হানিফ সংকেত। একাধারে তিনি উপস্থাপক, পরিচালক, লেখক ও প্রযোজক। প্রায় দুই যুগ ধরে তিনি বাংলাদেশের দর্শককূলকে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি এর মাধ্যমে আনন্দ দিয়ে যাচ্ছেন। সাম্প্রতিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তার ছেলে-মেয়েও স্ত্রী সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে ছিলেন। শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ছেড়ে পালানোর পর বিজয়ও এসেছে আন্দোলনের। এ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির
প্রশ্ন: আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিজয়ের মাধ্যমে হাসিনার বিদায় হয়েছে। বিষয়টাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
হানিফ সংকেত: কেউ যখন নিজের কাজের জন্য কাউকে জবাবদিহি করতে চান না। তখন তার মাঝে এক ধরনের দম্ভ চলে আসে। আর দম্ভের পরিণতি এমনই হয়। আর এ জন্য এই তরুণ প্রজন্মকে অভিনন্দন জানাই। ৫২, ’৬৯ ও ’৯০-এর মতো ’২৪ সালেও গণআন্দোলনেও নেতৃত্বে ছিল ছাত্ররা। কখনোই ছাত্রদের আন্দোলন পরাজিত হয়নি। এবারও ছাত্ররা সেটা প্রমাণ করে দেখিয়েছে।
প্রশ্ন: কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের প্রতি অভিভাবদের সমর্থন ছিল। আপনিও কি সন্তানদের আন্দোলনে ছিলেন?
হানিফ সংকেত: কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রথম থেকেই আমার ছেলে ও মেয়ে নিয়মিত মিছিলে ছিলো। অভিভাবক হিসেবে আমার স্ত্রীও সন্তানদের সঙ্গে ছিলেন। আমার প্রতিষ্ঠান ফাগুন অডিও ভিশনের কর্মীরাও আন্দোলনের পাশে ছিলেন। কদিন থেকে ঘুমাতে পারছি না। নানা এলোমেলো স্মৃতি, চিন্তা মস্তিষ্ককে ক্রিয়াশীল করে রাখছে। হৃদয় কেঁদে ওঠে, ঘুম আসছিল না। আর আমি সব সময় নীরবে কাজ করি, প্রচারের জন্য নয়।
প্রশ্ন: আন্দোলনে সফলতা আসার আগে অনেকগুলো প্রাণ ঝরে গেছে। এদের ব্যাপারে কি বলবেন?
হানিফ সংকেত: যাঁদের প্রাণের বিনিময়ে আমাদের বিজয় হলো, তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি এবং এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই।
প্রশ্ন: শুরুতে কি ভেবে ছিলেন এই আন্দোলনে সরকার পতন হবে?
হানিফ সংকেত: আমি মোটামুটিভাবে আমাদের দেশ সম্পর্কে নিরাশ হয়ে গিয়েছিলাম- হবে না, কিছুই হবে না। কিন্তু এবার আমাদের এই তরুণ সমাজের উত্থান দেখে চমকে গেছি। তাদের দেশপ্রেম বলি, স্পৃহা বলি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার যে মানসিকতা, সেটা দেখে নিজের ভেতরে আবার আশার সঞ্চার হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে, এ দেশ ঠিকই ঘুরে দাঁড়াবে।
প্রশ্ন: হঠাৎ করে তরুণদের মাঝে এমন পরিবর্তনের কারণ কি বলে মনে হয় আপনার?
হানিফ সংকেত: বাঙালির বিদ্রোহী মনোভাব আছে অনেক আগে থেকেই। বাইরে থেকে যত নিরীহ আর শান্তই মনে হোক, বাঙালির ভেতরে রয়েছে এক জ্বলিত ইস্পাত। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে সে তার স্বাক্ষর রেখেছে। ব্রিটিশ আমলে ফকির বিদ্রোহ, সন্ন্যাস বিদ্রোহ, তিতুমীরের বিদ্রোহ, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, অনুশীলন সমিতি, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন এবং পরবর্তী সময়ে বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, নকশাল আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান এসব তার প্রমাণ। ব্রিটিশকে প্রথমত কলকাতা-ছাড়া ও পরে ভারতছাড়া করেছিল মুখ্যত বাঙালিরাই। সুতরাং তরুণদের এই পরিবর্তনটা ঐতিহাসিক ভাবেই হয়েছে।
প্রশ্ন: আগামীর বাংলাদেশকে কেমন দেখতে চান?
হানিফ সংকেত: আমি একটি গণতান্ত্রিক সরকার দেখতে চাই; যা হবে নিরপেক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত; যারা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। যাদের মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর বাংলাদেশ পাব। বিশেষ করে বৈষম্যে মুক্তির বিষয়টি সামনের দিনগুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে। সেই সঙ্গে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের একটি কার্যকর ব্যবস্থা কায়েমের উদ্যোগ নিতে হবে।