১৪ ডিসেম্বর ২০১২, শনিবার, ০৪:৪১:০৫ পূর্বাহ্ন


মাহমুদ রেজার বই আননোন উলানিয়ান নিয়ে আলোচনা
দেশ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১১-২০২৪
মাহমুদ রেজার বই আননোন উলানিয়ান নিয়ে আলোচনা বক্তব্য রাখছেন মাহমুদ রেজা চৌধুরী


গত ২৬ অক্টোবর শাওল হার্ট সেন্টারের কাজল মিলনায়তনে লেখক ও রাজনীতি বিশ্লেষক মাহমুদ রেজা চৌধুরীর সদ্য প্রকাশিত ‘অটোবায়োগ্রাফি অব এন আননোন উলানিয়ান’ গ্রন্থের ওপর এক আলোচনা অনুষ্ঠান হয়ে গেল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের খ্যাতিমান কয়েকজন ব্যক্তিত্ব। উল্লিখিত বইয়ের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে তারা প্রত্যেকেই অত্যন্ত বিনয়ী এবং গভীর সমাজ ও রাষ্ট্র বিষয়ের একজন নীরব কিন্তু আন্তরিক পর্যবেক্ষক আমাদের অনেকের সুপরিচিত মাহমুদ রেজা চৌধুরীর লেখার এবং চিন্তার প্রশংসা করেন। উল্লেখ্য, সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এ জি মাহমুদ বলেন, আপনাদের অনেকের মতো আমি খুব লম্বা সময় ধরে মাহমুদকে চিনি না। কিন্তু খুব অল্প সময়ে ওকে চিনতে পেরে আমার মনে হয়েছে, মাহমুদের লেখার সাহস এবং গভীরতা অনেক বেশি। এ বয়সে ও যেটুকু আত্মমর্যাদা এবং সুনাম অর্জন করেছে, নিঃসন্দেহে আমি বলবো না মাহমুদের সঙ্গে আমার নামের মিল আছে একটা। তবে একটা পার্থক্য আছে, আমি হলাম ছোট মাহমুদ, ও হচ্ছে বড় মাহমুদ। ওর এই বয়সে আমি এতোটা সামাজিক মর্যাদা অর্জন করিনি যা ও করেছে। মাহমুদের পুরো বইটা এখনো পড়া শেষ হয়নি। তবে ওর নিজের ভূমিকা এবং কথাসাহিত্যিক আন্দালিব রাশদীর ভূমিকা পড়ে মনে হয়েছে, এ বইটা আমাকে পুরো পড়তে হবে।

সাবেক সচিব মোকাম্মেল হক বলেন, মাহমুদ লেখে আমাদের অনেকের চাইতে অনেক ভালো। ওর লেখার বড় বৈশিষ্ট্য হলো, বিরতিহীন লিখতে পারা। মনে হয় ও বসলেই লিখে। লেখার ব্যাপারে ওর একটা জন্মগত দক্ষতা আছে, যা সবার থাকে না। ও বলে যেমন সুন্দর লেখে তার চেয়েও সুন্দর।

নাগরিক ঐক্য ফোরামের আহ্বায়ক বিশিষ্ট জাতীয় রাজনীতিবিদ মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আত্মজীবনী লেখার জন্য একটা সাহস এবং সততা প্রয়োজন। রেজা এই গ্রন্থ লিখে ওর সততা এবং সাহসের পরিচয় দিতে পেরেছে। আমার জানা মতে, এ বয়সে আর কারো আত্মজীবনী আমাদের দেশে লেখা আছে কি না আমি জানি না। তিনি বলেন, রেজার লেখার ভাষা খুব সহজ, ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কখনো কথা বলে না বা লিখে না। ও প্রায় একটা কথা বলে, ও রাজনীতি করে না, ওর নামের আগে কোনো বড় উপাধি নেই। আসলে রেজা অনেক রাজনীতিবিদ এবং উচ্চশিক্ষিত অনেকের চেয়ে ও অনেক বড়। ওর তাই অন্য কোনো পরিচয়ের দরকার নেই। ফুল যেমন ফুলের জন্য না, এটা তেমনই রেজার জন্য নয়।

কথা বলেন সমাজচিন্তক, গবেষক এবং শিক্ষক সলিমুল্লাহ খান। সলিমুল্লাহ বলেন, রেজা আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু। আমার বন্ধুত্বের গভীরতা হয় আমি যখন নিউইয়র্কে ছিলাম তখন থেকে। অনেক আলোচক বলেছেন, রেজার গ্রন্থে উলানিয়া সম্পর্কে এমন কিছু বলেনি। আমি বলি, ও তো উলানিয়া সম্পর্কে কিছু বলার কথা না এখানে। বইয়ের নাম উলানিয়া। বাংলাদেশের এই গ্রামে বহু বিখ্যাত পুরুষ ব্যক্তিত্ব জন্মেছেন। বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক নিবিড়। রেজার দাদা ওয়াহেদ রেজা চৌধুরী ভারতের নেহরুর পিতা মতিলাল নেহরুর রাজনৈতিক সচিব ছিলেন। আমাদের সবার পরিচিত আব্দুল গফফার চৌধুরী যার আপন চাচা। এই গ্রামের বিখ্যাত আরো অনেক ব্যক্তিত্ব আছেন। আসাদ চৌধুরী, আতিকুল হক চৌধুরী, বিচারপতি আব্দুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ। কিন্তু তারা কেউ নিজেদের গ্রাম ও জন্মস্থান উলালিয়া সম্পর্কে কিছু বলেননি। কিন্তু রেজা ওর কলমের কালিতে এ ছোট্ট গ্রামটাকে আমাদের অনেকের মাঝে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন এই গ্রামের একজন অপরিচিত ক্ষুদ্র ব্যক্তি হিসেবে। এখানেই রেজার কৃতিত্ব, বিনয় এবং গভীরতা আছে। ও তো অনেক কথা লেখে। ওর পরিচয়কে ও একটা অখ্যাত গ্রামের মানুষ হিসেবে আমাদের কাছে তুলে ধরেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, রেজা আমাদের ডক্টর রেজা না হলেও ও অনেক ডক্টরদের ডক্টর আমাদের বন্ধু মাহমুদ রেজা চৌধুরী। যাকে আমি সব সময় খুবই বিনয়ী দেখি। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় একজন সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে বিনয় যে কত বড় নেতিবাচক হয়ে গেছে আজকের সমাজে। আশা করি, রেজা সেই বিষয়ে আগামী দিনে কিছু লিখবে। রেজার সব লেখাই চলতি সমাজের কথা বলে। এটা ওর লেখার একটা বড় দিক। প্রত্যাশা করি, রেজা আমাদের আরো অনেক গভীর চিন্তার দিকদর্শন দেবে। আমরা না পড়লেও আমি বিশ্বাস করি, আগামী প্রজন্মের অনেকেই রেজার আজকের লেখা নিয়ে গবেষণা করবে। এতো সহজ, এতো বাস্তব, এতো সরাসরি বর্তমান সময়ে আমাদের কেউ লেখে বলে জানা নেই।

বক্তৃতা করেন রাজনীতি বিশ্লেষক ড. সিনহা এম এস সাঈদ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ডক্টর মাহবুবুর রহমান। ডক্টর সিনহা বলেন, রেজার ছাত্র জীবনে আমাদের এস এম হলের বিতর্ক টিমের একজন সদস্য ছিলেন আমার সঙ্গে। আমাদের তৎকালীন হলের প্রভোস্ট বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদ। সেই বিতর্ক টিমে এসএম হলের প্রথম বক্তা হিসেবে রিয়াজ উদ্দিন স্যার রেজাকে নেতৃত্ব দিতে বলেন। কারণ ও বলতো খুব দ্রুত কিন্তু ওর কণ্ঠ এবং বলার ভঙ্গি ছিল অসাধারণ। রেজা দেশ ছাড়ার পর থেকেই বিরক্তিহীন লিখছে গত তিন দশক। এই পর্যন্ত ওর লেখা বইয়ের সংখ্যা ১০টি। রেজার লেখার দক্ষতা এবং অধ্যবসায় আমি বিনয়ের সঙ্গে শ্রদ্ধা করি।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, বিকল্প শুধু রেজা। ওর মতো একটা মানুষ বর্তমান সমাজে বিরল। অসাধারণ বিনয়ী ও হাসিখুশি। সংকটে ওর আত্মদৃঢ়তার পাশাপাশি অলক্ষে থাকা রেজার চরিত্রের একটা বড় দিক। এই গ্রন্থ লিখে রেজা আমাদের সময়ের যে সামাজিক, পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের বিভিন্ন দিকের কথা উল্লেখ করেছে নানাভাবে, এটাকে সার্থক অটোবায়োগ্রাফি বলতেই হবে। ওর লেখাতে আবেগ একটা বিশেষ ভূমিকা কাজ করে, কিন্তু কোনো দুর্বল যুক্তি ওর কোনো লেখায় থাকে না। কোনো বিকৃত সত্য থাকে না, অপ্রিয় সত্য থাকে। আমরা অনেককে সেটা নিতে পারি না, কিন্তু রেজা আমাদের সেগুলো জানিয়ে দেয় নীরবে। রেজার বন্ধুসংখ্যা অনেক। একবার যে রেজার বন্ধু হতে পেরেছে, সে কখনোই রেজার শত্রু হতে পারে না। তবে এই কথা না বললেই নয় যে, যাকে পড়তে বা বুঝতে হলে হুটহাট করে বোঝা বা পড়া যায় না। রেজার লেখা পড়তে হয় খুবই মনোযোগ সহকারে। রেজা যে বিষয়ে লিখে ওই বিষয়ে পাঠকের নিজস্ব কিছু পড়াশোনা বা দৃষ্টিভঙ্গি থাকা চাই। তা না হলে রেজাকে বোঝা যাবে না। আমি অনেকের সঙ্গে একমত রেজা জনপ্রিয় নয়, কিন্তু রেজার আন্তরিকতা, সততা, পড়াশোনা ও দৃষ্টিভঙ্গি অনেক উঁচুমানের। যেসব বিষয় ও লিখে, সেখানে একটা নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখা এবং বলার অনেক কষ্টের। রেজার সেই গুণ আছে। রেজাকে গভীরভাবে দেখলেই সেটা মনে হবে। আমরা রেজার বন্ধু বলতে আজকে আমি ব্যক্তিগতভাবে সম্মানিত মনে করি।

আমরা ওকে না, রেজা তুই আমাদের সম্মানিত করেছিস। আল্লাহ তোর দীর্ঘায়ু দিক। রেজার কোনো লেখা পড়া শুরু করলে শেষ করতেই হয়। তাই অনেক সময় রেজার লেখা চোখে পড়লেও পড়া হয় না। রেজা তুই ক্ষমা করে দিস।

পরিশেষে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতা অনেকেই তাদের মন্তব্য এবং প্রশ্ন করেন রেজাকে। এটা যদিও নিজে একটু ইমোশনাল ছিলেন, তবে দর্শক-শ্রোতার প্রত্যেকের প্রশ্নের খুব সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়েছেন বিনয়ের সঙ্গে।

শেয়ার করুন