দেশে নভেম্বরে রাজনৈতিক অন্তঃদ্বন্দ্ব সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা যেমন বেড়েছে তেমন বেড়েছে দুষ্কৃতিকারীদের দ্বারা রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিহত হওয়ার ঘটনা। এর পাশাপাশি এই মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা বন্ধ হয়নি।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদন নভেম্বর’ এ সব তথ্য পাওয়া গেছে। এমএসএফ’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। এদিকে মানবাধিকার লংঘনের এই ঘটনাগুলো ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। মানবাধিকার লংঘন প্রতিরোধ ও এর সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক চর্চা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমমর্যাদা ও নাগরিক জীবনে নিরাপত্তার বিষয়গুলোর নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এমএসএফ জোর দাবি জানাচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী নভেম্বরে সময়ে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে, অন্য দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা যৌথ বাহিনীর অভিযানকালে অন্তত চারটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনার পর সাবেক সরকারের মন্ত্রী, সাংসদ, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ আন্দোলন বিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। এ সব মামলায় ঢালাও ভাবে আসামী করে নির্বিচারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, ধর্ষণ কিছুটা কমলেও নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা যেমন; আত্মহত্যা, হত্যার ধারাবাহিকতা রয়েই গেছে, শিশুদের প্রতি শারীরিক নির্যাতন বেড়েছে। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে হুমকি ও হামলা তথা সাংবাদিকতা এবং মত প্রকাশের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার মত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে। কারা- হেফাজতে মৃত্যুর ধারাবাহিকতা রয়েই গেছে। সনাতন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা বন্ধ হয়নি, উপরন্তু তাদের জমাজমি দখলের চেষ্টা হচ্ছে। সীমান্তে হতাহতের মতো ঘটনা অব্যাহত আছে, অপরদিকে মিয়ানমারের সশস্ত্র আরকান আর্মি ও মিয়ানমারের নৌবাহিনী দিন দিন আক্রমাত্মক হয়ে উঠছে। অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার অব্যাহত রয়েছে, গণপিটুনির মত আইন হাতে তুলে নেয়ার ঘটনাও বন্ধ করা যায়নি। অপরদিকে মাজার ও বাউল আখড়ায় হামলার ঘটনা এ মাসে আবার ঘটেছে।
দুষ্কৃতিকারী কর্তৃক নিহতের বিবরণে বলা হয়েছে যে, ৪ নভেম্বর যশোর শহরতলীর খোলাডাঙ্গা গাজীরবাজার এলাকায় দুবৃর্ত্তদের ছুরিকাঘাতে শান্তি-শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও জামায়াত কর্মী আমিনুর সজল মুন্সি (৪২) নিহত হয়। ৬ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় বাড়ির পাশের পুকুর থেকে রেজওয়ান আহমদ (৩০) নামে বিএনপির এক কর্মীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের দাবি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। ১৩ নভেম্বর রাজবাড়ী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তানভীর শেখ (২৩) কে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে। ১৮ নভেম্বর পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর মোড়ে যুবলীগ কর্মী খালেকুজ্জামান মানিককে (৩৬) গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় মুখোশধারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত যুবলীগকর্মী মো. দেলোয়ার হোসেন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ২৫ নভেম্বর নওগাঁ শহরের ইয়াদ আলীর মোড়ে তিন সপ্তাহ আগে সন্ত্রাসীর গুলিতে আহত বিএনপি নেতা আব্দুল মজিদ মারা যান।
২৬ নভেম্বর পিরোজপুরে আওয়ামী লীগ সমর্থন করা এবং দাবি করা চাঁদা না দেওয়ায় কামাল হোসেন চৌকিদার নামে এক প্রবাসীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ২৬ নভেম্বর গোপালগঞ্জের একটি রেস্তোরাঁর আবাসিক কক্ষে ফেরদৌস শেখ (৪৫) নামে এক যুবকের লাশ পাওয়া গেছে। পরিবারের দাবি জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এসএম জিলানীর গাড়িবহরে হামলা ও গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে ফেরদাউস শেখকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে পরিবারের সন্দেহ।