বাম গণতান্ত্রিক জোট আগামী ২৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার সারাদেশে অর্ধদিবস (৬টা-১২টা) হরতাল ডেকেছে। জ্বালানি তেল, ইউরিয়া সার, খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপণ্য দাম ও পরিবহনের ভাড়া কমানোর, বিদ্যুৎ- গ্যাসে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা বন্ধের দাবিতে বাম জোট এ হরতাল ডেকেছে।
গত ১৬ আগস্ট (মঙ্গলবার) এসবের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শেষে তারা এ কর্মসূচি দিয়েছে। এদিকে ৯ বাম সংগঠন একই দাবিতে যুগপৎ ধারায় ২৫ আগস্ট হরতালের কর্মসূচি পালন করবে। এর পাশাপাশি বিএনপিসহ নব গঠিত সাত দলও একিই দাবিতে হরতালে সংহতি জানাবে বলে একটি সুত্র জানায়।
১৬ আগস্ট সকাল ১১টায় পল্টন মোড় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। মিছিল শাহবাগে পৌঁছালে পুলিশ ডাবল বেরিকেড দিয়ে পথ আটকে দেয়।
এসময় বাম জোটের নেতাকর্মীরা পুলিশের বাঁধা বেরিকেড ভেঙে রাজপথে অবস্থান-সমাবেশ করে। সমাবেশ থেকে এসব দাবি আদায়ে আগামী ২৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার সারাদেশে অর্ধদিবস (৬টা-১২টা) হরতাল পালনের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
মিছিল শুরুর আগে পল্টন মোড়ে ও শাহবাগে পুলিশের বাঁধা বেরিকেড ভেঙে রাজপথে অবস্থান-সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাম জোটের আহ্বায়ক, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এর সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদ (মার্কসবাদী)’র সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী)’র নেতা বিধান দাশ। বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, সিপিবির সহ-সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের ডা. হারুন উর রশীদ, বাসদ (মার্কসবাদী)’র মানস নন্দী, বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পার্টির শহীদুল ইসলাম সবুজ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেলেও সরকার দাম বাড়ানোর উৎসবে মেতে উঠেছে। দাম কমানোর যৌক্তিক দাবি তাদের কানে পৌঁছায় না। বরং মন্ত্রীরা এসব দাবি, মানুষের দূরবস্থা নিয়ে মানুষের সঙ্গে রসিকতা করছে।
নেতারা বলেন, মূল্যবৃদ্ধি দেশের ৫ ভাগ মানুষের জন্য সহনীয় হলেও ৯৫ ভাগ মানুষের কাছে অসহনীয়। এই ৯৫ ভাগ মানুষকে রাজপথে নামতে হবে। দুর্নীতি, লুটপাট, মূল্যবৃদ্ধিসহ সরকারের গণবিরোধী নীতি, দুঃশাসন রুখে দাঁড়াতে হবে।নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার লুটেরাদের পাহাড়াদার এবং তাদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত। বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট এর নামে ৮৬ কোটি টাকা খরচে দায় জনগণ নেবে না বলে উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ এই ভুলনীতি ও দুর্নীতির সঙ্গ জড়িতদের বিচার দাবি করেন। নেতৃবৃন্দ জানতে চান, জ্বালানি খাতে লাভের ৪৮ হাজার কোটি টাকা গেল কই?নেতৃবৃন্দ বলেন, বিশ্ব ও দেশের সংকট উত্তরণে অন্যতম রক্ষাকবজ হবে আমাদের কৃষি। সার ডিজেলের দাম বাড়িয়ে এই কৃষিকেও সংকটে ফেলা হলো।নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সরকার দাম কমিয়ে জনগণকে স্বস্তি না দেওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে।
আগামী ২৫ মার্চ সারাদেশে শান্তিপূর্ণ হরতাল পালনের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, দাবি আদায়ে আরও আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
সমাবেশে হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাম জোটের সমন্বয়ক অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার।সমাবেশ থেকে পুলিশের বেরিকেড ও মিছিল প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় পর্যন্ত মিছিল যেতে না দেওয়ায় নিন্দা জানানো হয়। সমাবেশে থেকে, ‘দাম কমাও জান বাঁচাও’ দাবি এবং হরতালের আহ্বান পৌঁছে দিতে আগামীকাল থেকে দেশব্যাপী পদযাত্রা, সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ সংগঠিত করার আহ্বান জানানো হয়।
সমাবেশ শেষে বাম জোটের নেতাকর্মীরা হরতালের সমর্থনে মিছিল নিয়ে রাজপথ প্রদক্ষিণ করে।