২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৪:২১:০৯ পূর্বাহ্ন


পরিবার-সন্তান বাবার লাশ নিতে যাচ্ছে না
এই নিষ্ঠুরতার শেষ কোথায়
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-১১-২০২৩
এই নিষ্ঠুরতার শেষ কোথায়


প্রবাসে মৃত্যুর যেন মিছিল চলছে। প্রতিদিনই মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে প্রবাসে বাংলাদেশিদের সংখ্যাও আগের তুলনায় অনেক বেশি। বাংলাদেশে বর্তমানে যে পরিস্থিতি-এই পরিস্থিতিতে সুযোগ পেলেই সবাই দেশত্যাগে প্রস্তুত। যে কোনো মূল্যে তারা বিদেশে চলে যেতে চায়। গত কয়েক বছর ধরে আমেরিকায় বিভিন্ন পথে বাংলাদেশিরা আসছেন। কেউ দালালের মাধ্যমে, আবার কেউ বৈধপথে, আবার ইদানীং প্রচুর ছাত্রছাত্রী আসছেন। স্টুডেন্ট ভিসায় যারা আসছেন, তারা খুব আরামেই চলে আসছেন। কিন্তু যারা অন্যপথে আসছেন তারা জীবনবাজি রেখে আমেরিকায় আসছেন। তারা মৃত্যুকে হাতে দিয়ে এই পথে পাড়ি দেন। যদিও এই পথে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি মারা গিয়েছেন। এই কঠিন পথ জেনেও অনেকে বাংলাদেশ থেকে আসছেন।

এর আগে যারা এসেছেন তারা পরিবারের কথা চিন্তা করেই আমেরিকায় এসেছেন। আমেরিকা এমন একটি দেশ যাকে বলা যায় ওয়ানওয়ে টিকেট। স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় যারা এসেছেন তারা সারাজীবন কষ্ট করেছেন পরিবারের জন্য, সন্তানের জন্য। প্রবাস জীবন কষ্টের জীবন। আর যাদের কাজগপত্র নেই, তাদের কষ্টের তো শেষ নেই। তারা রাতদিন কষ্ট করেন পরিবারের সুখের জন্য, সুন্দর সংসারের জন্য, ছেলেমেয়ের উন্নত জীবনের জন্য। অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি আছেন, যারা কাগজপত্রের কারণে দেশে যেতে পারেন না। তাদের কষ্টের কথা কেউ চিন্তা করেন না। তারা কীভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তার খবর দেশের কেউ রাখতে চান না। অনেক প্রবাসীর জমিজমা এবং বাড়িঘরও অন্যরা দখল করে নেয়। আমেরিকায় একশ্রেণির প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন, যাদের পরিবার-পরিজন বাংলাদেশে থাকেন। কোনো কোনো পরিবারের পক্ষ থেকে শুধু অর্থ চাওয়া হয়, কিন্তু প্রবাসী বাংলাদেশির প্রত্যাশা কী তা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। এমনকি যে স্ত্রী এবং সন্তানের জন্য সারাজীবন কষ্ট করেছেন, শেষ পর্যন্ত তারা বাবার লাশটি পর্যন্ত দেখতে চান না। এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্ট্রিটের পরিচিত মুখ মমতাজ উদ্দিন ভূইয়া (৭৫) ১০ অক্টোবর সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ আদায়ের জন্যে খামার বাড়ির বেসমেন্টে অবস্থিত মসজিদে যান। বাথরুমে ঢুকেছিলেন তিনি। কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশ ডেকে দরজা ভেঙে তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। কুমিল্লার চান্দিনার সন্তান মমতাজ ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। বাস করতেন জ্যাকসন হাইটসে। দেশে রয়েছে তিন কন্যা ও স্ত্রী। তার মৃত্যুর পর নিউইয়র্ক থেকে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে তারা পরিস্থিতি দেখতে পায়। তাদের প্রথম প্রশ্ন ছিল-বাবার লাশের পাশে থাকা কালো ব্যাগে কী আছে আমাদের দেখান। কিন্তু সেই ব্যাগে কিছুই ছিল না, ওই ভদ্রলোকের কাপড়-চোপড় ছাড়া। বাবার লাশের কথা বলতেই তারা জানালো লাশ তারা নিতে চান না। এখানেই যেন কবর দেওয়া হয়। কী নিষ্ঠুর আচরণ, কী নিষ্ঠুর কথা। যে বাবা সারাজীবন এই সন্তানদের জন্য কষ্ট করেছেন, নিজের সর্বস্ব উজার করে দিয়েছেন, তারা বাবার লাশটি পর্যন্ত নিতে চাইলো না। এই কোন নিষ্ঠুর দুনিয়ায় আমাদের বসবাস? এই নিষ্ঠুরতার শেষ কোথায়? যারা ফোনে কথা বলেছেন, তারা তো আক্কেলগুড়ুম! এমন নিষ্ঠুর সন্তানও কী আছে এই দুনিয়ায়?

শেয়ার করুন