দ্রুত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাবিতে দেশের প্রায় সবদলই বিএনপি’র কাতারে চলে এসেছে। দলটির সাথে অতীতে ফ্যাসিবাদ পতনের আন্দোলনে যুগপতে না থাকলেও দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে তারাও মাঠে নামতে যাচ্ছে। মোট কথা দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে জামায়াত ছাড়া বিএনপি’র সাথে একাকাতারে চলে এসেছে মাঠের সব রাজনৈতিক দল।
নির্বাচন আগে না সংস্কার আগে-এমন বির্তকে একটি রাজনৈতিক দল বিএনপি’কে মাঠে ঘায়েল করার চেষ্টা করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রচারণা চালানো হয় যে সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে তা হবে আত্মঘাতি। আর বিএনপি সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করলে তারা অতীতের সরকারগুলির মতো লুটপাট করবে। আর সেই লুটপাট আর অতীতের মতো দলকে পোক্ত করতেই বিএনপি দ্রুত সংস্কার ছাড়া নির্বাচন চায়। এনিয়ে অনেক সময় বাক-বিতণ্ডা হয়েছে বিভিন্ন টক শো আলাপ আলোচনায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এমন পরিস্থিতিতে দেশে দ্রুত নির্বাচন বা একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার প্রতিষ্ঠা করার দাবি বিএনপি’র একার পক্ষে কষ্টকর হয়ে উঠে।
আলাপ আলোচনায় সমাধান
জানা গেছে এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি প্রথমে তাদের সাথে অতীতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের উদার রাজনৈতিক দলগুলির সাথে আলোচনা চালিয়ে যায়। কেননা তারাও বিএনপি’র পক্ষ থেকে দ্রুত নির্বাচনের দাবির বিষয়ে বেশ দোটানায় ও বিভ্রান্তিতেই ছিল। কিন্তু আলোচনা চালানো হলে ভালো ফল দেয়। যুগপৎ আন্দোলনের বিএনপি সঙ্গীরা এতে বলা যায় রাজি হয়ে যায় যে দ্রুত রাজনৈতিক সরকার না হলে জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে দেশ স্থিতিশীল হবে না। কিন্তু বাদ সাধে মুক্তিযুদ্ধে স্বপক্ষের ইসলামী দলগুলি। তাদের মধ্যে দো-টানা ছিল। তারা একপর্যায়ে দূরত্ব বজায় রাখে। কিন্তু বিএনপির সর্বচ্চো পর্যায় থেকে নির্দেশ আসে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ইসলামী দলগুলি নিয়ে যেনো আলাপ আলাচনা করে একটি সমঝোতায় আসা যায়। এপর্যায়ে বলা চলে বিএনপি সফল হয়েছে। কয়েকদিন আগে সর্বশেষ রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সঙ্গে বৈঠক করেছে হেফাজতে ইসলাম। পরে হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ দেবেন, এটা বিএনপির জোরালো দাবি। তাদের সেই দাবির সঙ্গে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ একমত হয়েছে। এর অনেক আগে ন্যূনতম সংস্কার শেষে দ্রুত সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, ইসলামী শরিয়াহবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়াসহ ১০ বিষয়ে একমত হয়েছে বিএনপি ও চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে বাম দল
এদিকে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করার বিষয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাম রাজনৈতিক দলগুলো। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন-ও শুরু করতে চায়। প্রাথমিক কর্মসূচি হিসেবে জনমত তৈরিতে সারাদেশ সফর, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ এবং ঢাকায় বৃহত্তর সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা নিয়ে আলোচনা চলছে। জানা গেলো যে, এ বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার চিন্তাও করছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। বাম গণতান্ত্রিক জোটে রয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলসহ (বাসদ) ছয়টি দল। বাম জোটের নেতারাও মনে করেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থার যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন ততটুকু করেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হোক। তবে এ নিয়ে যে এখন পর্যন্ত সরকারের অবস্থান স্পষ্ট নয় তা বাম দলগুলিও মনে করেন। তারাও মনে করেন সরকার ঠিক কতটুকু সংস্কার করতে চায়, সেটাও স্পষ্ট করছে না। রাজনৈতিক দলগুলো কম সংস্কার চাইলে ডিসেম্বরে, বেশি সংস্কার চাইলে আগামী বছর জুনে নির্বাচন হবে-সরকারের এমন বক্তব্যে আশ্বস্ত হতে পারছে না বামরাও। এমন ধরনের বক্তব্য দিয়ে সরকার কালক্ষেপণ করছে বলে মনে করেন বাম দলের নেতারাও। এদিকে বাম জোটে থাকা দলগুলি ছাড়াও আরো অনেক উদার প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলিও দ্রুত নির্বাচন চায় বলে জানা গেছেন। তারাও আন্দোলনে নামবে বলে সূত্র জানায়।
এখন কী হবে
রাজনৈতিক সূত্রগুলি মনে করেন শুধু মাত্র জামায়াত ছাড়া বিএনপিসহ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের উদার প্রগতিশীল এর পাশাপাশি ইসলামী দলগুলি দ্রুত নির্বাচন চাওয়া দলটির (বিএনপি) জন্য বড় রাজনৈতিক বিজয়। এমন প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন বিএনপি মহাসচিবসহ দলের বেশ কয়েকজন নেতা। বুধবার (১৬ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টা বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দুপুর ১২টায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বুধবারের বৈঠকের পরদিন সংস্কার ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করবে বিএনপি। একারণে তার আগেই প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে বুধবারের বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের জন্য সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ এবং নির্বাচন ঘিরে বিভ্রান্তি দূর করা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এছাড়া নির্বাচন নিয়ে সরকারের মনোভাব কী, তা স্পষ্ট হওয়ার চেষ্টা থাকতে পারে। তবে প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকের আগে রাজনৈতিক মাঠে বাম, ডান ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ইসলামী দলগুলির দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে এক কাতারে চলে আসা বিএনপি’র জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি’র নেতাদের সাক্ষাৎটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ একটি বাড়তি শক্তি হিসাবেও কাজ করবে। নির্বাচন প্রশ্নের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে আলাপ-আলোচনায় বিএনপি’ও আগের চেয়ে একটু বেশি শক্তি পাবে-এমনটাই মনে করেন বিশ্লেষকরা।