০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৬:৩৮:২৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-১২-২০২৫
তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা


দলের চেয়ারপারসন সর্বোপরি নিজের মা খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। অথচ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তারেক রহমান এখনো লন্ডন দেশে ফিরছেন না। আর তার এই দেশে না ফেরা নিয়ে নেতিবাচক বয়ানের ছড়াছড়িতে দলের নেতাকর্মীরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এমন নেতিবাচক প্রচারণা দলের কাংখিত বিজয়ের জন্য হুমকি হতে পারে বলে মনে কারো কারো ধারণা। এছাড়া এই একটি মহল এটাকে ইস্যু করে ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার-ও করে ফেলতে পারে বলে কারো কারো আশঙ্কা।  

দেশে ফেরা কেনো ইস্যু হয়ে উঠলো..

তারেক রহমান এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দুর্নীতির অভিযোগে আটক হয়ে ১৮ মাস কারাগারে ছিলেন তিনি। এর পর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পান তারেক রহমান। এর পরে ২০০৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর পরিবারের কয়েকজন সদস্যদেরকে সাথে নিয়ে তিনি লন্ডন চলে যান। তবে সেখানে তা-র কি অবস্থান ছিল সে ব্যাপারে অনেকের কৌতুহল ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এব্যাপারে ২০১৮ সালের ২৪শে এপ্রিল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথমবারের মতো মুখ খুলেন। জানিয়ে দেন ২০১২ সালে তারেক রহমান ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করলে এক বছরের মধ্যেই সেটি গৃহীত হয়। সে থেকে তিনি লন্ডনে আছেন। 

কিন্তু এখনতো মামলা নেই..

২০০৭ সালের পর তার বিরুদ্ধে মোট ৮৪টি মামলা হয়। বিভিন্ন সময়ে বিএনপি দাবি করে যে এগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা অভিযোগ। পরবর্তীকালে ২০২৪ সালে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, আদালত তাকে দন্ডপ্রাপ্ত সকল অভিযোগ থেকে খালাস দেয় এবং তার সাজা বাতিল করা হয়। 

তাহলে দেশে আসতে বাধা কোথায়?

বর্তমানে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বিচারাধীন নেই। তাহলে তিনি দেশে আসছেন না কেনো? খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ২৩ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। মায়ের অসুস্থতার মধ্যেও তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে কোনো ধরণের ইতিবাচক বক্তব্য না পেয়ে দেশে সর্বমহলে নানান আলাপ আলোচনার ঝড় বইছে। এরই মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান 'সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়' বলে ফেসবুক স্ট্যাটাসে যে মন্তব্য করেছেন তা আলোচনার ঝড় তুলেছে। এর পাশাপাশি দলের ভেতরে বাইরে নেতিবাচক প্রচারণার বিরাট একটি ক্ষেত্র তৈরি করেছে বলেও প্রচার প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। 

নেতিবাচক প্রচারণাগুলি কি...

এখনো পর্যন্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাংলাদেশে না ফেরা নিয়ে বড়ো নেতিবাচক ও রহস্যজনক অবস্থার তৈরি হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাম্প্রতিক মন্তব্যে। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছিলেন যে, বাংলাদেশ বড় দুটি দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে একটি অগণতান্ত্রিক তৎপরতা রয়েছে, দুই দলেরই নেতৃত্ব পরিবর্তনে 'বিদেশ থেকে একটা খেলা চলছে'। এতে তিনি ভ’-রাজনৈতিকের পাশাপাশি একটি মাইনাস ফর্মূলাকে বুঝিয়েছিলেন। কেউ কেই বয়ান দিচ্ছেন যে, বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে আসলে খালেদা-হাসিনার পাশাপাশি ‘তারেক-জয় মাইনাস’ রাজনীতির ফর্মূলায় পড়ে গেছে। কিন্তু সজীব ওয়াজেদ জয়ের পাশাপাশি আরও অনেকের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যের জোয়ারের মধ্যে তারেক রহমান ফেইসবুকে মুখ খলেন। স্ট্যাটান দিয়ে বিষয়টি পরিস্কার করেন। এতে তিনি জানান যে, 'সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়'। 


অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে বিএনপি’র মধ্যে দুরত্ব? 

তারেকের দেশে না ফিরে আসা নিয়ে একটি মহল অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে বিএনপি’র মধ্যে দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে বলে একটি প্রচারণা চালাতে চায়।  এমনকি দেশের সেনাবাহিনীর সাথে-ও তারেক রহমানের বোঝাপড়া হয়নি বলে তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তবে পুরো বিষয়টি যে আসলে অন্য রকম তা তারেক রহমানের পক্ষ থেকে দেওয়া 'সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়' বলে মন্তব্যেই বুঝে নেওয়া যায়। এটা যে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো ধরণের কুটকৌশল বা অন্য কেনো দেশের স্পর্শকাতর সংস্থা দায়ি বা জড়িত নন তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে আবার তার এই স্ট্যাটাসের কয়েক ঘণ্টা পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানিয়ে দেন যে, "এ ব্যাপারে (তারেক রহমানের ফেরা) সরকারের তরফ থেকে কোনো বিধি-নিষেধ অথবা কোনো ধরনের আপত্তি নাই"। তারপরেও তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে কেউ প্রকাশ্যে বা গোপনে দায়ি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন সে-ই ব্যাপারে বক্তব্য চলে এসেছে। একারনে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেখার জন্য লন্ডনে অবস্থানরত তাঁর ছেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরতে চাইলে একদিনের মধ্যে তাঁকে ট্রাভেল পাস দেবে সরকার। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় এ কথা জানিয়েছেন। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বৈরি সর্ম্পক যাচ্ছে বা এদের প্রতি কোনো আস্থা নেই-একারণে তারেক রহমান দেশে ফিরছে না বলে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এমন প্রচারণায় বিরুদ্ধেও তারেক রহমানে সাম্প্রতিক একটি বক্তব্য বেশ ইঙ্গিতবহ। সে-টি হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কর্তক দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়ায়  বিষয়টি। আবার এব্যাপারে প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিবৃতিও অর্থবহ। অর্থ্যাৎ অন্তর্বর্তী সরকারের কারো সাথেই কোনো ধরণের বিরোধ বা মনোমানিল্য নেই তা স্পস্ট করা হয়।  উল্লেখ্য প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস তিনবারের এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিয়মিত স্বাস্থ্যের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজখবর রেখেছেন এবং তাঁর সুচিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সব সহায়তা ও সমন্বয়ে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ প্রদান করেছেন। আর একরণে তারেক রহমান তার সে-ই বিবৃতিতে ড. ইউনূস প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে কুন্ঠা করেননি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। কিন্তু তারপরে তারেক রহমানের দেশে না ফেরা নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা থেমে নেই। 

দেশের না ফেরার কারণ কি...

মায়ের অসুস্থতার মধ্যেও দেশে ফেরার বিষয়ে 'সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়' বলে ফেসবুক স্ট্যাটাসে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। অন্যদিকে সরকারের তরফ থেকেও বাধা নেই। এখন প্রশ্ন তাহলে কি কারণে তিনি আসছেন না? কারে কারো মতে, আপাতত বিদেশে থেকে দল পরিচালনা হয়তো কৌশলগত কারণে ঠিক আছে। কারো কারো মতে, ধরে নেয়া যাক আগামী বাংলাদেশে তারেক রহমান দেশের কর্নধার হতে যাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে ক্ষমতা পাওয়ার আগে সুদুর যুক্তরাজ্যে অবস্থান করে ভবিষ্যতের বিভিন্ন কৌশলগত অংশিদারদের সাথেও অনেক বোঝাপড়া বা সিটিং মিটিং রয়েছে বা এখনো চলমান। এগুলো হয়তবা তারেক রহমানের বর্তমান বেসরকারি মুডে থাকায় কৌশলগত কারণে বাংলাদেশে এসে করা সম্ভব না। যেমনটা দেখা গেছে সে-ই লন্ডনেই অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘ওয়ান টু ওয়ান’ রুদ্ধদ্বার বৈঠক। সে-ই বৈঠকটি তো ঢাকায়ও হতে পারতো? কেনো তা লন্ডনেই হলো? কারো কারো মতে, আগামীতে আরও কয়েকটি বৈঠক সেখানে কোনো কোনো থিংক ট্যাংকের সাথে হওয়ার সিডিউল রয়েছে, যা দেশের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে ওই সিটিং মিটিংগুলো তারেক রহমান বাংলাদেশে চলে এলে সম্ভব না-ও হতে পারে। কেউ কেউ এব্যাপারে এটা-ও মনে করেন যে দেশ পরিচালনায় দক্ষ শাসকরা অনেক ক্ষেত্রে নির্মম বাস্তবতাকেই মেনে নিতে হয়। সেখানে পিতা-মাতা কিংবা স্বামী স্ত্রী সন্তান-সন্ততি প্রতি সহানুভুতি বা মায়া বলে কিছুই থাকে না। সেদিক বিবেচনা নিলে তারেক রহমান সঠিক অবস্থানেই রযেছেন। আরও একটি সুত্র জানায়, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তারেক রহমানের বাংলাদেশে ফিরে আসাটা কারো কারো মতে নিরাপদ ঠেকছে না। ধরে নেওয়া যাক ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সময়মত অনুষ্ঠিত না হওয়ার ক্ষেত্রে ধরণের একটি জটিলতা সৃষ্টি হয়েই গেলো। সেক্ষেত্রে তারেক রহমানের হাতে সে-ই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রয়ের কোনো চাবিই হাতে থাকলো না। তখন কারা কিভাবে এগিয়ে আসবে? দলের নেতৃত্বই বা কার হাতে থ্কবে? আবার নির্বাচনের আগে তারেক রহমানের দেশের আসাকে কেউ কেউ ইস্যু করে পানি আরও ঘোলা করে ফেলে? এটা-ও হলফ করে কেউ বলতে পারে না। কারো কারো মতে, তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে হয়তবা তা-র ও তার দলের পাশাপাশি আরও অনেকের কৌশলগত কারণ থাকতেই পারে এটাই স্বাভাবিক,যেখানে আবেগ কাজ করে না। তবে এত্তোসব মাথায় রেখে তারেক রহমান দেশের আসার ক্ষেত্রে কি সিদ্ধান্ত নেবেন তা সময় বলে দেবেন। তবে নেতিবাচক প্রচার-প্রপাগান্ডা ঠেকিয়ে দেশে না ফেরার সিদ্ধান্তেই-বা তিনি কতটা স্থির থাকবেন তা-ও এখন দেখার বিষয়। 



 

শেয়ার করুন