বাংলাদেশের সংগীতজগতে এক অবিস্মরণীয় নাম রুনা লায়লা, যিনি ৬০ বছরের সংগীত জীবনে অসংখ্য শ্রোতার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে গানের জগতে পা রাখার পর, এই প্রখ্যাত শিল্পী তার কণ্ঠের জাদু দিয়ে বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পরিচিতি লাভ করেছেন। ১৮টি ভাষায় গান গেয়ে তিনি শুধু সংগীতের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন, বরং বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরেছেন। ১৭ নভেম্বর ৬০তম জন্মদিন উদযাপন করেছেন। এ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির
প্রশ্ন: আপনি সংগীত জীবনের ৬০ বছর পূর্ণ করেছেন। এই দীর্ঘ পথচলায় কেমন অনূভব করছেন?
রুনা লায়লা: ৬০ বছর ধরে সংগীতের সঙ্গে আছি, গান করছি। এটা একটি সফল যাত্রা এবং আমি এখনও গান চর্চা করি। গানের সাধনা করি, কারণ গান আমার আত্মার পরিচয়। সবসময় গান নিয়ে থাকতে ভালোবাসি। তবে এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার পরও প্রথম গানের কথা আমার সব সময় মনে পড়ে। কারণ প্রথম গাওয়া গানটিই তো আমার এই পথচলা শুরু করেছিল। ১৯৬৫ সালে ১২ বছর বয়সে জুগনু ছবিতে প্রথম গান করি, সে হিসেবে বলব, ওই গানটা আমার জীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল স্মৃতি। এটা অন্যরকম এক অনুভূতি।
প্রশ্ন: এত মানুষের ভালোবাসা ও সম্মান কীভাবে অনূভব করেন?
রুনা লায়লা: সবকিছুর জন্য মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা। আল্লাহর মেহেরবানী। মাঝে মাঝে আমি নিজেও ভাবি, এত মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পেয়েছি- এ জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আর এতো দীর্ঘ সময় ধরে শ্রোতাদের ভালোবাসা পেয়েছি, আর সেই ভালোবাসা আমাকে সব সময় শক্তি দিয়েছে। আমি আমার কাজ করে গেছি এবং ভক্তদের ভালোবাসায় নিজেকে সম্পূর্ণ পেয়েছি।
প্রশ্ন: আপনার জীবনে সফলতার পেছনে কীভাবে পরিবারের অবদান ছিল?
রুনা লায়লা: পুরো পরিবারের অবদান রয়েছে। তবে মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। মা আমাকে ছোটবেলা থেকে সবসময় সাপোর্ট করেছেন, বিশেষ করে গান শেখার সময়। বাবা ও মা দু’জনেই আমার পাশে ছিলেন।
প্রশ্ন: আপনি কি কখনও ঈর্ষার শিকার হয়েছেন? যদি হয়ে থাকে, তা কিভাবে মোকাবিলা করেছেন?
রুনা লায়লা: ঈর্ষা তো আসলে সব ক্ষেত্রেই হয়, আমার ক্ষেত্রেও হয়নি যে তা নয়। তবে কারও সফলতায় আমার কখনো ঈর্ষা হয়নি। আমি আমার কাজের ওপর মনোযোগ দিয়েছি এবং কখনো নেতিবাচক মন্তব্য করিনি। ঈর্ষা শুধু আমার দেশে নয়, বিদেশে অনেক শিল্পীর কাছ থেকেও শুনেছি। আমি সবসময় নিজের কাজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী থেকেছি।
প্রশ্ন: জীবনে কোনো ভুল বা অনুশোচনা আছে কি, যা আপনি মুছে ফেলতে চান?
রুনা লায়লা: অতীতের ভুলগুলো নিয়ে আমি চিন্তা করি না। একসময় মনে হতো কিছু ভুল করেছি, কিন্তু সেই ভুল থেকেই কিছু বোনাস পেয়েছি। ব্যক্তিগত জীবনে অনেক কিছু অর্জনও করেছি। তাই অতীতের কথা ভুলে গিয়ে বর্তমানে সুখে আছি, শান্তিতে আছি আলহামদুলিল্লাহ।
প্রশ্ন: আপনি নতুন প্রজন্মের সংগীতশিল্পীদের সঙ্গে কিভাবে সহযোগিতা করেন?
রুনা লায়লা: আমি তাদের সঙ্গে মন থেকে সহযোগিতা করি, দেখানোর জন্য নয়। তরুণদের উৎসাহ দিতে চাই, কারণ একসময় তাদেরই বড় হতে হবে। যখন তাদের গান ভালো লাগে, তখন আমি তাদের প্রশংসা করি এবং উৎসাহিত করি।
প্রশ্ন: আপনার মেয়ে তানি লায়লা কেমন আছে। উনি কি আপনার প্রত্যাশার জায়গায় আছেন?
রুনা লায়লা: আলহামদুলিল্লাহ ও অনেক ভালো আছে। আমি কখনো তানির ওপর কোনো চাপ প্রয়োগ করিনি। তানি নিজেই যা করতে চেয়েছে, তা করেছে। সে গান শিখেছে, কিন্তু পেশাদার হিসেবে গান করেনি। সে এখন ভালো আছে, তিন সন্তান, ভালো পরিবার, এবং অনেক সুখী। আমি তার পছন্দের পথেই তাকে ছেড়ে দিয়েছি।
প্রশ্ন: আপনার ভবিষ্যত প্রত্যাশা কী?
রুনা লায়লা: ছোটবেলায় ভাবতাম, মানুষের জন্য কিছু করব। গরিব বাচ্চাদের খেলনা ও খাবার কিনে দেবো। এখনো সেই চাওয়া রয়েছে। মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে আমি সুখী হতে পারি।