প্রবীণ নাগরিকদের জন্য প্রপার্টি ট্যাক্স ছাড়
নিউইয়র্ক স্টেটের প্রবীণ নাগরিকদের দীর্ঘদিনের দাবির পেরিপ্রেক্ষিতে স্টেটের আইনসভা সম্প্র্রতি প্রবীণদের জন্য প্রপার্টি ট্যাক্স ছাড়ের সীমা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইন পাস করেছে। এই নতুন আইন অনুযায়ী, নির্ধারিত আয় সীমার মধ্যে থাকা যোগ্য প্রবীণদের জন্য স্থানীয় সরকারগুলো সম্পত্তির মূল্যায়িত করের সর্বোচ্চ ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়ার সুযোগ পাবে। এর আগে এই ছাড়ের সীমা ছিল সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ, যা কয়েক দশক ধরে অপরিবর্তিত ছিল। ফলে এই আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্থির আয়ের ওপর নির্ভরশীল বহু প্রবীণ নতুনভাবে আর্থিক স্বস্তি পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। গভর্নর ক্যাথি হোচুল ৫ নভেম্বর এস ৫১৭৫এ /এ ৩৬৯৮এ বিলটিতে স্বাক্ষর করেন এবং ঘোষণা করেন যে তিনি চান নিউইয়র্কের কোনো প্রবীণ নাগরিক যেন শুধু প্রোপার্টি ট্যাক্স দিতে না পারার কারণে তার নিজের বাড়ি হারিয়ে ফেলার ঝুঁকিতে না পড়েন। তিনি বলেন, স্টেটের উচিত এমন ব্যবস্থা করা যাতে প্রবীণরা তাদের পরিচিত কমিউনিটিতে মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারেন। নতুন আইন তার বৃহত্তর অ্যাফোর্ডেবিলিটি এজেন্ডার অংশ, যার উদ্দেশ্য নিউইয়র্কে জীবনযাত্রাকে আরো সাশ্রয়ী করা।
নিউইয়র্ক স্টেট অফিস ফর দ্য এজিংয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক গ্রেগ ওলসেন বলেন, নিউইয়র্কে ১৮ লাখের বেশি প্রবীণ নাগরিক নিজস্ব বাড়ির মালিক এবং তাদের একটি বিশাল অংশ স্থির আয়ের ওপর নির্ভরশীল। বাড়ির কর বাড়ার প্রবণতা এবং মূল্যস্ফীতির চাপ প্রবীণদের আর্থিক নিরাপত্তা কমিয়ে দিচ্ছিল। তিনি মনে করেন, এই আইন তাদের বাড়িতে থাকতে সাহায্য করবে এবং কমিউনিটিতে সক্রিয় ও মূল্যবান সদস্য হিসেবে থাকার সুযোগ দেবে। স্টেট সিনেটর লিরয় কমরি মন্তব্য করেন যে বর্তমান মূল্যস্ফীতি, ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবার খরচ বৃদ্ধি, বাসস্থানের ব্যয় এবং খাবারের মূল্যবৃদ্ধি প্রবীণদের জীবনকে আগের তুলনায় আরো কঠিন করে তুলেছে। তিনি বলেন, ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত কর মওকুফ প্রবীণদের জন্য বাস্তব উপকার বয়ে আনবে, যা তাদের বাড়ি ধরে রাখতে সহায়তা করবে। তিনি আরো বলেন, প্রবীণদের স্থায়ী আবাসন স্থিতিশীলতা রাজ্যের জন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও উপকারী। অ্যাসেম্বলিম্যান ডেভিড ওয়েপ্রিন বলেন, এই আইন পাস হওয়া নিউইয়র্কে অ্যাফোর্ডঅ্যাবিলিটি বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। প্রবীণদের ওপর বাড়তি করের বোঝা কমলে তারা বাসস্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন এবং বয়সজনিত নানা সমস্যার মধ্যেও আর্থিক চাপের ভয় ছাড়াই জীবনযাপন করতে পারবেন। তিনি জানান, বাড়তি কর মওকুফ প্রবীণদের মানসিক স্বস্তিও দেবে, যা তাদের সামগ্রিক জীবনের মান উন্নত করবে।
নতুন আইনে আয়ের সীমা ও যোগ্যতার মানদণ্ডও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিউইয়র্ক স্টেটে আয় নির্ধারণের যে কাঠামো রয়েছে তা সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া জরুরি। কারণ অনেক প্রবীণই সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা, পেনশন বা সীমিত অবসর সঞ্চয়ের ওপর নির্ভর করে চলেন। সেই বাস্তবতায় কর মওকুফের সর্বোচ্চ সীমা বাড়ানো হলেও আয়ের যোগ্যতার পরিধি প্রশস্ত না হলে অনেক প্রবীণ সুবিধার বাইরে থেকে যেতে পারেন। ফলে স্থানীয় সরকারগুলোকে আয়ের যোগ্যতার মানদণ্ড পুনর্বিবেচনা করার পরামর্শ দিচ্ছেন অনেক নীতি-বিশ্লেষক।
স্থানীয় সরকারগুলোর জন্য এই আইন কার্যকর হলেও তাদের নিজস্ব বাজেট কাঠামো ও আর্থিক সক্ষমতার ওপর তা নির্ভর করবে। যেসব কাউন্টি বা শহরে প্রবীণদের সংখ্যা বেশি, সেখানে এই ছাড় কার্যকর করলে বাজেটে বড় ঘাটতি তৈরি হতে পারে বলে কিছু কর্মকর্তার আশঙ্কা রয়েছে। তবে বিলের সমর্থকরা বলছেন, বাড়ি টিকেয়ে রাখার সুযোগ বৃদ্ধির ফলে প্রবীণরা দীর্ঘমেয়াদে কমিউনিটিতে থাকবেন, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনবে এবং দীর্ঘমেয়াদে আয় বৃদ্ধি করতেও সহায়ক হতে পারে।
প্রপার্টি ট্যাক্সের বাড়তি চাপ কমানোর পাশাপাশি এই আইন প্রবীণদের জন্য নিরাপত্তা ও সুস্থতার পরিবেশ তৈরি করতেও সহায়তা করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। অনেক প্রবীণই বাড়ি হারানোর ভয় বা কর বকেয়া সমস্যার কারণে উদ্বেগ ও মানসিক চাপে ভোগেন। কর মওকুফের পরিমাণ বাড়ানো তাদের আর্থিক অনিশ্চয়তা কমাবে এবং স্বাধীনভাবে ও মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপনের সুযোগ দেবে।
গভর্নর হোচুলের অ্যাফোর্ডঅ্যাবিলিটি এজেন্ডার অংশ হিসেবে রাজ্য ইতোমধ্যে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর কর কমানো, শিশু কর বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি ফেরত চেক প্রদান এবং সব কে-১২ শিক্ষার্থীর জন্য বিনামূল্যের খাবার নিশ্চিত করার মতো উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। এসব নীতির সমন্বিত লক্ষ্য হলো নিউইয়র্কে বসবাসকে আরো সাশ্রয়ী ও মানসম্মত করা। প্রবীণদের কর মওকুফ সেই লক্ষ্য পূরণে একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ সংযোজন। অনেক প্রবীণ সংগঠন নতুন আইনকে স্বাগত জানালেও তারা চান আরো বিস্তৃত সংস্কার। তাদের দাবি, বাড়ি কর ছাড়ের পাশাপাশি প্রবীণদের জন্য হোম রিপেয়ার সহায়তা, কম খরচে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্থানীয় ট্রান্সপোর্ট সেবা সম্প্রসারণ করা জরুরি। প্রবীণদের বহুমুখী সেবা নিশ্চিত করা গেলে তারা আরো দীর্ঘসময় নিজেদের বাড়িতে নিরাপদে থাকতে পারবেন।
সার্বিকভাবে নিউইয়র্কে প্রবীণ নাগরিকদের সম্পত্তির কর মওকুফ ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত উন্নীত করার এই আইন তাদের জীবনে আর্থিক স্বস্তি এবং আবাসন নিরাপত্তা নিয়ে এসেছে। আইনটি এখন স্থানীয় সরকারগুলোর সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করে কতজন প্রবীণ প্রকৃতপক্ষে সুবিধা পাবেন। তবে এটি নিঃসন্দেহে নিউইয়র্কের প্রবীণদের ভবিষ্যৎকে আরো নিরাপদ ও স্থিতিশীল করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।