০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১০:১৩:৫৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


কত শক্তিশালী বিজনেস সিন্ডিকেট?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৯-২০২৩
কত শক্তিশালী বিজনেস সিন্ডিকেট?


ব্রিকস সম্মেলন থেকে ফিরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘কত শক্তিশালী বিজনেস সিন্ডিকেট’ তিনি দেখে নেবেন। তিনি আরো বলেছেন, যদিও বিজনেস সিন্ডিকেটকে কিছু করা যাচ্ছে না, এই কথা বাণিজ্যমন্ত্রী বলে থাকে, তাকেও ধরা হবে। এমন কথার বিপরীতে বিনীতভাবে প্রশ্ন করতে চাই, তিন টার্মে ধারাবাহিকভাবে ১৫ বছর দেশ পরিচালনার নেতৃত্বে থেকেও কেন প্রধানমন্ত্রী বিজনেস সিন্ডিকেটদের চিহ্নিত করে ওদের গুঁড়িয়ে দিলেন না? কেন সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, মরিচ, লবণ, চিনির বাজারসহ নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির। কেন নুন আনতে পান্তা ফুরানো নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে দরিদ্র, হতদরিদ্রের নাভিশ্বাস উঠে যায় বাজারে গেলে, নিত্যদিনের সংসারের খরচ মেটাতে।

দেশের কৃষক সমাজ কিন্তু প্রতিনয়ত বাম্পার ফসল ফোলাচ্ছে। দেশে অধিকাংশ পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। সাড়া দেশে পণ্য সরবরাহের জন্য নির্ভরযোগ্য অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। দেশের যোগাযোগব্যবস্থা এখন উন্নত। গ্রামগঞ্জের প্রতিটা হাটবাজার থেকে কৃষকের ফসল এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে অনায়াসেই পরিবহন করন সহজ। কিন্তু এখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকার ঘনিষ্ঠ মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ভোক্তাদের নিদারুণ কষ্টে ফেলা হচ্ছে। ইদানীং ডাব, ডিমের মূল্য আকাশ ছুঁয়েছে। যখন যে জিনিসের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায় মানুষের, তখনই অসাধু চক্র সেটার দাম বৃদ্ধি করছে। যেমনটা দেশব্যাপী ডেঙ্গুজনিত কারণে ডাব একজন রোগীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য। ব্যাস। এবার ডাবের বাজারে আগুন। যে ডাব কোনোদিন ১২০ টাকার ওপর বিক্রি হয়নি। সে ডাব ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এখনো হচ্ছে। ছোট আকারের ডাব যেখানে ৫০, ৬০ টাকায় বিক্রি হতো। সেগুলো ১২০ টাকার নিচে নেই। 

ডিমের বাজার দীর্ঘদিন থেকেই অস্থির। এ নিয়ে দেনদরবার কম হয়নি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ডিমের বাজারে আগুন। এখানেও কারসাজি। কারণ ডেঙ্গু ছাড়াও মাছ-মাংসের বাজার অস্থির, বিধায় মানুষ ডিমের দিকে ঝুঁকছে। ব্যাস। ডিমে নজর অসাধু ব্যবসায়ীদের। ডিমের ডজন ১৬০ থেকে ১৭০। 

মানুষ একসময় নিজেকে কিছুটা দুর্বলভাবে উপস্থাপন করতে বলে থাকতেন, কী আর খেতে পারি, আলুভর্তা আর ডাল। কিন্তু সেই আলুর বাজারে আগুন। কারণ আলুর কেজি ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা। অথচ আলুর এমন দাম কখনই দেখা যায়নি। দেশে আলু উৎপাদন বাম্পার। এরপরও আলুতে এমন কারসাজি। শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারেই নয়। প্রচুর দাম বাড়ানো হয়েছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধেরও। প্রায় প্রতিটা ওষুদের দাম অনেক বেড়েছে, যা ক্রয়ে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। এমন রেফারেন্স দেওয়া হলে লেখা শেষ হতে চাইবে না। এটা ঠিক, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানিকৃত জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সেটার পরিমাণ রয়েছে। মাত্রাতিরিক্তটা মানুষ ঠাহর করতে পারে। তাছাড়া নিজ দেশে উৎপাদিত পণ্য পরিবহনে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি কিছুটা বাড়ানো স্বাভাবিক। কিন্তু বাজারের দামের সঙ্গে ডিজেল ও পরিবহন খরচ যোগ করেও যেটা বৃদ্ধি করা হয়েছে, সেটা অযৌক্তিক। মানুষ সেটা বুঝতে পারে অনায়াসে। 

প্রধানমন্ত্রী দিনরাত নিরবচ্ছিন্নভাবে কঠোর পরিশ্রম করছেন দেশের মানুষের জীবনযাত্রা স্বস্তিদায়ক করার জন্য। কিন্তু তার ব্যর্থ মন্ত্রী সাংসদরা কেন সিন্ডিকেটদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না?

দেশ এখন ডিজিটাল। কেন উৎপাদক এবং ভোক্তাদের মধ্যে উৎপাদনকেন্দ্রসমূহ থেকে ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না? অরুন, উত্তরবঙ্গের চাল উৎপাদনকেন্দ্র থেকে সরকারি উদ্যোগে সরাসরি অধিকাংশ চাল সংগ্রহ করে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ভোক্তা কেন্দ্রে পৌঁছানো যাচ্ছে না? কেন কিছু হাতেগোনা কিছু মাফিয়া সিন্ডিকেটদের হাতে চাল সংগ্রহ, বস্তাবন্দি করে তাদের বিপুল মুনাফা লাভের অবারিত সুযোগ দেওয়া হচ্ছে? এখন দেশে কিন্তু মৌসুমে পেঁয়াজ, মরিচ, আদা, রসুনের বাম্পার ফলন হয়। কেন এগুলো সরকারি উদ্যোগে সংগ্রহ করে বিপণন এবং বর্ষা মৌসুমে বাজার সহনীয় রাখা হচ্ছে না? কেন সঠিক সময়ে প্রয়োজনে ভারত থেকে আমদানির স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না? 

প্রধানমন্ত্রী যেভাবে হুমকি দিলেন সিন্ডিকেট কত শক্তিশালী তিনি দেখতে চান। ভালো  কথা। মানুষ এ কথায় খুবই আশ্বস্ত হয়েছেন নিশ্চয়ই। কিন্তু সিন্ডিকেটের যারা পৃষ্ঠপোষক তারা সরকারের আশপাশে নেই নয় কী? সরকার আন্তরিকভাবে চাইলে ১০-১৫ দিনের মধ্যেই সিন্ডিকেট গুঁড়ো করে ভোক্তাদের জন্য স্বস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব। আমি বাজার ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার জন্য মন্ত্রী বা সংশ্লিষ্ট কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে শুনিনি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অগ্নিমূল্যের জন্য সাধারণ মানুষ নিদারুণ কষ্টে আছে। তৃণমূলের কৃষক বা উৎপাদক কিন্তু ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। অথচ লুটেরা সিন্ডিকেট চুটিয়ে ব্যবসা করছে। অনেককেই বলতে শোনা যাচ্ছে, কিছু আমলা-মন্ত্রী-সাংসদ সিন্ডিকেটের পৃষ্ঠপোষকতার সঙ্গে জড়িত, এটা সরকারপ্রধানের কাছে অবশ্যই খবর আছে। 

আশা করি, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে অচিরেই সিন্ডিকেটের হাত গুঁড়িয়ে দেবেন, যাতে ভোটের আগে মানুষ অন্তত স্বস্তির সঙ্গে আস্থা রাখতে পারে।

শেয়ার করুন