২৩ মার্চ ২০২৫, রবিবার, ০৪:৪০:৪৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বাংলাদেশ ও মেক্সিকোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার এদেশে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন আমরা হতে দিব না- আখতার হোসেন সাংবাদিকতা ব্যবস্থাকে সাংবাদিকবান্ধব করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে- মাহফুজ আলম আমাদের যেকোনো মূল্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে- তারেক রহমান প্যারিসে বাংলাদেশ কমিউনিটি মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারে পুরস্কার বিতরণ সংস্কার ও নির্বাচনকে যেভাবে মুখোমুখি করা হচ্ছে তা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক- তারেক রহমান আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই- প্রধান উপদেষ্টা আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবীতে মধ্যরাতে মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানাইলের কারণে ৫৫ হাজার মৃত্যু ট্রাম্পকে থামাতে আদালতকে ভূমিকা রাখতে হবে


চলমান ছাত্র-গণআন্দোলনে ‘সরকার দিশেহারা’- মির্জা ফখরুল
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৭-২০২৪
চলমান ছাত্র-গণআন্দোলনে ‘সরকার দিশেহারা’- মির্জা ফখরুল


কোটা বিরোধী চলমান ছাত্র-গণআন্দোলনে ‘সরকার দিশেহারা’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারের দমনপীড়নের চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ গণবিচ্ছিন্ন সরকার ইতিহাসের নির্মম-বর্বর হামলা ও গণহত্যা চালিয়ে গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে। আন্দোলন দমনে নির্বিচার হত্যা মানবতাবিরোধী অপরাধ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারযোগ্য অপরাধ।”

‘‘ আমরা বলতে চাই, এই নির্লজ্জ সরকার যতই মিথ্যাচার, সাজানো মামলায় নির্বিচারে গ্রেফতার অব্যাহত রাখুক না কেনো, কেনো কিছুতেই ছাত্র গণআন্দোলনে দিশেহারা আওয়ামী সরকার তার পতন ঠেকাতে পারবে না।”

জনসাধারণের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘সুশীল সমাজসহ সকল শ্রেণী পেশার জনগণ যেভাবে সাহসের সাথে সরকারের অন্যায়-অবিচার, গণ-হত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন। তেমনি এর ধারাবাহিকতায় আপামর জনসাধারণের প্রতি আহ্বান থাকবে, আসুন আপনারাও আরও ব্যাপকভাবে রাজপথে নেমে আসুন।”

‘‘ রাজপথে চলমান ছাত্র-গণআন্দোলনে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করে রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে সকল অন্যায়, অবিচারের অবসান ঘটাতে আপনারা সহযোগী হোন।”

অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি, সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার, সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া, সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবিও জানান বিএনপি  মহাসচিব।

‘সরকার যা ইচ্ছা করছে’

বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ গণবিচ্ছিন্ন সরকার আইন, সংবিধান, গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি, মানবিকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে জনরোষ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সুবিধা ও ইচ্ছামাফিক যা ইচ্ছা তাই করছে। এসব করতে গিয়ে তারা রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ছিন্নভিন্ন করে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ও মানবিক চরিত্র গুম করেছে।”

‘‘ গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশ, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনসহ মানুষের সাংবিধানিক অধিকারকে সরকার বর্বর ভাবে নস্যাত করতে যেয়ে একনায়কতন্ত্র এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।”

শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে গিয়ে গুম করা হচ্ছে অভিযোগ করে বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘‘ এখনও অনেক অভিভাবক তার শিক্ষার্থী সন্তানের খুঁজে পাচ্ছে না। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাসরুর হাসানকে ডিবি গত ২৫ জুলাই রাতে তুলে নিয়ে আসলেও তার অভিভাবকরা থানা, ডিবি অফিস, বিভিন্ন হাসপাতালে তার কোনো খোঁজ না পেয়ে গতকাল(মঙ্গলবার) রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করতে আসলে মাসরুরের বাবা ও ভাইকে ডিবি সেখান থেকে তুলে নিয়ে যায়।”

‘‘ এরকম অসংখ্য শিক্ষার্থীদের খোঁজ তাদের অভিভাবকরা না পেয়ে উদ্বিগ্ন, অসহায় অবস্থায় আছেন। আটকের ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতের সামনে হাজির করার আইন থাকলেও ডিবি হেফাজতে ৪/৫ দিন রেখে বেআইনী কাজ করছে গণবিরোধী সরকার। শুধু তাই নয়, আবার আটক না করেই নিরাপত্তার নামে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ডিবি অফিসে তুলে এনে তাদেরকে জিম্মি করে রেখেছে। আইনী ভিত্তি ছাড়াই হেফাজতের কাহিনী নজিরবিহীন।”

‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও পুলিশি হামলা’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ বিবৃতিতে তিনি বলেন, নিজেরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্র লীগ, যুবলীগের ক্যডার দিয়ে গণহত্যা, নৈরাজ্য চালিয়ে নির্লজ্জ সরকার লোক দেখানো রাষ্ট্রীয় শোকের নামে মায়াকান্না করলেও প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখান করে গতকাল যে অভূতপূর্ব লাল ডিজিটাল প্রতিবাদের সৃষ্টি করেছে, তাতে আপামর জনসাধারণের ঐক্য জানান দিয়েছে। জনগন খুনী সরকারের লোক দেখানো রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে গণহত্যার সরকারকে দায়ী করে প্রতিবাদ জানিয়েছে।”

‘‘ আজও ঢাকা, চট্ট্রগাম, রাজশাহী, খুলনা, যশোর, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে 'মার্চ ফর জাস্টিস' কর্মসূচীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ, গ্রেফতার-নির্যাতনকরে বাধা প্রধান করে। আদালত চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা জনগণের সমর্থনে 'মার্চ ফর জাস্টিস' কর্মসূচি পালন করে গণহত্যার বিচার ও গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেছে। শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচি পালনেও সরকার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বাধা প্রদান ও শিক্ষার্থীদের আটক করে এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোক আহত হন। আমরা পুলিশের এহেন কর্মকান্ডের নিন্দা জানাই।”

‘জনগনের বিরুদ্ধে সরকার যুদ্ধ ঘোষণা করেছে’

বিএ্নপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলি চালানোর প্রমাণ থাকার পরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার না করে অপরাধীকে খুঁজে বেড়ানো এবং ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান উপহাস মাত্র। সরকারের নির্দেশেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা নির্বিচারে গুলি করে শত শত ছাত্র জনতার প্রাণ কেড়ে নিয়ে গণহত্যা চালিয়েছে, এটা প্রমাণিত সত্য।”

‘‘ সরকার জনগণের বিরুদ্ধে যেনো যুদ্ধ ঘোষনা করেছে। সরকার নিজেদের রক্ষার জন্য প্রকৃত হত্যাকারীদের না ধরে বিরোধী দলের ওপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ছাত্র গণআন্দোলন বন্ধ করতে রাজনৈতিক সভা সমাবেশ বন্ধ, সান্ধ্য আইন জারী ও সেনাবাহিনী নামিয়ে গণ গ্রেফতার করে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। সরকার  প্রতিদিনই সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার করে রিমান্ডে রেখে নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে।”

তিনি বলেন, ‘‘ প্রতিদিনই মিথ্যা মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসম মিথ্যা মামলায় আসামি কারা, অনেক ক্ষেত্রে মামলার বাদীই জানেন না। মৃত ব্যক্তি, বিদেশী অবস্থান করছেন এমন অনেককেই এসব  মামলার আসামি করা হচ্ছ। এমন মামলায় সাভারের মৃত আজগর আলী, বিদেশে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, সাবেক প্রধান হুইপ জয়নুল আবেদীন ফারুকসহ এমন অনেককে আসামি করা হয়েছে। এমনকি অন্য একটি মামলায় সাত মাস আগে মৃত্যুবরণকারী সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মরহুম ব্যরিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে গতকাল পুলিশ মরহুম আইনজীবীকে গ্রেফতার করতে তার বাসায় হানা দেয়।”

‘‘আন্দোলনের আগে থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত তার স্ত্রীর  চিকিৎসার জন্য দেশের বাহিরে অবস্থান করলেও এবং বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক প্রফেসর ডক্টর মোরশেদ হাসান খান তার ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত  স্ত্রীর চিকিৎসায় ব্যস্ত থাকলেও তাদের বাড়ীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হানা দিচ্ছ। একজন বিচারপতির শিক্ষার্থী ছেলেকেও মিথ্যা মামলায় আটক করে রিমান্ডে নিয়ে হয়রানি নির্যাতন করা হয়েছে। এ ধরনের হয়রানী, নির্যাতনের শত শত ঘটনা আছে, যার বিবরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না। এসব ঘটনা শুধু নির্দয়, অমানবিকই নয়, সরকারের নির্লজ্জ প্রতিহিংসা ও ফ্যসিবাদী চরিত্রের বর্হিপ্রকাশ।”

শেয়ার করুন