০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:১৯:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষ
তৃতীয়পক্ষ কি নজরদারির বাইরে?
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৪-২০২২
তৃতীয়পক্ষ কি নজরদারির বাইরে? বলা হচ্ছে তৃতীয় পক্ষ। এরা কারা? হেলমেট পরে সংর্ঘষে যাদের ছিল সক্রিয় উপস্থিতি.ছবি.সংগৃহীত


আবারো ঝামেলায় পড়লো বিএনপি। এবার নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনায় তারা পড়েছে মামলার জালে। গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, বিএনপি নেতা মকবুলসহ ৯২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন নিউমার্কেট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়ামীন কবীর। 

এজাহারে মকবুলসহ ২৪ জনের নাম থাকলেও অজ্ঞাতপরিচয়ে ৩০০ ছাত্র এবং ৬০০ ব্যবসায়ী ও দোকানকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। তবে নাম থাকা আসামিদের সবাই বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতা। তাদের মধ্যে মকবুল নিউমার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।

গত সপ্তাহের সোমবার রাতে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষ বাধে। নিউমার্কেটের দুটি খাবারের দোকানের দুই কর্মীর বিতণ্ডার থেকে ওই ঘটনার শুরু। এর জেরে পরেরদিন মঙ্গলবার দিনভর রাজধানীর মিরপুর সড়কের নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে স্থানীয় বিভিন্ন বিপডুবিতানের দোকানমালিক কর্মচারী ও হকারদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন দু’জন। 

গুরুতর আহত অবস্থায় মঙ্গলবার রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী নাহিদ হোসেন। তাঁর মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। আর গত বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে মারা যান ঢাকা নিউমার্কেটের একটি দোকানের কর্মী মোহাম্মদ মোরসালিন। তাঁর মাথায়ও আঘাতের গভীর ক্ষত ছিল।

হামলাকারী কারা?

প্রায় বিভিন্ন পত্রিকার খবর ছিল নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষ অস্ত্রধারীদের খোঁজ নেই, গ্রেফতার বিএনপি নেতা। একটি পত্রিকার নিউজের হেডিং ছিল বিধবার কান্না, বিচারহীনতার লজ্জা এবং অধরা হেলমেট বাহিনী। কোনো কোনো গণমাধ্যমে নিউজের হেডিং ছিল এখনো অস্ত্রধারী কারো পরিচয় নিশ্চিত করেন পুলিশ। তবে সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, সংঘর্ষে তৃতীয়পক্ষের ইন্ধন ছিল। এসময়ে বিএনপির দাবি করে ঘটনার সাথে জড়িত ছাত্রলীগ, ইন্ধন দিয়েছে পুলিশ। দায় চাপাচ্ছে বিএনপির ওপর।

এতো বাগবিতণ্ডার মাঝে বিএনপিই ঘাড়েই শেষ মেষ গিয়ে পড়েছে মামলা। এনিয়ে বিএনপি প্রতিবাদ করেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ওই সংঘর্ষে ছাত্রলীগ জড়িত এবং পুলিশের ইন্ধনে এটা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ উল্টো বিএনপির নেতাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম একটি গণমাধ্যমে বলেছেন,‘দুদিন ধরে ঘটনা ঘটলো, সবাই দেখলো ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের সঙ্গে ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের সংঘর্ষ। ঘটনার পর তারা বিএনপিকে খুঁজে পেলো।’ 

তিনি বলেন, ‘একজন লন্ডনে আছেন, তাঁকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে। কয়েকদিন আগে ইশরাক হোসেনকে গ্রেফতারের ঘটনায় পুলিশ যে মামলা দিয়েছে, সেখানেও দেখা গেছে একজন ওমরাহ করতে গেছেন, দু’জন জেলে আছেন, তাঁদেরও আসামি করা হয়েছে। তাঁরা নাকি পুলিশকে ইটপাটকেল মেরেছেন! এগুলো নাকি আইনের শাসন!’

তাহলে দায়ী কে?

দেশের শিক্ষামন্ত্রী দীপুমনি অনেক বুঝে শুনে কথা বলেন। দায়িত্ব নিয়েই মন্তব্য করে। ঢাকা কলেজের ঘটনায় তিনি ছাত্রদের ভালো-মন্দ দেখভালে ছুটে গিয়েছেন। বেশ তৎপর ছিলেন সংকট নিরসনে। বেশ গুরুত্ব দিয়েই তিনি পরিস্থিতি সামাল দিতে দেখা গেছে। কিন্ত শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সংঘর্ষ নিয়ে একটি মন্তব্য করেন, যা গণামাধ্যমে এসেছে। তাহলো দেশের শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন,সংঘর্ষে তৃতীয়পক্ষের ইন্ধন ছিল। প্রশ্ন হলো এ তৃতীয় পক্ষটি কে? 

তারা কি বারবার ধরাছোঁয়ার বাইর থাকবে। কেননা শিক্ষার্থী ও দোকানকর্মীদের সংঘর্ষের এক পর্যায়ে নাহিদ হোসেনকে কোপাতে দেখা যায়। হেলমেট পরা এক যুবক ধারালো অস্ত্র দিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী নাহিদ হোসেনকে কোপাচ্ছেন-এমন একটি ভিডিও দুদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে।

তবে হেলমেটধারী যুবককে এখন পর্যন্ত শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এ বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা গণমাধ্যমে বলছেন, হেলমেটধারী যুবক ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীএতোটুকু মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। সর্বশেষ খবরে বলা হয়,নিউমার্কেট এলাকায় গত মঙ্গলবার সংঘর্ষের সময় কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী নাহিদ হোসেনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত দুজনকে শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ। দু’জনই ঢাকা কলেজের ছাত্র। থাকেন কলেজের উত্তর ছাত্রাবাসে। একজনের নাম কাইয়ুম, অন্যজনের নাম বলতে চায়নি পুলিশ। দু’জনেই ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির একজন নেতার অনুসারী।

তবে মঙ্গলবারের সংঘর্ষে ধারালো অস্ত্র ও লাঠিহাতে অংশ নেয়া অন্য ১২ জনকে শনাক্ত করা গেছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করা সংঘর্ষের ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখে হামলাকারী হিসেবে যাঁদের শনাক্ত করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ঢাকা কলেজের ছাত্র, নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারিরা রয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে এখনই তাঁদের পরিচয় পুলিশ প্রকাশ করতে চাইছেন না। কিন্তু নিউমার্কেটে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা মামলায় গ্রেফতার বিএনপি নেতা মকবুল হোসেনকে আদালতে হাজির করে তিন দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।

শেষ কথা

নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনায় সময়ে সংবাদ সংগ্রহে থাকা বেশ কয়েকজন সাংবাদিক দেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধির সাথে কথা হয়। তারা জানান এর আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীতে আন্দোলনের সময়ে যে হেলমেট বাহিনীকে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে দেখেছিলেন ঠিক নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনায়ও তারাই তৎপর ছিল। 

এখন রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন এই হেলমেট বাহিনী কারা? কারা এদের মদদ দিচ্ছে? তাদের শক্তির উৎস কি? তারা কি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ভাষায় তৃতীয়পক্ষের কোনো উদ্দেশ্য সাধন করছে? রাজনৈতিক অঙ্গনে নানান ধরনের কানাঘুষা চলছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার সরকার অস্বস্তিতে।

অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) তাদের যে ‘বৈশ্বিক প্রতিবেদন ২০২২’ প্রকাশ করে তাতেও সরকার বেকায়দায়। কারণ সেখানে বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে বলা হয়,বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন ও গুমের বিষয়ে ২০২১ সালে জাতিসংঘ, দাতা দেশ এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর উত্থাপিত উদ্বেগ খারিজ করে দিয়েছে। 

বলা হয়েছে সরকার ২০২১ সালে এটা পরিষ্কার করে দিয়েছে যে এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো ইচ্ছাই তাদের নেই। অন্যদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাদ দিতে ১২টি সংস্থা জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যাঁ পিয়েরে ল্যাকবুয়াকে দেয়া চিঠিতেও সরকার বেকায়দায়। 

আর সর্বশেষ হলো বাংলাদেশের ২০২১ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রদফতরের প্রতিবেদন। এতে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়মুক্তি ভোগ করে। বিচার বিভাগেও দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ঘটছে। 

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি ঘাড়ে যেভাবে এর দায়ভার দেয়া হচ্ছে, তাতে কি মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রদফতরের প্রতিবেদনটি অক্ষরে অক্ষরে সত্য হয়ে যাচ্ছে না? এর পেছনে কি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ভাষায় তৃতীয়পক্ষের বেনিফিট নেয়ার গ্রাউন্ড পোক্ত হচ্ছে না তো? তাহলে কি সরষের ভূত কি সরকারেরই মধ্যেই? রাজনৈতিক মহলে এমন প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে।


শেয়ার করুন