০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১০:১৫:২৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


সব যেন কাগজপত্রেই সীমাবদ্ধ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-১০-২০২৩
সব যেন কাগজপত্রেই সীমাবদ্ধ বক্তব্য রাখছেন মন্ত্রী এম এ মান্নান


জলবায়ু পরিবর্তন একটি বাস্তবতা। আমরা যত আন্তর্জাতিক সম্মেলন, চুক্তি ইত্যাদি দেখছি, কিন্তু সত্যিকারের কোনো সমাধান আমরা দেখতে পাচ্ছি না। সব যেন কাগজপত্রেই সীমাবদ্ধ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাসকরণে উন্নত রাষ্ট্রগুলোর প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে এগিয়ে আসা জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তনের পটভূমিতে ভূমির মালিকানা সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে গত ১০ অক্টোবর মঙ্গলবার গুলশানে একটি হোটেলে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে এসব বক্তব্য উঠে আসে।

“জলবায়ু পরিবর্তনের পটভূমিতে মূলধারার আলোচনায় ভূমি অধিকার- তৃণমূলের দৃষ্টিভঙ্গি” বিষয়ক এই আঞ্চলিক সম্মেলনটি ঢাকা ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হবে ১১ অক্টোবর। এ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হলো জলবায়ু পরিবর্তন আলোচনায় ভূমির অধিকারের গুরুত্বের উপর বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর বোঝাপড়া এবং বিশ্লেষণ তৈরি করা। সম্মেলনের মূল উপসংহার এবং সুপারিশগুলি নিয়ে একটি যৌথ বিবৃতি তৈরি এবং প্রচার করা।

গ্রামীণ দরিদ্র মানুষেরা যাদের জমির মালিকানার অধিকার দুর্বল বা একেবারেই নেই তারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাবের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এরকম একটি পরিপ্রেক্ষিতে এশিয়ান এনজিও কোয়ালিশন ফর অ্যাগ্রেরিয়ান রিফর্ম অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট (এএনজিওসি) এবং অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্বব্যাপী দৃশ্যমান। এটা কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের ৫০ শতাংশের বেশি মানুষের জীবনজীবিকা ভূমির সাথে সংশ্লিষ্ট। বর্তমান সরকার ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করার পাশাপাশি ভূমি সংস্কারে আইন পরিবর্তন, নতুন আইন প্রণয়নসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু ভূমি নিয়ে যে সমস্যা চলমান আছে তা থেকে বের হওয়া খুবই কঠিন। ভূমিহীন মানুষের পক্ষে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য যথেষ্ট কাজ করার সুযোগ এখনও রয়েছে। হাজার বছরের পুঞ্জিভূত ভূমি অপরাধ নিরসনে সরকার ও বেসরকারি সংস্থাকে এক সাথে কাজ করতে হবে।”

সূচনা বক্তব্যে এনগক এর নির্বাহী পরিচালক নাথানিয়েল ডন মার্কেজ বলেন যে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঘনঘন সংঘটিত তীব্র প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভূমির অবক্ষয়, ভূমিহীনতা এবং সম্পদহানি ঘটছে। ফলে গ্রামীণ দরিদ্র মানুষ স্থায়ী নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। তাই, জলবায়ু কর্মের লক্ষ্য এবং প্রতিশ্রুতি অর্জনের জন্য ভূমির মেয়াদের নিরাপত্তা অপরিহার্য।

ইয়ান ফ্রাই, জলবায়ু পরিবর্তন প্রেক্ষাপটে মানবাধিকারের প্রচার ও সুরক্ষা বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত, এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে একটি ভিডিও বার্তা দেন। তিনি এই বার্তায় প্রান্তিক মানুষের ভূমি অধিকার তথা মানবাধিকার সুরক্ষা দেয়ার প্রতি সকলকে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “নি:সন্দেহে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের জন্য একটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এর একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ৪২.৬ শতাংশ বন্যা, ৪০.৭ শতাংশ ঘুর্ণিঝড়, এবং ৮২.৬ শতাংশ জলবায়ু সম্পর্কিত বিভিন্ন বিপর্যয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে শীর্ষ ১০টি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন যে ভূমির ব্যবহার ও মালিকানাসংক্রান্ত জটিলতাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে যুক্ত। প্রান্তিক মানুষের জমি না থাকলে তাদের জীবন অনিশ্চিত। একটি নিরাপদ ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা পাওয়ার জন্য প্রতিটি প্রান্তিক মানুষের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।

উদ্বোধনী অধিবেশনের সভাপতি খুশি কবির বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন একটি বাস্তবতা। আমরা যত আন্তর্জাতিক সম্মেলন, চুক্তি ইত্যাদি দেখছি, কিন্তু সত্যিকারের কোনো সমাধান আমরা দেখতে পাচ্ছি না। সব যেন কাগজপত্রেই সীমাবদ্ধ। যে সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে তা কি আদৌ বাস্তবায়িত হচ্ছে? বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র বিশেষ করে উন্নত রাষ্ট্র যত প্রতিশ্রুতিই দিক না কেন জলবায়ু পরিবর্তনে তাদের যে উদ্যোগ তা দেখে মনে হয় না যে এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার কোনো সদিচ্ছা আছে।”

শুভেচ্ছা বক্তব্যে এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, এই সম্মেলনটি কোন একাডেমিক অনুশীলন নয়, বরং এটি দেশের সরকারের প্রতি একটি বাস্তবসম্মত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান। যারা নিরাপদ ভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যারা বাড়িঘর, জীবিকার উৎস হারিয়ে দারিদ্রের প্রান্তিকতায় দাঁড়িয়ে তাদের প্রতি আরও মানবিক হওয়ার জন্য আমরা ঝুঁকিপূর্ণ সকল দেশগুলোর সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

এই আয়োজনে আরো যারা সহায়তা করেছে সে সব সংস্থাসমূহ হলো গ্লোবাল ফোরাম অন এগ্রিকালচারাল রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন, গ্লোবাল ল্যান্ড টুল নেটওয়ার্ক এবং ল্যান্ড পোর্টাল ফাউন্ডেশন। এছাড়াও উদ্বোধনী পর্বে অনলাইনে যুক্ত থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন জিএফএআর এর নির্বাহী সচিব হিলডেগার্ড লিংনাউ এবং জিএলটিএন এর সচিব রবার্ট লুইস লেটিংটন। দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর অ্যামেরিকা ও প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রায় ৮টি দেশের ১৪ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। পাশাপাশি জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায় থেকে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন এই সম্মেলনে।

শেয়ার করুন