জনগণ সন্ত্রাস, বিশৃঙ্খলা চায় না। এমতাবস্থায় জনস্বার্থ ঘনিষ্ঠ বিষয়সমূহ নিয়ে আন্দোলন না করে শুধুমাত্র ক্ষমতা অর্জনের জন্য আন্দোলন করে জনগণ বিরোধী দলের আন্দোলনে সাড়া দেয়নি। ইতিমধ্যে সরকারি দল আওয়ামী লীগ, অন্যতম বিরোধী দল জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ছোট মাঝারি আরো কয়েকটি দল নির্বাচনে আসছে। এমতাবস্থায় প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নির্বাচন আগ্রহী নেতা নেত্রীরা অন্যান্য দল অথবা নির্দলীয় প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। আমার মনে হয় না বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো নির্বাচন প্রতিহত করতে পারবে। বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দৃশ্যমান নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অনেক দেশের বিশেষ আগ্রহ আছে। উন্মুক্ত মিডিয়ার উপস্থিতিতে, আগ্রহী দেশসমূহের ঈগল দৃষ্টির সামনে ২০১৪ বা ২০১৮ গোছের নির্বাচন হবার সম্ভাবনা নেই। এমতাবস্থায় আমি মনে করি, নির্বাচন বর্জন বিএনপি এবং নির্বাচন বর্জনকারী রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য শুভ পরিণতি আনবে না। কোনোভাবেই সরকারি দলকে ওয়াকওভার দেয়া ঠিক হবে না। সরকারের কৌশলের কাছে ইতিমধ্যেই বিএনপি কৌশল পরাভূত হয়েছে। নির্বাচন হবে এবং নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টা করলে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের ঘোষণা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় পড়ার কথা। 

ক্ষমতাসীন সরকার ২০০৮ থেকে ২০২৩ তিন টার্ম রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়, শিল্প থেকে দেশের সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছে। অর্থনীতির আকার বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, দেশ কৃষি উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করছে। দেশে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে ঘাটতি না থাকলেও এবং দেশ ব্যাপী সড়ক, রেল যোগাযোগ অবকাঠামো ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটলেও অশুভ সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে খাদ্য দ্রব্য সরবরাহে কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে জনগণকে সঙ্কটে ফেলা হয়েছে। যে কেউ স্বীকার করবে দেশ জুড়ে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। গোটা দেশকে বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় আনায় গ্রামেগঞ্জে কৃষি আধুনিকায়ন এবং ক্ষুদ্র শিল্পায়ন হচ্ছে। তবে বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার ব্যর্থ হওয়ায় উন্নয়নের সফল পুরোপুরি সাধারণ জনসাধারণ পায়নি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জ্বালানি, শিল্প, বাণিজ্য ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আমলানির্ভরতার কারণে কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসেনি। ভুল কৌশলের কারণে দেশের জ্বালানি সম্পদ উন্নয়ন অবহেলা করে আমদানি করা জ্বালানির প্রাধান্য দেয়ায় এবং একই সঙ্গে করোনা ১৯ অতিমারী, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ব বাজার থেকে উঁচু মূল্যে জ্বালানি কেনায় সংকট সৃষ্টি হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি, ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় দ্রুত গতিতে কমে যাওয়ায় ২০২৪ -২০০৮ সময় বাংলাদেশের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে অপেক্ষা করছে।

দেশের বৃহত্তর স্বার্থে বিবাদমান রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন করে প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠন অপরিহার্য। অন্যথায় বাংলাদেশ দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে। বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রা বিঘ্নিত হবে। 

বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থে আমি সকল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনগণকে ভোটাধিকার প্রয়োগে উৎসাহিত করতে অনুরোধ করছি। সরকার কিন্তু প্রস্তুত। অতীতের ভুল ভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক পথে চলার নিশ্চয়তা পেলে জনগণ হয়তো সঠিক দলকেই বেঁচে নেবে।

শেয়ার করুন