নিউইয়র্ক সিটি সাবওয়ে ব্যবস্থার ইতিহাসে ২০২৫ সালের জুলাই ও আগস্ট মাস ছিল সবচেয়ে নিরাপদ-এমনটাই জানিয়েছে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট (এনওয়াইপিডি)। ২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫ সালের আগস্টে ট্রানজিট-ভিত্তিক অপরাধ ২২.৮ শতাংশ কমেছে। গুরুতর হামলার (ফেলোনি স্তরের হামলা) ঘটনা কমেছে ৪০.৪ শতাংশ এবং সাবওয়েতে ডাকাতির ঘটনা ৩৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এই ঐতিহাসিক সাফল্যের পেছনে গভর্নর ক্যাথি হোচুলের নেতৃত্বে নেওয়া একাধিক নিরাপত্তামূলক উদ্যোগ ও বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
গভর্নর হোচুল চলতি বছরের শুরুতে ৭৭ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেন একটি ব্যতিক্রমধর্মী পরিকল্পনার জন্য, যার আওতায় প্রতিটি রাত্রিকালীন সাবওয়ে ট্রেনে দুজন এনওয়াইপিডি অফিসার মোতায়েন করা হয়েছে। এই অফিসাররা গাড়ি থেকে গাড়িতে গিয়ে টহল দেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন এবং অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করেন। এ উদ্যোগ যাত্রীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছে এবং সাবওয়ে ব্যবস্থাকে আরও নিরাপদ করে তুলেছে।
মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্টেশন অথরিটি (এমটিএ) জানিয়েছে, ২০২৫ সালের গ্রীষ্মে সাবওয়ে এবং অন্যান্য গণপরিবহন ব্যবস্থায় অপরাধের হার রেকর্ড পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। জুন ১ থেকে আগস্ট ৩১ পর্যন্ত সময়ে ট্রানজিট অপরাধ ২০২৪ সালের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে এবং ২০১৯ সালের গ্রীষ্মের তুলনায় ১৬.৮ শতাংশ কম। এ সময়ে যাত্রীসংখ্যা ৯ শতাংশ বেড়ে যায় এবং গ্রীষ্মকালীন তিন মাসে মোট ৩১১ মিলিয়নেরও বেশি যাত্রা সম্পন্ন হয়েছে।
জুন-জুলাই ও আগস্ট মাসে ট্রানজিট ফেলোনি অ্যাসল্টের সংখ্যা ছিল ১১৯, যেখানে ২০২৪ সালে একই সময়ে তা ছিল ১৫০। এমটিএ আরো জানায়, এ সময়ে প্রতি মিলিয়ন সাবওয়ে যাত্রীর বিপরীতে হামলার হার ছিল মাত্র ০.৩৮। এছাড়া বড় ধরনের অপরাধের সামগ্রিক হার ছিল প্রতি মিলিয়ন যাত্রায় ১.৫৯, যা ২০২২ সালের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম এবং মহামারির আগের অবস্থার কাছাকাছি।
নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে সাবওয়েতে অপরাধ কমাতে কাজ করবো। আজকের এ সাফল্য প্রমাণ করে যে, লক্ষ্যভিত্তিক পদক্ষেপ ও কৌশলগত বিনিয়োগ আমাদের ট্রানজিট ব্যবস্থাকে আরো নিরাপদ করে তুলেছে। নিউইয়র্কবাসী নিরাপদে এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে গণপরিবহনে চলাফেরা করার অধিকার রাখে।
এমটিএর চেয়ারম্যান ও সিইও জানো লাইবার বলেন, সাবওয়ে এখন মহামারি-পূর্ব সময়ের চেয়েও নিরাপদ। এর পেছনে রয়েছে আমাদের পরিকল্পিত পদক্ষেপ যেমন বেশি পুলিশ, অধিক সিসিটিভি ক্যামেরা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা। তিনি আরো বলেন, এ উদ্যোগগুলো আমাদের অপরাধ হ্রাসের সাফল্য ধরে রাখতে সাহায্য করেছে। এনওয়াইপিডির তথ্য অনুযায়ী, জুলাই ও আগস্ট ছিল নিউইয়র্ক সিটির ট্রানজিট ব্যবস্থার ইতিহাসে সবচেয়ে নিরাপদ দুই মাস। আগস্টে সামগ্রিক ট্রানজিট অপরাধ ২২.৮ শতাংশ কমেছে, ফেলোনি অ্যাসল্ট কমেছে ৪০.৪ শতাংশ এবং ডাকাতির ঘটনা কমেছে ৩৪ শতাংশ।
গভর্নর হোচুল জানুয়ারিতে যে ৭৭ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছিলেন, তা এনওয়াইপিডির সঙ্গে যৌথভাবে রাতের ট্রেনে পুলিশ মোতায়েন প্রকল্পে ব্যবহার হয়েছে। এছাড়া সাবওয়েতে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহায়তার জন্য এমটিএ পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ক্লিনিশিয়ানদের যুক্ত করে চালু করা হয়েছে সাবওয়ে কো-রেসপন্স আউটরিচ টিম। এ পর্যন্ত এই টিম ৭৫০ জনের বেশি ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য সাবওয়ে থেকে রেফার করেছে।
নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য নেওয়া অন্যান্য উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে। প্রতি রাত্রিকালীন ট্রেনে দুইজন পুলিশ অফিসার মোতায়েন, ১০টি সাবওয়ে কো-রেসপন্স টিমের পূর্ণ অর্থায়ন, ৩২ হাজারের বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন (এর মধ্যে ১৭ হাজার ট্রেনের ভেতরে এবং বাকিগুলো স্টেশনে), ৭৪টি স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম ব্যারিয়ার স্থাপন (২০২৫ সালের মধ্যে ১০০ স্টেশনে সম্প্রসারণের লক্ষ্য), এবং ৩০০টিরও বেশি স্টেশনে উজ্জ্বল এলইডি আলো স্থাপন। পাশাপাশি মানহাটনের সাইকিয়াট্রিক সেন্টারে স্থাপন করা হয়েছে দুটি ‘ট্রানজিশন টু হোম ইউনিট’, যাতে ৫০টি বেডের আবাসিক চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে গৃহহীন ও মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য।
এমটিএর প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মাইকেল কেম্পার বলেন, যাত্রীসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অপরাধ হ্রাস-এ দুটি বিষয় একসঙ্গে ঘটছে, যা নিউইয়র্কবাসীর জন্য দারুণ সুখবর। আমরা এনওয়াইপিডি ও অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি, যাতে এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকে। নিউইয়র্ক সিটি ট্রানজিট প্রেসিডেন্ট ডেমেট্রিয়াস ক্রিচলো বলেন, যাত্রী ও কর্মচারীদের নিরাপত্তা সব সময়ই আমাদের অগ্রাধিকার। গভর্নর হোচুল এবং আইনপ্রয়োগকারী অংশীদারদের সহায়তায় গ্রীষ্মে এই কম অপরাধের রেকর্ড সম্ভব হয়েছে। এখন যাত্রীরা একটি নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য এবং কার্যকর সাবওয়ে পরিষেবা আশা করতে পারেন।