যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব অর্জন এবং প্রত্যাখ্যানের হার ২০০০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। বিশেষত, ২০০০ সালের পর থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব প্রাপ্তির হার ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে নাগরিকত্বপ্রাপ্তির পাশাপাশি কিছু আবেদন প্রত্যাখ্যানের ঘটনাও ঘটেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট (ডিএইচএস)-এর প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে, ২০১০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি নাগরিকদের নাগরিকত্ব অর্জনের প্রবণতা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়কালে প্রায় ৬০ হাজার ৪৬০ বাংলাদেশির নাগরিকত্বের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হন। ২০১০ সালে নাগরিকত্ব প্রাপ্তির সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৩৫৬ জন, যা পরবর্তী বছরগুলোতে ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। ২০২১ সালে নাগরিকত্বের সংখ্যা ১০ হাজার ১১০ জনে পৌঁছে এবং ২০২২ সালে এটি ১৪ হাজার ১৭৭ জনে দাঁড়ায়। এ সংখ্যা সময়সীমার মধ্যে সর্বোচ্চ।
গত দুই দশকে ন্যাচারালাইজেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব অর্জনের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এ সময়ে কিছু আবেদন প্রত্যাখ্যানের ঘটনাও ঘটেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট (ডিএইচএস) এবং ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস) প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ২০০০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব অর্জন এবং প্রত্যাখ্যানের তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো।
২০০০-২০০৯: ধীরে ধীরে বৃদ্ধি
২০০০ সালে ১ হাজার ৪৮৫ জন বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন। এ দশকের শুরুতে সংখ্যাটি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ২০০১ সালে নাগরিকত্ব অর্জনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৯২০ জনে। ২০০২ সালে এ সংখ্যা ২ হাজার ৪২৬-এ পৌঁছে। এরপর ২০০৩ এবং ২০০৪ সালে প্রায় একই পর্যায়ে থাকে, যথাক্রমে-২ হাজার ২৭৪ ও ২ হাজার ৩১৫ জন। ২০০৫ এবং ২০০৬ সালেও বাংলাদেশি নাগরিকত্ব অর্জনের হার স্থিতিশীল ছিল। এ দুই বছরে মোট ২ হাজার ৩১৫ এবং ২ হাজার ৬৭০ জন বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হন। ২০০৭ সালে সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৭৭০ জনে। ২০০৮ এবং ২০০৯ সালে এই হার আরো বাড়ে। ২০০৮ সালে ৩ হাজার ৩৯ জন এবং ২০০৯ সালে ৩ হাজার ৩৫ জন বাংলাদেশি নাগরিকত্ব অর্জন করেন।
২০১০-২০১৫: আরো বৃদ্ধি ও চ্যালেঞ্জ
২০১০ সালে, বাংলাদেশি নাগরিকত্বপ্রাপ্তির সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজার ৩৫৬ জনে পৌঁছে। তবে এ সময়ে নাগরিকত্ব আবেদন প্রত্যাখ্যানের ঘটনাও ঘটে। ২০১১ সালে নাগরিকত্বপ্রাপ্তির সংখ্যা কিছুটা কমে ২ হাজার ৪৫৬ জনে দাঁড়ায়। ২০১২ সালে ৩ হাজার ৩২ জন বাংলাদেশি নাগরিক হন এবং ২০১৩ সালে এ সংখ্যা বেড়ে ৩ হাজার ৪৮৮ জনে পৌঁছে। ২০১৪ সালে নাগরিকত্বপ্রাপ্তির হার সামান্য কমে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৪০৪ জনে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশি নাগরিকত্বপ্রাপ্তির সংখ্যা পুনরায় বৃদ্ধি পেয়ে ৩ হাজার ৬১৪ জনে পৌঁছে।
২০১৬-২০২০: দ্রুত বৃদ্ধি
২০১৬ সাল নাগরিকত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর ছিল। এ বছর ৪ হাজর ১১৯ জন বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হন, যা আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। ২০১৭ সালে বাংলাদেশিদের নাগরিকত্বপ্রাপ্তির হার সর্বোচ্চ হয়, যা ছিল ৪ হাজার ৬৭৯ জন। ২০১৮ সালে নাগরিকত্বপ্রাপ্তির সংখ্যা কিছুটা কমে ৪ হাজার ৫১৬ জনে দাঁড়ায়। ২০১৯ সালে নাগরিকত্বপ্রাপ্তির সংখ্যা আবার বৃদ্ধি পেয়ে ৪ হাজার ৭০২ জনে পৌঁছে। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে নাগরিকত্বপ্রাপ্তির হার কিছুটা কমে ৪ হাজার ৪৫ জনে দাঁড়ায়।
২০২১-২০২২: উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি
২০২১ সালে, বাংলাদেশি নাগরিকত্বপ্রাপ্তির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ১০ হাজার ১১০ জনে পৌঁছে। ২০২২ সালে এ সংখ্যা আরো বেড়ে ১৪ হাজার ১৭৭ জনে দাঁড়ায়, যা এ সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশি নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যানের কারণ
ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস)-এর মুখপাত্র দেশকে বলেন, ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিকদের নাগরিকত্ব আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার ৬ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে ছিল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রত্যাখ্যানের প্রধান কারণ ছিল যোগ্যতার শর্তপূরণে ব্যর্থতা, যেমন-ভাষাগত দক্ষতা, নাগরিকত্ব পরীক্ষায় ব্যর্থতা, নির্ধারিত সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের প্রমাণ প্রদানে ব্যর্থতা এবং ক্রিমিনাল রেকর্ড বা আইন লঙ্ঘন।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি অভিবাসীদের নাগরিকত্বপ্রাপ্তির হার বিগত দুই দশকে ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশের অভিবাসী সম্প্রদায়ের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি এবং তাদের সফলভাবে নাগরিকত্বপ্রাপ্তির প্রমাণ। যদিও নাগরিকত্বপ্রাপ্তির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তবুও কিছু আবেদন প্রত্যাখ্যান হয়েছে, যার প্রধান কারণ ছিল যোগ্যতার শর্তপূরণে ব্যর্থতা। অতএব, নাগরিকত্বপ্রাপ্তির প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরো সচেতনতা এবং প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এ হার আরো উন্নত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ভবিষ্যতে তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করবে।
২০২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৮ লাখ ৭৮ হাজার ৫০০ নতুন নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়েছে, যা গত দশকের মধ্যে ২৪ শতাংশ নাগরিকত্ব অর্জনকারী জনগণের অংশ। ইউএসসিআইএস কর্তৃক প্রকাশিত এই পরিসংখ্যানগুলোর মাধ্যমে দেশটির নাগরিকত্ব প্রক্রিয়া এবং অভিবাসী জনগণের প্রবণতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা গেছে। নতুন নাগরিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক এসেছেন মেক্সিকো থেকে (১ লাখ ১১ হাজার ৫০০ জন নাগরিক)। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ভারত (৫৯ হাজার ১০০ জন), ফিলিপাইন (৪৪ হাজার ৮০০ জন), ডোমিনিকান রিপাবলিক (৩৫ হাজার ২০০ জন) এবং কিউবা (৩৩ হাজার ২০০ জন)। এ পাঁচটি দেশ মিলিয়ে মোট ৩২ শতাংশ নাগরিকত্ব লাভকারীর মধ্যে রয়েছে। ২০২৩ সালে নাগরিকত্ব লাভকারীদের মধ্যে ৩৯ শতাংশ ছিলেন ৩০ থেকে ৪৪ বছর বয়সী। এছাড়া নাগরিকত্ব লাভকারীদের গড় বয়স ছিল ৪১ বছর। ১৮ শতাংশ নাগরিক ছিলেন ৩০ বছরের নিচে এবং ৩৭ জন নাগরিকত্ব লাভ করেছেন ১০০ বছর বয়সেরও বেশি।