ফুরফুরে মেজাজের আছে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী’র নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার সর্বক্ষেত্রে আগে সংস্কারকেই গুরুত্ব দেয়ায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা মনে করেন তারাই কার্যত বিজয়ী হয়েছেন। কারণ হিসাবে তারা মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে সংশ্লিস্টরা আসলে জামায়াতে ইসলামীর পরামর্শ গ্রহণ করেছেন। আর এজন্য খোশ মেজাজে আছে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা । এমন খবর মিলেছে দলটির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীরা সাথে কথা বলে।
কি বলেছে অন্তর্বর্তী সরকার?
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আলজাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, নতুন সংবিধানে সরকারের মেয়াদ চার বছর হতে পারে। কারণ জনগণ দ্রুত এগিয়ে যেতে চায়। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুততম সময়ে নির্বাচন দিতে চায় বলে মন্তব্য করলেও তিনি এর নির্দিষ্ট সময়সীমা জানাননি। তবে তিনি ইঙ্গিত করেন বা তার ধারণাটি পোষণ করে বক্তব্য দেন। আলজাজিরাকে এক সাক্ষাৎকারে উপস্থাপক ড. ইউনূসের কাছে জানতে চান যে পরবর্তী নির্বাচনের দিনক্ষণ-সময় তাঁর মনে কি আছে? আর এর জবাবে ড. ইউনূস বলেন, জনগণ এবং রাজনৈতিক দল যখনই চাইবে তখনই নির্বাচন হবে। তারা যদি বলে, সংস্কারের দরকার নেই, নির্বাচন দিন। তবে তাই হবে। আর তারা যদি বলে যে, সংস্কারের বিরল সুযোগ এ সরকার পেয়েছে, তাহলে তাই হবে। তবে এটা অন্তর্বর্তী সরকার; কোনো স্থায়ী সরকার নয়। স্বাভাবিকভাবে একটা সরকারের মেয়াদ থাকে ৪-৫ বছর।
ভাষণে কি বলেন
এদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আলজাজিরাকে দেয়া সাক্ষাৎকারটি রাজনীতির মাঠে তোলপাড় সৃষ্টি করে। আর এমন আলোচনা আরও ঘি ঢেলে দেয়া হয় ১৭ নভেম্বর রোববার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষনের বক্তব্যে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওই ভাষণেও সাফ জানিয়ে দেন তড়িঘড়ি নির্বাচনের চেয়ে টেকসই সংস্কারে গুরুত্ব দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এব্যাপারটি সম্পন্ন করতে গিয়ে কয়েক মাস পেছালেও ধৈর্য ধারনের আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে সংস্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা হবে। এর পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন, নির্বাচন কবে- প্রশ্ন সরকারের মনেও সারাক্ষণ রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই গঠন হবে নির্বাচন কমিশন। তাদের ওপর বর্তাবে নির্বাচনের দায়িত্ব।
কেন জামায়াতের প্লাস পয়েন্ট
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গঠিত সরকারের ১০০ দিন পূর্তিতে গত রোববার জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার দেয়া ভাষণের এর পাশাপাশি আলজাজিরাকে দেয়া ওই সাক্ষাৎকারের বক্তব্যকে জামায়াতের নেতাকর্মীরা খুবই ইতিবাচকভাবেই নিয়েছেন। কারণ একমাত্র জামায়াতই দাবি করে আসছে আগে সংস্কার। অন্যদিকে জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার দেয়া ভাষণের এর পাশাপাশি আলজাজিরাকে দেয়া ওই সাক্ষাৎকারের বক্তব্যকে বিএনপি ইতিবাচক ভাবে নেয়নি, তা তাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায়ই বোঝা গেছে। অন্তর্বর্র্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যে আশাহত হয়েছেন বলে মন্তব্যই করে ফেলেন পরের দিনে এক অনুষ্ঠানে। এতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অনেকে আশান্বিত হয়েছেন। আমি একটু আশাহত হয়েছি। আমরা আশা করেছিলাম, প্রধান উপদেষ্টা তার সমস্ত প্রজ্ঞা দিয়ে সমস্যা চিহ্নিত করে নির্বাচনের একটা রূপরেখা দেবেন।
অনেকে আশান্বিত?
১৮ নভেম্বর সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির উদ্যোগে ‘মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় অত্যন্ত বিচক্ষণ স্বজ্জন এই রাজনীতিবিদ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আসলে কে আশান্বিত হয়েছেন সরাসরি না বললেও ধরেই নেয়া যায় তিনি কাকে বা কাদেরকে বুঝিয়েছেন। তিনি আসলে তাদের একসময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধীতাকারী জামায়াতে ইসলামীকেই বুঝিয়েছেন। কারণ এটা দিনের মতো পরিস্কার যে, বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়ে দাবি থাকলে জামায়াত ভোটের আগে সংস্কার চেয়ে মাঠ গরম করে রেখেছে। যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই দুই দলের মধ্যে মারাত্মক বাক-যুদ্ধও চলছে। আর এমন উত্তপ্ত সময়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আলজাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারের পাশাপাশি জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণটি যে পুরো জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে গেছে তা স্পষ্ট। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বা তার দল কে বা কারা যে আশ্বান্বিত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন তা রাজনৈতিক অঙ্গনে স্পষ্ট হয়ে গেছে।
জামায়াত আশ্বান্বিত ও ফুরফুরে
আর এসব কারণে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা উৎফুল্ল ও খোশ মেজাজে। কারণ অন্তর্বর্তী সরকার সর্বক্ষেত্রে আগে সংস্কার এবং এর পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে তার সর্বশেষ মতামতটি তুলে ধরেছেন। এমন খবরে জামায়াতের শীর্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মনে করে এটা তাদের রাজনৈতিক বিজয়। তাদের নেতাদের দূরদর্শিতার বিজয়। আর পরাজয় মনে করছে বিএনপি ও তার সাথে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের উদার প্রগতিশীল দলগুলির। জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামী দলটির নেতাকর্মীরা আরো বেশি খুশি ও ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে কারণ কবে কখন নির্বাচন হবে সে ব্যাপারেও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মুখ থেকে এবার কিছু বের হয়নি। জামায়াতে ইসলামী দলটির রাজনৈতিক কৌশুলিরা মনে করেন নির্বাচন যতো দেরিতে হবে, বিএনপি’র বিশাল নেতাকর্মীরা দিনে দিনে মানুষ কেন অসহিষ্ণু হয়ে উঠবে। আর সে পরিস্থিতি জামায়াতে ইসলামী পুরো দেশের সব ধরনের রাজনৈতিক প্রশাসনিক সুযোগ- সুবিধা করায়াত্ত করে ফেলতে পারবে। আর এসব ভেবেই জামায়াত আছে ফুরফুরে মেজাজে।