এনসিপির লগো
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যায়নি জুলাই বিপ্লবের ইমেজে গড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতারা। এনিয়ে নানান ধরনের আলোচনা রাজনৈতিক মাঠে। তবে এধরনের ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে না যাওয়ার পেছনে কি হলো বা হয়েছে সে-নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। কারা দলটির পেছনে কলকাঠি নাড়াচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
মূল ঘটনা
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে নানামুখী চেষ্টা করা সত্ত্বেও জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যায়নি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে দলটির সঙ্গে সরকার ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ অব্যাহত আছে। যাতে পরে হলেও তারা সনদে সই করতে রাজি হয়। সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটি গত ১৭ অক্টোবর শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বিভিন্ন দিক থেকে নানান ধরনের সন্দেহ অবিশ্বাস দেখা দেয় যে, গুরুত্বপূর্ণ ওই অনুষ্ঠানে কেউ কেউ মেষমেষ স্বাক্ষর না-ও করতে পারে। এমনকি উপস্থিত না-ও থাকতে পারে। আর এজন্যই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর নিয়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তার মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ‘অতি জরুরি’ বৈঠক করে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ বৈঠক হয়। এতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। বাকিদের মধ্যে বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলন, জেএসডি (রব), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এবি পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। রাজনৈতিক দলগুলো সনদে সই করবে কি না, সে বিষয়ে এবং প্রয়োজনে সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বৈঠকে আবার আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে ঐকমত্য কমিশনের একটি সূত্র দাবিও করা হয়।
কিন্তু জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলো না এনসিপি
এদিকে নানা অনিশ্চয়তা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সই হয়ে যায় নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫। সনদে সই করেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ২৪টি রাজনৈতিক দল ও জোট। পাশাপাশি সনদে সই করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা তরুণদের গড়া দল সনদে সইও করেনি। এর পাশাপাশি এনসিপির নেতারা ওই অনুষ্ঠানে যায়নি। এর পাপশাপাশি এ ছাড়া চারটি বাম দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ জুলাই সনদে সই করেনি। আর গণফোরাম অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও সই করেনি সনদে।
এনিয়ে এনসিপির যুক্তি
এনসিপি’র পক্ষ থেকে জানা গেছে,আইনি ভিত্তির নিশ্চয়তা না থাকায় এনসিপি জুলাই সনদে সই করেনি। তারা যুক্তি দেখিয়ে বলেছে জুলাই সনদ কার্যকর করতে হলে প্রধান উপদেষ্টাকে একটি বিশেষ সংবিধান আদেশ জারি করতে হবে, যার ভিত্তিতে গণভোট হবে এবং পরবর্তী সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা দেওয়া হবে। তাদের মতে, জুলাই সনদ কার্যকর করতে হলে প্রধান উপদেষ্টাকে একটি বিশেষ সংবিধান আদেশ জারি করতে হবে, যার ভিত্তিতে গণভোট হবে এবং পরবর্তী সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা দেওয়া হবে। তারা চান, ভবিষ্যতে সংবিধান সংশোধন করাটা কঠিন করতে হবে। এই ক্ষেত্রে উচ্চ কক্ষ গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপির ভিন্নমত আছে। বিএনপি যেভাবে উচ্চ কক্ষ গঠন চায়, সেভাবে হলে সংবিধান সংশোধন কঠিন হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে ঐকমত্য কমিশন যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, সেটাতেও বিএনপির ভিন্নমত আছে। এটাকেও এনসিপির নেতারা মেনে নিতে পারছেন না, যা তাঁরা অনানুষ্ঠানিক আলোচনায়ও তুলেছেন বলে জানা গেছে।
বাম ৪ দলের মত
বাম ধারার চারটি রাজনৈতিক দলও জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেয়নি। দলগুলো হলো সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ। তারা সংবাদ সম্মেলন করে দলগুলো তাদের অবস্থান জানিয়েছিল। দলগুলো মনে করে, জুলাই সনদের প্রথম অংশে পটভূমিতে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাস সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়নি, বারবার সংশোধনী দিলেও সেগুলো সন্নিবেশিত করা হয়নি। অন্যদিকে অনুষ্ঠানে গেলেও সই করেনি গণফোরাম জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও তাতে সই করেনি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন দল গণফোরাম। এব্যাপারে গণমাধ্যমে দেওয়া তাদের বক্তব্যে বলা হয় ‘সংবিধানের ১৫০-এর ২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করা হবে বলা হয়েছিল। এবং পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিলে রাখা হবে না। এটা যদি সংশোধন করে তাহলে এবং প্রক্লেমেশন অব ইনডিপেনডেন্টস যদি এটা রাখে, তাহলে তারা স্বাক্ষর করব। তাদের অভিযোগ তাদেরকে যথাযথ কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করার পরও সংশোধন হয়। এমনকি তারা অনুষ্ঠানে গিয়ে চূড়ান্ত কপি পায়নি। বলা হয় যে, শুধু স্বাক্ষরের কপিটা দেওয়া হয়েছিল। এ জন্য তারা স্বাক্ষর থেকে বিরত ছিলো..।
কার কি প্রতিক্রিয়া
এদিকে জুলাই সনদ স্বাক্ষর জুলাই যোদ্ধাদের ইমেজে গড়া এনসিপি’র পক্ষ থেকে ওই অনুষ্ঠানে না যাওয়া নিয়ে অবাক বিষয় হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের একেবারে শীর্ষ পর্যায় থেকে কোনো ধরনের বক্তব্য দেওয়া হয়নি। এমনকি কি কোনো ধরনের কিংবা আক্ষেপও করা হয়নি। জুলাই বিপ্লবের ইমেজে গড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতারা মনে হচ্ছিল যেনো রাজনৈতিকভাবে একধরনের এতিম হয়ে গেছে। বরং জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ১৭ অক্টোবর শুক্রবার জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অবস্থান নেওয়া ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাদের অনেকে খেয়েছে বেধড়ক মার। আর অন্যদিকে এর বিপরীতে অভিযোগ উঠেছে জুলাই যোদ্ধারা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেছে। তাই এক পর্যায়ে পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করে। তাদের দাবি ছিল তিন দফা। জুলাই শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ এবং আহত-পঙ্গুত্ববরণকারীদের ‘বীর’ স্বীকৃতি দিয়ে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে, জুলাই আহত ও শহীদ পরিবারদের পুনর্বাসনের নির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে এবং আমাদের জন্য দায়মুক্তি দিয়ে সুরক্ষা আইন করতে হবে। যাতে আমাদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত হয়রানি করা না হয়। আমাদের সারাদেশে ষড়যন্ত্র করে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। এদিকে এনসিপি’র উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন জুলাই যোদ্ধাদের ওপর লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট দুঃখজনক।
মির্জা ফখরুল যা বললেন
জুলাই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানকে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেইসঙ্গে জুলাই সনদে সই না করা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘বিচক্ষণতার’ অভাব বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
জামায়াতের বক্তব্য
অন্যদিকে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এর আইনি ভিত্তি এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিশ্চিতের ওপর জোর দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, আজকের স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা সনদে একমত হয়েছি, তবে এর আইনি ভিত্তি এখনো বাকি রয়েছে। সরকারের উচিত তা দ্রুত নিশ্চিত করা।
কষ্ট পেলেন শুধু ড. আসিফ নজরুল
এদিকে দীর্ঘ আলোচনার পর জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ায় সব পক্ষই সন্তোষ প্রকাশ করলেও একমাত্র আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলই ছিলেন ব্যতিক্রম। জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পর এনসিপিকে নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন আসিফ নজরুল। জানালেন স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের অনুপস্থিতি পীড়া দিয়েছে তাকে। পাশাপাশি বলেছেন ‘খুবই ভালো লাগছে। অনেক মাস ধরে অনেক আলোচনার পর আজ একটা বিরাট অনুষ্ঠান হলো। আজ আমাদের জুলাই সনদের কনটেন্টটা ঠিক হলো।’
এনসিপি’র তীর্ষক প্রতিক্রিয়া...দুষলেন অন্তর্বর্তীদের
কিছু রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি কাগজে সই করছে বলে মন্তব্য করেছেন এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের সময় অনেকগুলো কমিশন হয়েছে। শ্রম কমিশন হয়েছে। কিন্তু এই কমিশন নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। স্বাস্থ্য কমিশন নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। মানুষের জীবনের সঙ্গে যে যে জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান জড়িত, যে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জড়িত, তার সংস্কার নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক ছয়টি সংস্কার কমিশন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন গঠন হয়েছে।’ সেখানেও গণতন্ত্রের জন্য সবার ভালো ইন্টেনশন (উদ্দেশ্য) দেখতে পাননি তাঁরা। অন্যদিকে এনসিপি’র সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, জুলাই সনদের বিষয়ে অমীমাংসিত দিকগুলোর সমাধান না হলে ‘জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ’ করা হবে। আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদের অনেকগুলো দিক নিয়ে স্বাক্ষরের আগেই সরকারের দিক থেকে নিশ্চিত হতে চাইলেও সনদ বাস্তবায়নের পথটাই অনুল্লেখ থেকে যায়, সেখানে ধোঁয়াশা থাকে, তাহলে আমাদের সমস্ত অর্জন বিফলে যাবে, এ কারণেই আমরা আজকের সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠান থেকে বিরত থেকেছি।
তবে মহা ঐক্য দেখালেন অন্তর্বর্তী সরকার
এদিকে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জুলাই বিপ্লবের ইমেজে গড়া এনসিপি নেতারা স্বাক্ষর না করলে একে মহা ঐক্যমত হিসাবেই দেখেছেন অন্তর্বতী সরকারের একেবারে শীর্ষ পর্যায় থেকে। ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও সরকার প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এর মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম। সেটা যেন সঠিকভাবে আমরা করে যেতে পারি। আমরা একমত হয়েছি সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ঐকমত্য কমিশনের যাত্রার শুরুটা ‘ভয়ে ভয়ে’ হয়েছিল মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পুরো জাতি এবং সব নেতা একসঙ্গে হয়ে জুলাই সনদ সই করছেন। এ রকম ঘটনা ঘটবে, এ রকম কেউ চিন্তাও করতে পারিনি। যখন ঐকমত্য কমিশন গঠন করলাম, মনে মনে আশা ছিল হয়তো দু-একটা বিষয়ে তাদের এক করতে পারব। কমিশনের সদস্যরা ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবেন।
শেষ কথা
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যায়নি স্বাক্ষর দিতে কিংবা জুলাই বিপ্লবের ইমেজে গড়া এনসিপি নেতাদের রাজি করাতে সরকারের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না বলে বলা হয়। তবে এতো কিছুর পর বলা চলে সরকারের ওই ব্যর্থ হয়েছে। বলা চলে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। তবে কেনো এনসিপি’র নেতারা জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যায়নি তা নিয়ে নানান জল্পনা কল্পনা। কারো কারো মতে, সরকারের শীর্ষ মহল অথবা তারা আগের মতো তেমন উৎসাহ দেখানি। বলা হচ্ছে যায়নি বা এনসিপির নেতাদের জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জোড়ালো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কিংবা এনসিপির কতিপয় নেতার বিভিন্ন ধরনের কর্মকান্ডের কারণে তারা ধীরে ধীরে গুরুত্বহীন হয়ে যাচ্ছে সব পক্ষের কাছে। আবার কারো কারো মত, জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে না যাওয়ার পেছনে কেউ থেকে কল-কাঠি নেড়েছে। কারো কারো সন্দেহ কেউ বা কোনো পক্ষ এখনো কি এনসিপি’কে ব্যবহার করে কোনো প্রেক্ষাপট তৈরির কাজে আছে? কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এনসিপি কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে কিংবা যারা এদের নিয়ে খেলাধুলায় ব্যস্ত তারাই বা কতটা সফল হবে- তা নিয়ে জল্পনা কল্পনা শেষ নেই। তাই এনসিপি নিয়ে খেলোয়াররা আসলে জুলাই বিপ্লবের ইমেজে গড়া দলটির ও রাজনৈতিক ভবিষ্যত শেষ মেষ কোনো দিকে যায় তা এই দলের নেতাকর্মী কর্মীরা বুঝতে দেরি করছে। কিন্তু এনসিপির পাশাপাশি ২০২৪ সালে অংশ নেওয়ার সর্বস্তরের জনগণের অংশ নেওয়া সহকর্মীদের রাজনৈতিক সর্বশেষ পরিণতি কে হবে বা হতে পারে পারে সেই বিবেচনায় নেওয়া অনেক জরুরি বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। কেননা জুলাই বিপ্লবের ইমেজে গড়া এই দলটির শীর্ষ নেতাদের নিয়ে মাঠ পর্যায় বিভিন্ন ধরনের উত্তাল সময়ে পাশে ছিলেন সেই অধ্যাপক আসিফ নজরুল একমাত্র আক্ষেপ করতে দেখা দেখা গেছে। আর সেজন্যই দীর্ঘ আলোচনার পর জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ায় আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সন্তোষ প্রকাশ করলেও ওই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের অনুপস্থিতি একমাত্র তাকেই পীড়া দিয়েছে। অন্যদের মুখে এ-নিয়ে নুন্যতম আফসোস ছিল না, যা বেশ লক্ষ্যণীয় ও ইঙ্গিতপূর্ণ।
এনসিপির ব্যাপারে নেতিবাচক দিক ফুটে উঠছে
এদিকে জুলাই সনদে জুলাই বিপ্লবের ইমেজে গড়া এনসিপি নেতাদের স্বাক্ষর না করা নিয়ে সরকারের নিরুত্তাপ প্রতিক্রিয়াকে অনেকে দলটির জন্য একটি নেতিবাচক হিসাবেই দেখছেন। তাদের মতে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা, তিন বাহিনীর প্রধানেরা, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। উপদেষ্টাদের মধ্যে ছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী প্রমুখ। এমনকি তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া অনুষ্ঠানস্থলে ছিলেন। যদিও অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে তাদের একই সারিতে বসতে দেখা যায়নি। কিন্তু তারপরেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বা মিলিয়ে দেখা হচ্ছে যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরে একটি ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য। সনদে সই না করা এনসিপি ‘বিচক্ষণতার’ অভাব বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। এখন সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে আসলেই কি তাই? তা না হলে বিএনপি’র মতো একটি দলের প্রজ্ঞাবান নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের একটি বক্তব্য না বুঝেই অন্য একটি রাজনৈতিক দলের সাথে সুর মিলিয়ে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাতে পারতেন না জাতীয় নাগরিক পার্টির এই আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। কারো এতে বোঝা যায় এনসিপি পেছনে ইন্দন দাতা আসলে কারা? রাজনৈতিক ও বৈশ্বিক ক্ষেত্রে আরও ইঙ্গিতপূর্ণ যখন জুলাই সনদ স্বাক্ষরকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঐক্য ও সংস্কারের পথে বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে অভিহিত করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। তিনি বলেন, এটি ২০২৬ সালের নির্বাচনের প্রস্তুতিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। শুক্রবার ফেসবুক পোস্টে মিলার লেখেন, ‘জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে আমি আনন্দিত। এই দলিল মৌলিক সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গড়ে ওঠা ব্যাপক ঐকমত্যের প্রতিফলন।’ আর এজন্য এখন প্রশ্ন এত্তোসব কিছুর পর এনসিপি’র বক্তব্য কতটা রাজনৈতিক অঙ্গনে গ্রহণযোগ্য হবে?