০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ১১:১০:৪৪ পূর্বাহ্ন


দেশ’কে ফাহিম মুনতাসির সুমিত
জাত চিনিয়েছেন মুশফিক লিটন
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৫-২০২২
জাত চিনিয়েছেন মুশফিক লিটন


শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে ২৪ রানে পাঁচ উইকেটের পতনের পর ৬ষ্ট উইকেট জুটিতে যে ব্যাটিংটা করেছেন মুশফিক ও লিটন। সেটা এক কথায় অসাধারণ,অবিশ্বাস্য। কিন্তু ওই দুইজনের ব্যাটিং দেখে মোটেও অবাক হননি সাবেক টেস্ট ক্রিকেটার ফাহিম মুনতাসির সুমিত। দেশ’র সাথে সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন এ দুইজনকে নিয়ে অনেক কথা। 

২০০২ সনে ঢাকায় টেস্টে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিষেক হওয়া এ ক্রিকেটার জানালেন, ‘মুশফিক ও লিটন নিজেদের জাত চিনিয়েছেন এ ইনিংসের মাধ্যমে। তিনি বলেন,‘টেস্ট ক্রিকেটই হলো ক্রিকেটের মূল। এখানেই একজন ক্রিকেটার তার নিজের যোগ্যতা প্রমাণের মাধ্যমে তিনি কতটা উচ্চমানের সেটার প্রমাণ দেন। ফলে আমি বলবো, মুশফিক এ ফরম্যাটে (টেস্টে) অনেক বছর যাবৎ খেলে চলছেন। খুবই অভিজ্ঞ একজন ক্রিকেটার।

ক্রিকেট নিয়ে তার অধ্যাবসায় কারো অজানা নয়। যে ইনিংসটা তিনি মিরপুর টেস্টে খেলেছেন, এটা তার কাছে প্রাপ্য ছিল। তিনি সেটাই করেছেন। এখানে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সে যে একজন উঁচুমানের ক্রিকেটার সেটার প্রমাণ তিনি আরো আগেও দিয়েছেন। এবারও তিনি প্রমাণ দিলেন। একজন জাত ক্রিকেটার মুশফিক।

লিটন দাস। আমি এ ক্রিকেটারকে ওর ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ফলো করে আসছি। সে শুরু থেকেই অত্যন্ত কোয়ালিটিপূর্ণ এক ক্রিকেটারের প্রতিচ্ছবি ছিল। দিনে দিনে তিনি নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন। আমার দেখা সে খুবই ট্যালেন্ট এক ক্রিকেটার। আমি মনে করি বিশ্ব ক্রিকেটে তার অবস্থান সেরা দশের মধ্যেই যাবে। সে এতটা কোয়ালিটি ক্রিকেট খেলেন। সে মাঠে যখন খেলেন, দেখলে মনে হবে, ক্রিকেট অনেক সহজ একটা খেলা। ক্রিকেট এভাবেই খেলতে পছন্দ করেন। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে হয়তো সে রান পাননি। কিন্তু পরিণত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার কোয়ালিটি সবাই দেখছে।’ 

ফাহিম মুনতাসির সুমিত


সুমিত বলেন, ‘আমাদের দেশের ক্রিকেটে সাধারণত আমরা দেখে আসছি যে শুরুতে উইকেট পড়ে গেলে সেখান থেকে উঠে দাঁড়ানো কষ্ট হয়ে যায়। সবার মাইন্ডসেটআপে সমস্যা হয়ে যায়। কিন্তু এ দুই ক্রিকেটার প্রমাণ করলেন, না, শত প্রতিকূলতার মাঝেও দলকে টেনে তোলা যায়। ওরা ওদের ডিউটিটা যথার্থ করেছেন। ২৭২ রানের পার্টানারশীপের দিকে তাকালে মনে হবে খুব সহজ। কিন্তু নয়। শ্রীলঙ্কার বোলারদের সব বল তারা খেলেননি।

ছাড়ার বল ছেড়েছেন। সহজ বলটা খেলে রান নিয়েছেন। ধর্য্যরে পরিচয় দিয়েছেন। এটাই হওয়া উচিৎ। করেছেনও তারা সেভাবে। তবে এটাও ঠিক, সূচনায় পাঁচ উইকেটের পতনের পর আসলে ম্যাচ আর থাকে না। নির্ঘাত হেরে যাওয়ার মতই অবস্থা। কিন্তু সে ম্যাচটাতে তারা বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সমান চ্যালেঞ্জিং পজিশনে এনে দাঁড় করিয়েছেন। এটা বড় প্রাপ্তি।’  

শ্রীলঙ্কার বোলিংয়ের বিপক্ষে ব্যাটিংটা কী সহজ ছিল? সুমিত বলেন, মোটেও না। ওদের শট সিলেকশন দুর্দান্ত ছিল। আমি বলবো শতভাগ পারফেক্ট। যেটা হওয়া উচিৎ পরিস্থিতি অনুসারে, সেটাই করেছেন এক কথায়।’ 

উইকেট প্রসঙ্গে বলতে যেয়ে সাবেক এ ক্রিকেটার বলেন,‘উইকেট নিয়ে আমরা অনেকেই না জেনে বুঝে মন্তব্য করি। এটা উচিৎ নয়। উইকেট স্পোর্টিং। শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং দেখলেও কিন্তু সেটাই মনে হবে। তবে সূচনাতে আমাদের পাঁচ উইকেটের পতন হওয়া ছিল ব্যাটসম্যানদের ভুলের কারণ। কেননা পাঁচদিনের ম্যাচে একটা উইকেটে ময়েশ্চার থাকে,ঘাস থাকে। এগুলো টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের দেখেশুনে খেলতে হয়। প্রথম সেশনটা দেখে খেললেই এরপর আর সমস্যা হতো না। এমনটাই হয়। কিন্তু টপ অর্ডার বিষয়গুলো মনে রেখে ব্যাটিংটা করতে পারেনি। এতেই ওই দ্রুত উইকেট পতন।’ 

আলোচিত এ দুই ক্রিকেটার প্রসঙ্গে সুমিত আরো বলেন,‘মুশফিক সবসময়ই হার্ডওয়ার্ক করে অভ্যস্ত। এটার ফল তিনি পাবেন এটাই স্বাভাবিক। ঘরোয়া ক্রিকেটেও খেলার খুব আগ্রহ। আন্তর্জাতিক সিডিউলের কারনে অনেক সময় খেলতে পারেন না। লিটন কিন্তু গোটা সিজনেই রান পেয়েছেন। নিজেদের কোয়ালিটি তারা দেখিয়েই চলেছেন।’

ইদানিং সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাদের বিদায়ের সময় হয়েছে কি-না সেটাও আলোচ্য বিষয়। সুমিত বলেন,‘এটা আসলে হওয়া উচিৎ নয়। একজন ক্রিকেটার বিশেষ করে আমাদের মত দেশে খুব বেশি ম্যাচ তারা পান না। অন্যসব উন্নত দেশের মত পর্যাপ্ত আধুনিক অনুশীলন সরঞ্জাম/ব্যাবস্থাও নেই। যেটুকু পান সেটা খেলে খেলে তারা অভিজ্ঞ। এদের বিরুদ্ধে হঠাৎ করেই প্রশ্ন তোলা উচিৎ না। এরাই আমাদের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিচ্ছে নিবেও। অভিজ্ঞদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দলকে এগিয়ে নেয়া উচিৎ বলে মনে করি।’ 


শেয়ার করুন