এখন নিউইয়র্কে মিডিয়ায় নানা ধরনের বিজ্ঞাপন দেখি, অল্প খরচে ভালো সার্ভিস, অল্প দামে ভালো খাবার, অল্প খরচে সেরা ওমরা প্যাকেজ ইত্যাদি ইত্যাদি। কোয়ালিটি সার্ভিস বা কোয়ালিটি খাবার দেবেন তা সস্তা কীভাবে হয়, তা আমার মাথায় আসে না। কোয়ালিটি এবং সস্তা দুটি বিপরীত মেরুর জিনিস। আমাদের মনে রাখতে হবে সে প্রবাদটা-‘চিপ ইজ নট গুড অ্যান্ড গুড ইজ নট চিপ’ (cheap is not good and good is not cheap)।
এটি ব্যাখ্যা করা যায়, বাংলা ভাষার তিনটি বর্ণমালা দিয়ে। এ গুলো হচ্ছে-আ, আ এবং আ। প্রথম আ-তে হচ্ছে আনন্দ, দ্বিতীয় আ-তে আহাম্মকি এবং তৃতীয় আ-তে আফসোস। মোদ্দাকথা, সস্তায় জিনিস কিনলে ঠকার সম্ভাবনাই বেশি। একটা উদাহরণ দিই। বাজারে গেলেন ইলিশ মাছ কিনতে। সব দোকানে ইলিশের দাম চাইছে ৩০০ টাকা। অন্য দোকানে একই মাছ দাম হাঁকলো ১৫০ টাকা। সস্তা দেখে আপনি তাই কিনলেন। আর মনে মনে ভাবলেন জিতেছি আজকে। সেটা বহন করে নিয়ে গেলেন বাড়িতে। গিন্নী কাটতে গিয়ে দেখলেন মাছটি পচা। শেষ পর্যন্ত ফেলে দিতে হলো। এখন আপনার এই ইলিশ কেনা আ, আ এবং আ-র ফরমুলায় ফেলি। আপনি সস্তায় ইলিশ কিনেছিলেন, এখন তিন অবস্থা কীভাবে হয়েছে একটু দেখি।
প্রথম অবস্থা: সস্তায় ইলিশ কিনতে পেরে আপনার আনন্দ হয়েছিল। এটা হচ্ছে প্রথম-আ। (আনন্দ হয়েছিল ঠিকই, অর্থ কম হলেও খরচ হয়েছে, কিন্তু কাজে আসেনি। অর্থাৎ খেতে পারেননি)।
দ্বিতীয় অবস্থা: সময় ও শ্রম নষ্ট। বাজারে যাওয়া থেকে শুরু করে বাসায় নিয়ে আসা পর্যন্ত আপনার অনেক সময় ও শ্রম নষ্ট হয়েছে। এটা হচ্ছে, আপনার আহাম্মকি। এটা দ্বিতীয়-আ।
তৃতীয় অবস্থা: মানহীন পণ্য হওয়ায় ব্যবহারের অনুপযুক্ত ছিল যেজন্য খেতে পারেননি। এজন্য আপনার আফসোস হয়েছে। এটা হলো তৃতীয়-আ।
এতো যে ভূমিকা টানলাম, তার একটা কারণ আছে। গত ২৯ জুন ফিলাডেলফিয়া থেকে আজাদ আহমেদ (আজাদ ভিশন) একটা ট্যাক্সড করেছে আমাকে। এর বিষয়বস্তু ছিল তারা কয়েকজন পিকনিকে গিয়েছিলেন। পিকনিকের খাবার খেয়ে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়েছে। রাস্তায় আসার সময় বাসেও অনেকে বমি করেছে ইত্যাদি। আসল কথা হলো খাবারটা মানসম্পন্ন ছিল না। আর তাতেই বিপত্তি। এখন পিকনিকের মৌসুম। শহরের প্রায় সব সংগঠনই আয়োজন করছে পিকনিক। এটা অনেকটা ফরজ কাজের মতো। করতে না পারলে ইজ্জত কা সাওয়াল। তারা খাবারের অর্ডার দিতে রেস্টুরেন্টে যান। কোন রেস্টুরেন্ট কত কম দামে খাবার সরবরাহ করবে তা খোঁজেন। অনেক সময় তাদের থেকে স্পন্সরও আদায় করেন। আর যেজন্য স্বাভাবিকভাবেই খাবারে কোয়ালিটি রক্ষা হয় না। আর মানহীন খাবার খেয়ে অতিথিরা অসুস্থ হয়। ব্যাপারটা আমাদের সবার বোঝা উচিত। ভালো জিনিস চাইবো অথচ পয়সা কম দেবো দুটো তো একসঙ্গে হতে পারে না। সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ব্যাপারটা ভাববেন আশা করি।
কম অর্থে কোয়ালিটি ওমরা প্যাকেজ
এবার আসি ওমরা প্রসঙ্গে। টিভি, ফেসবুক এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় অনেক বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। অত্যন্ত কম খরচে ভালো সার্ভিসসহ ওমরা প্যাকেজ। প্রশ্ন হলো হেরেম শরিফের পাশে ভালো হোটেল দিয়ে কি এ টাকায় কোয়ালিটি প্যাকেজ হবে? না, হবে না। যেতে হবে দূরে। নিতে হবে কম দামের হোটেল। এভাবে কি কোয়ালিটি রক্ষা হবে? সেরা প্যাকেজ হবে? যারা যাবেন তাদেরও বুঝতে হবে স্বল্পমূল্য কোয়ালিটি রক্ষা হবে না। এজন্য তাদের মানসিক প্রস্তুতি থাকতে হবে। আর যারা ব্যবসায়ী তারাও জানেন অল্প দামে কোয়ালিটি রক্ষা হবে না, তাহলে কেন এই চটকদার বিজ্ঞাপনের বাহার! এটা কি একধরনের প্রতারণার শামিল নয়?
নিউইয়র্কের কয়েকজন কবি ‘ইদ’ করেছেন, ‘ঈদ’ নয়
এবারে নিউইয়র্কের কয়েকজন কবি ‘ইদ’ পালন করেছেন, ‘ঈদ’ নয়। তারা তাদের ফেসবুক স্ট্যাটাসে ‘ইদ’ বানানটা এভাবে লিখেই স্ট্যাটাস দিয়েছেন। অর্থাৎ ঈদ বানানে ‘ঈ’ না লিখে ‘ই’ বর্ণমালা ব্যবহার করেছেন। অবশ্য তাদের যুক্তিও থাকতে পার। অনেক ছাড় আছে তাদের জন্য। অনেকেই বলেন, কবিরা ব্যাকরণের পেছনে ছোটেন না। বরং ব্যাকরণই তাদের পেছনে ছোটে ইত্যাদি। হতে পারে তারা যেহেতু কবি তারা আর দশজনের মতো নন, তারা ব্যতিক্রমী অনেক কিছুই করতে পারেন। সম্ভবত তাই তারা ১০ জনের ‘ঈদ’ পালন না করে নিজেদের ‘ইদ’ পালন করেছেন।
তাদের কেউ হয়তো-বা বাংলা একাডেমির দোহাই দিতে পারেন। কিন্তু ‘ঈদ’ লেখা যাবে না, লিখতে হবে ‘ইদ’-এরকম কোনো আদেশ কিন্তু বাংলা একাডেমি জারি করেনি। বাংলা একাডেমির অভিধানে দুই বানানই আছে সেই ১৯৯৪ সাল থেকে। বাংলা একাডেমি বাংলা বানান অভিধানে ‘ইদ’ বানানকে সংযোজন করেছে কেবল। ‘ঈদ’ বানানের সংস্কার কিংবা বিয়োজন করেনি! তার মানে দাঁড়াচ্ছে- বাংলাভাষী মুসলিমরা দীর্ঘ এক মাস রমজানের পর যে উৎসব পালন করে, তার নাম ‘ঈদ’ বা ‘ইদ’! অর্থাৎ ‘ইদ’ হলো ‘ঈদ’-এর বিকল্প বানান!
ঈদ বাংলা শব্দ নয়। ঈদ একটি আরবি শব্দ। আরবি শব্দ হিসেবে বানান রীতির দিক থেকে ‘ঈদ’ বানানটি হবে দীর্ঘ ‘ঈ’ দিয়ে। আরবি বানানের উচ্চারণে দীর্ঘ টান ও ছোট টানের প্রয়োগ আছে। এমনকি আরবি ব্যাকরণে একই শব্দ দীর্ঘ টানে উচ্চারণ করলে এক অর্থ দাঁড়ায়, আর ছোট টানে উচ্চারণ করলে সম্পূর্ণ নতুন অর্থের অন্যকিছু বোঝায়। বাংলা এবং ইংরেজি উভয়ের জন্য আরবি ‘ঈদ’ একটি বিদেশি শব্দ। ইংরেজিতে ‘ঈদ’ শব্দটি লেখা হয় ‘Eid’। এখানে ‘ঊ’-এর পর ওই ‘ও’-টা লেখা হয় দীর্ঘ ‘ঈ’ স্বর বোঝানোর জন্যই। আর ইংরেজিতে দীর্ঘস্বর হিসেবেই উচ্চারণ করা হচ্ছে, যেটি বাংলা ভাষায় দীর্ঘস্বর বর্ণমালায় থাকলেও উচ্চারণে নেই!
আমি যদি কারো নাম বদলাই, তা ভুল। এতে তার প্রতি অসম্মান প্রকাশ করা হয়। ঈদ তো একটা উৎসবের নাম। নাম ও ট্রেডমার্ক ইচ্ছামতো বদলানো যায় না। দৈনিক আজাদ পত্রিকা ৫০ বছর চেষ্টা করেছে ইকবালকে একবাল, ইসলামকে এসলাম লিখতে, টেকেনি। ভাষা বেশি ইডিওসিনক্রেসি বা মতাচ্ছন্নতা পছন্দ করে না।
যে ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, তাই সঠিক হওয়া উচিত বলে আমার বিশ্বাস। একে প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মের বাঁধনে বেঁধে নদীর গতিপথ কৃত্রিমভাবে বদলে দিতে চাইলে নদী একদিন স্থবির হয়ে যাবে। তারপর একদিন কালের গহ্বরে হারিয়ে যাবে। অতীতে একই কারণে হারিয়ে গেছে সংস্কৃতের মতো বহু ভাষা। বহু বছর ধরে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিম বাঙালি সম্প্রদায়ের কাছে তাই আজ ‘ঈদ’ কোনো আরবি শব্দ নয়, বরং ধর্মীয় আবেগের প্রিয়জনের স্মৃতিতে মোড়া বাংলা শব্দ। এটাকে কেউ চাইলেই কি বদলে দিতে পারবেন? যারা বছরে দু-একটি বানান নিয়ে আলোচনায় আসতে চান, তাদের কাছে জানতে চাই-চেয়ারের বাংলা হলো কেদারা। ফুটবলের বাংলা হলো পা গোলাকার। এমনি আরো পরিচিত শব্দের বাংলাকরণ আছে। আপনারা কি নিত্যদিনের কাজে তা ব্যবহার করেন?
নিউইয়র্কে লাঠি বিক্রি বৃদ্ধি
নিউইয়র্কে হঠাৎ করেই লাঠি বিক্রয় বৃদ্ধি পেয়েছে। লাঠি মানে কেইন-হাঁটার লাঠি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমাদের কমিউনিটিতে যারা হোম কেয়ারের অর্থ নিচ্ছেন বয়স তাদের অর্থ নিতে অ্যালাও করলেও শারীরিকভাবে তাদের অনেকে হাঁটা-চলায় সক্ষম। তাদের কেয়ার গিভার ছেলে বা মেয়ে প্রতিদিন যখন ক্লক আউট করেন, তখন তাদের কয়েকটি ইনফরমেশন দিতে হয়। যেমন সারা দিন তারা কী কী কাজ করেছে। যেমন হাঁটা বা গোসলে সহায়তা, প্রেশার মাপা ইত্যাদি। সত্যিকার অর্থে অনেকের জন্যই এসবের কিছু করতে হয় না। শুধু করেছি বলে টিক চিহ্ন দিলেই হবে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি হঠাৎ করেই পাল্টে গেছে। মেডিকেড থেকে ইন্সপেক্টররা হানা দিচ্ছে বাড়ি বাড়ি। এখন হোম কেয়ার কোম্পানির পরামর্শে তাদের অসুস্থতার ভান করার জন্য ঘরে লাঠি রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ-ও বলা হয়েছে বাইরে গেলেও যাতে সঙ্গে লাঠি থাকে। বলাতো যায় না, কখন ইন্সপেক্টরের মুখোমুখি হতে হয়! আর এজন্যই অনেকে তাড়াহুড়ো করে লাঠি কিনে তা সঙ্গে রাখছেন বলে জানা গেছে।