১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, বুধবার, ০৭:৩৮:৪৭ অপরাহ্ন


অশনিসংকেত
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-১২-২০২৫
অশনিসংকেত ওসমান হাদি


১১ ডিসেম্বর ২০২৫ বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন বহুল প্রতীক্ষিত জাতীয় নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করেছে। একই দিন জুলাই সনদ এবং সনদ বাস্তবায়নের ওপর গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। অবাধ, সুষ্ঠু,স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বিশেষ প্রয়োজন উপযোগী এবং কার্যকরি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সরকারের মুখপাত্র প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়েছে বিশ্বের কোনো শক্তি ঘোষিত শিডিউল অনুযায়ী নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও বারবার আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু শিডিউল ঘোষণার পর দিন ১২ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগরীর কেন্দ্রস্থলে অন্যতম জুলাই যোদ্ধা ইনকিলাব মঞ্চের প্রধান ওসমান হাদির ওপর হত্যার উদ্দেশ্যে দুর্বৃত্তরা গুলিবর্ষণ করে। সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ আসনে নির্বাচন প্রার্থী। বিষয়টি শুধু উদ্বেজনক নয়, রীতিমতো অশনিসংকেত। অনেকেই এই ঘটনাকে পতিত সরকারের কর্মকাণ্ড, প্রভাবশালী দেশের গোয়েন্দা সংস্থার ইন্ধন মনে করছে। কোনো মহল আবার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দিকে আঙুল তুলেছে। খোদ ওসমান হাদি বেশ কিছু দিন থেকে নানা হুমকি পাচ্ছিলো বলে জানা গেছে। তথাপি কেন তাকে খোদ মহানগরীতে হত্যা প্রচেষ্টার শিকার হতে হলো প্রশ্নের তীর কিন্তু যৌক্তিকভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দিকে নিশানা করে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সহযোদ্ধারা নিজেদের নিরাপত্তা বিষয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে। সরকার দ্রুত আইনশৃঙ্খলা উন্নয়ন বিষয়ে কার্যকরি এবং সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হলে দেশব্যাপী ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।

নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অপসারিত অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের। সরকার আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠন গুলোর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত ঘোষণা করলেও তৃণমূলে দলটি সুসংগঠিত থাকায় বিচ্ছিন্নভাবে মিছিল চলছে, প্রবাস থেকে নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে কার্যক্রম ঘোষিত হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাসহ নানা বিদেশি সংস্থা নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উপদেশ দিয়েছে। অনেকের ধারণা দেশের একটা উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠীকে নির্বাচনে নিজেদের পছন্দের দলকে সুযোগ দেয়া বঞ্চিত করলে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে নিশ্চয়তা নেই। 

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যেও পারস্পরিক সহমর্মিতার যথেষ্ট অভাব। প্রতিটি দলের নিজস্ব মতবাদ আছে, কার্জক্রমে ভিন্নতা আছে। কিন্তু যেভাবে দলগুলো একে অপরের বিষয়ে প্রকাশ্যে বিষোদগার করছে তাতে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ পাচ্ছে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার। কয়েকটি বড় দল নির্বাচনে জয়ী হওয়ার অন্ধ নেশায় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে গুজব ছড়াচ্ছে। কিছু দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সংঘর্ষে রূপ নিচ্ছে। এই সব কিছু থেকে সৃষ্ট আইনশৃঙ্খলাজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার মত যথাযথ কার্যক্রম এযাবৎ দৃশ্যমান হয়নি।

নির্বাচন যথাসময়ে হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। নির্বাচনে একটি দল জয়ী হবে। তবে নিশ্চিত করতে হবে জনগণ যেন নিরাপদে নিজের ভোট নিজে দিতে পারে। কালো টাকা এবং পেশী শক্তির প্রভাব যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে। কোনোভাবেই যেন সূক্ষ্ম বা স্থুল কারচুপির অভিযোগ না ওঠে। এখনো কিন্তু সুযোগ আছে প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনৈতিক দলগুলোর দেশের স্বার্থে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে সহায়তা করার।

আমি ওসমান হাদি হত্যা চেষ্টায় জড়িত খুনিদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে বিচারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিধানের দাবি জানাচ্ছি। বিষয়টি যেন কোনোভাবে রাজনৈতিকভাবে অপব্যবহার করা না হয়। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোন পথে যাবে তার অনেকটাই নির্ভর করবে এ হত্যাচেষ্টার বিচার সম্পাদনের ওপর।

শেয়ার করুন