২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৮:২৬:৫২ পূর্বাহ্ন


প্রতারণা অব্যাহত, অনলাইন ব্যাংকিং থেকে দূরে থাকুন
সোসাইটির সভাপতির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে হ্যাক ৮৬ হাজার ডলার
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-১০-২০২৩
সোসাইটির সভাপতির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে হ্যাক ৮৬ হাজার ডলার প্রতীকী ছবি


করোনা মহামারির সময় থেকেই অন লাইন ব্যাংকিং শুরু হয়েছে। ঠিক তার পর থেকেই কমিউনিটিতে মানুষের তথ্য হ্যাক করে জালিয়াতরা জালিয়াতি অব্যাহত রেখেছেন। হাজার হাজার মানুষের তথ্য হ্যাক করে তাদের সর্বস্বান্ত করা হলে এই প্রতারণা বন্ধ করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যার ফলে প্রতারণা দিন দিন চরম আকার ধারণ করেছে। চরম ভোগান্তির মধ্যে ভুক্তভোগীরা দিনাতিপাত করছেন। আগে শুধু ব্যক্তিবিশেষের তথ্য হ্যাক করা হলেও এখন সংগঠন এবং কোম্পানিগুলোর তথ্য হ্যাক করা হচ্ছে এবং প্রতারকরা হাজার হাজার ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশি কমিউনিটিতে অনেকেই আছেন যারা প্রতিদিন ব্যাংক চেক করেন না। আবার কেউ কেউ আছে এক সপ্তাহ বা তার অধিক সময় ব্যাংক চেক করেন না। তারাই সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন। কারণ প্রতারক কখন আপনার তথ্য হ্যাক করেছে আপনি জানেন না, যতক্ষণ না পর্যন্ত ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সন্দেহ না হয় এবং আপনাকে ফোন না করেন। আবার অনেকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট আসার পর দেখে প্রতারণার বিষয়টি জানতে পারেন। এই সুযোগ প্রতারক আপনার তথ্য চুরি করে আপনার নামে ব্যাংক কার্ড, আইডি, এমন কি আপনার নামে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে পারে। আইডি বানিয়ে এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করে জালিয়াতি শুরু করেন। এমনই জালিয়াতের খপ্পড়ে পড়েছেন প্রবাসের মাদার সংগঠন হিসাবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়া।

আব্দুর রব মিয়া জানান, তার দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে হ্যাকররা তার তথ্য চুরি করে আইডি বানিয়ে এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করে প্রায় ৮৬ হাজার নিয়ে গেছে। এর মধ্যে কয়েক হাজার ডলার রিকোভারি হলেও চেক ব্যাংক থেকে নেওয়া ৫১ হাজার ডলার ফেরত পাচ্ছে না। উল্টো ব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে, আপনার অর্থ ফেরত দেওয়া হবে না। কারণ জানতে চাইলে ব্যাংক থেকে জানানো হয় এই বিষয়ের জন্য আপনাকে ফোন করা হয়েছিল, আপনি বলেছেন ঠিক আছে। ব্যাংক কর্মকর্তার এই কথা শোনার পর তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। তিনি বলেন, আমি আপনাদের আগেই জানিয়েছি, আমার ফোন নম্বর হ্যাকড হয়েছে। আমি পুলিশ রিপোর্ট পর্যন্ত করেছি। তিনি জানান, তার ফোন হ্যাকড করা হয় ৯ অক্টোবর এবং তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ নেওয়া শুরু হয় ১৩ এবং ১৪ অক্টোবর। তিনি আরো বলেন, প্রতারকরা আমার তথ্য হ্যাক করে তারা নামে ডিডি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করে এবং আমার নামে ব্যাংক কার্ড বানায়। তিনি বলেন, টিডি ব্যাংক ৯-২২-২০২৩ থেকে প্রথমে হ্যাক করা হয় ২০ হাজার ডলার। এই প্রতারণা করা হয় অন লাইনে চেক জমা দিয়ে। তিনি বলেন, আমি সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তাদের জানানোর পর তারা তদন্ত করে সেই অর্থ ফেরত দেয়। তিনি বলেন, প্রতারকরা কৌশল অবলম্বন করে আমার চেক ব্যাংকে ৯-১২-২০২৩ তারিখে ৪০ হাজার জমা দেয়। এবং একই তারিখে ৪৬ হাজার ডলার অন লাইনে তুলে নেয়। আবার ১০০ হাজার, ৯/১৪তে ৫০০০ হাজার ডলার এবং ৪৫ হাজার উত্তোলন করে। তিনি বলেন, আমার আলট্রা মোবাইলের যে নম্বর ছিল যেটি কয়েক দিন আগে হ্যাক করা হয়েছে সেই ফোনে নাকি ব্যাংক থেকে ফোন করা হয়। আমি বিষয়টি পুলিশ এবং ফোন কোম্পানীকে জানিয়েছি। হ্যাক করা ফোন থেকেই জালিয়াতরা আমার হয়ে কথা বলে। কিন্তু বিষয়টি আমি মোটেও জানি না। আপনারা জানেন কারো ফোন নম্বর হ্যাক হলে সেটি বন্ধ থাকে। বিশেষ করে যার ফোন সে কথা বলতে পারে না। এই সুযোগে জালিয়াতরা আমার সর্বনাশ করেছে। আমি এখন বেচ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কোনভাবেই বিশ্বাস করাতে পারছি না, যে আমার হয়ে কথা বলেছে সে আমি নই। চেক ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আপনি নিজে ওয়ার ট্রান্সফার করেছেন। তিনি বলেন, আমি এখন কী করবো বুঝতে পারছি না। চেক ব্যাংক আমার ৫১ হাজার ডলার ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। তিনি বলেন, আমার এখন চেক ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করা ছাড়া আর কোন উপায় দেখছি না। এমনিতেই আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ তার ওপর এই ঝামেলায় আমার অবস্থা একেবারেই খারাপ।

অনেক ভুক্তভোগী বলেছেন, অনলাইন ব্যাংকিং বন্ধ করা উচিত, ফোনের ক্ষেত্রে কম দামি ক্যারিয়ার ব্যবহার করা উচিত নয়, যেখানে সেখানে ফোনের বিল পে করা উচিত নয়।

আরেক জন্য ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তার কাছে একটি কোম্পানি বা ব্যক্তি অর্থ ফেতেন। তিনি কিছু দিন সময় নিয়েছিলেন। এরই মধ্যে ওই কোম্পানি বা ব্যাংক থেকে ই-মেইল আসে যে, আমার অর্থটা প্রয়োজন, আপনি এই অ্যাকাউন্টে অর্থ পাঠিয়ে দিন। তিনি যাচাই-বাছাই বা ফোন না করেই ওই অর্থ ব্যাংক থেকে ওয়ার করে দেন। কিন্তু বাস্তবে দেখতে পান যে তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছে। অর্থাৎ তিনি যাকে অর্থ প্রেরণ করবেন তার বা তার কোম্পানির তথ্য হ্যাক হয়েছে এবং জালিয়াতরা অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। বিষয়টি জানতে পারেন ওই প্রতিষ্ঠা থেকে অর্থের জন্য ফোন করার পর। এ দিকে তিনিও ব্যাংকে অভিযোগ করেন। তাকে ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, আপনি অর্থ পাঠিয়েছেন আমাদের কী করার আছে। তিনিও মামলা প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

শেয়ার করুন