মসজিদ বিলাল ইবনে রাবাহ ও (ডানে) মার্ক মার্টিনেজ
অ্যারিজোনার মারিকোপা শহরের মার্ক মার্টিনেজ (৩৬) স্থানীয় মসজিদ বিলাল ইবনে রাবাহ ফোন করে মুসলিমবিরোধী হুমকি দেওয়ার দায়ে দোষ স্বীকার করে আদালতের রায়ে দুই বছরের সাজা এবং ৬০০ ডলার জরিমানার শাস্তি পেয়েছেন। মার্ক মার্টিনেজ গত ৩ আগস্ট মারিকোপার একমাত্র মসজিদ মসজিদ বিলাল ইবনে রাবাহ-এ ফোন করে মুসলিমদের উদ্দেশে সহিংসতার হুমকি দেন। ফোনে তিনি ‘ক্রুসেড’ শুরুর হুমকিও দেন। এখানে ‘ক্রুসেড’ বলতে বোঝানো হয়েছে মধ্যযুগীয় ধর্মীয় যুদ্ধের মতো সহিংস অভিযান বা আক্রমণ, যা ইসলাম ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। আধুনিক প্রেক্ষাপটে এটি এক ধরনের হুমকি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর অর্থ মুসলিমদের ওপর সহিংস বা হুমকিপূর্ণ আচরণ করার প্রতিশ্রুতি।
ঘটনার সময় মসজিদে শিশুদের সানডে স্কুল ক্লাস চলছিল। মসজিদের নেতারা পুলিশকে ফোন কলের অডিও রেকর্ড সরবরাহ করেন। তদন্তে পুলিশ ও ফেডারেল কর্মকর্তারা ফোন রেকর্ড এবং অন্যান্য তথ্যের মাধ্যমে হুমকির সত্যতা নিশ্চিত করেন। মার্টিনেজকে ২৯ আগস্ট তার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং পরে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। ২৮ অক্টোবর মারিকোপা মিউনিসিপাল কোর্টে তার দোষ স্বীকারের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিচারক উল্লিখিত সাজা ঘোষণা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর হুমকি ও সহিংসতা ক্রমবর্ধমান। বিশেষ করে ২০০১ সালের ৯/১১ ও গাজা যুদ্ব শুরুর পর পর থেকে ইসলামোফোবিয়ার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। ধর্মীয় উগ্রপন্থা ও সন্ত্রাসবাদকে কিছু মানুষের দ্বারা পুরো মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত করার কারণে মুসলিমরা প্রায়ই হুমকি, ব্যঙ্গচিত্র বা সামাজিক বৈষম্যের শিকার হয়।
মসজিদের সদস্য ও স্থানীয় মুসলিমরা ঘটনাটিকে ভয়ংকর ও উদ্বেগজনক হিসেবে বর্ণনা করেছে। তারা বলছে, এ ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এখনো কতটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, তার একটি কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরে। মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা করতে শিক্ষামূলক ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম আরো জোরদার করতে হবে। তারা স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক করেছে যে এমন ধরনের হুমকির পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
মসজিদের সদস্য ও স্থানীয় মুসলিমরা এই ঘটনার পর উদ্বিগ্ন। তারা আরো বলেন, এমন হুমকি শুধু আমাদের নিরাপত্তাকে বিপন্ন করছে না, বরং আমাদের সামাজিক স্বীকৃতি ও মানসিক শান্তিতেও প্রভাব ফেলছে।
আসামি মার্টিনেজ এক সাক্ষাৎকারে বলেছে, তিনি ফোন কলটি করেছিলেন এবং এ ঘটনার জন্য অনুতপ্ত। তিনি বলেন, আমি করেছি, এখন দায়িত্ব নিচ্ছি এবং সামনে এগিয়ে যেতে চাই। তবে তিনি অতিরিক্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করেন।