ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় প্রেসিডেন্সি শুরু করার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের পোস্টাল সার্ভিস (ইউএসপিএস) বেসরকারীকরণ করার পরিকল্পনা করা জানিয়েছেন। ইউএসপিএস যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম পুরনো এবং গুরুত্বপূর্ণ ফেডারেল সংস্থা। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প এই পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন তার কমার্স সেক্রেটারি হিসেবে মনোনীত হাওয়ার্ড লাটনিকের সঙ্গে। এই আলোচনা মার-এ-লাগোতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ইউএসপিএস দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংস্থাটি প্রায় ৯.৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। মেইল ভলিউম কমে যাওয়া, আগের মতো ব্যাপকভাবে মেইল পাঠানো না হওয়া এবং পার্সেল শিপিংয়ের গতি ধীর হওয়ার কারণে এই ক্ষতি হয়েছে। ইউএসপিএস-এর বার্ষিক আর্থিক রিপোর্টে প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলারের ঋণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর ফলে, ট্রাম্প এই সংস্থার বেসরকারিকরণের জন্য তার প্রশাসনে একটি সম্ভাব্য পদক্ষেপ হিসেবে এটি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
ইউএসপিএস ১৭৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার আগেই শুরু হয়েছিল। ১৯৭০ সালে এটি আর্থিকভাবে স্বনির্ভর একটি সংস্থা হিসেবে পরিগণিত হয়, তবে পরবর্তীতে এটি ক্রমাগত আর্থিক সংকটে পড়ে এবং এর কার্যক্রম চালানোর জন্য সরকারের ভর্তুকি প্রয়োজন হয়। Pew Research Center-এর ২০২৪ সালের জরিপ অনুযায়ী, ইউএসপিএস এখনও সবচেয়ে জনপ্রিয় ফেডারেল সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম, তবে এর দীর্ঘস্থায়ী আর্থিক সংকট নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম প্রেসিডেন্সিতে ইউএসপিএসকে নিয়ে নানা বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। তিনি এই সংস্থার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি, যেমন-কর্মী সম্পর্ক, বড় ক্লায়েন্টদের সঙ্গে সম্পর্ক এবং মূল হার নির্ধারণের ক্ষমতা, ফেডারেল ট্রেজারির অধীনে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলেন। ট্রাম্প ২০২০ সালের নির্বাচনের পূর্বে ইউএসপিএসের মেইল-ইন ভোটিং ব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন এবং অভিযোগ করেছিলেন যে তিনি এজেন্সিকে জরুরি তহবিল অ্যাক্সেস করতে বাধা দিয়েছিলেন। তবে, ওই সময়ে ইউএসপিএস ৯৮ শতাংশ ভোটারের ব্যালট তিন দিনের মধ্যে নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দেয়, যা মহামারির মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য ছিল।
বর্তমানে, ইউএসপিএস-এর বেসরকারীকরণের প্রস্তাবটি ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে। এটি গ্রাহকদের শিপিং সেবা, ব্যবসায়িক সাপ্লাই চেইন, এবং প্রায় ৫ লাখ ফেডারেল কর্মীকে সরকারি কর্মচারী হিসেবে কাজ করতে না দেওয়ার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, ট্রাম্পের প্রশাসন পরবর্তী সময়ে ইউএসপিএস-কে নিয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ট্রাম্প নিজেই বলেছিলেন যে, এজেন্সিটি এখন আর্থিকভাবে টেকসই নয় এবং সরকারি ভর্তুকি না দেওয়ার পক্ষপাতি তিনি নিয়েছেন।
ইউএসপিএস-এর ভবিষ্যত এবং বেসরকারিকরণের সম্ভাবনা আগামী দিনে আরো বড় রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক আলোচনার জন্ম দিতে পারে, বিশেষ করে যখন ফেডারেল কর্মী এবং নাগরিকদের ওপর এর প্রভাব পড়বে।