গত ২৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টারে বিজয় আমার ‘ডিসেম্বর আমার অহংকার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের কর্মসূচিতে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধদিনের স্মৃতিকথা, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সংগঠনের সভাপতি সনজীবন কুমারের সভাপতিত্বে শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন গাইবান্ধা সোসাইটি অব আমেরিকার সাধারণ সম্পাদক রেজা রহমান। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংগঠনের উপদেষ্টা বিপ্লব চাকী ।
‘আগুনের পরশমনি ছোয়াও প্রাণে’ গানটি দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। এরপর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা, দুইবাংলার জীবন্ত কিংবদন্তি রথীন্দ্রনাথ রায়, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত বিশ্বাস ও বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আনোয়ার বাবলু। এ পর্বে সঞ্চালনা করেন ছড়াকার মনজুর কাদের ও বাচিক শিল্পী সাবিনা নীরু। বিশিষ্ট তপন মোদকের পরিচালনায় পন্ডিত কিষান মহারাজ তাল তরঙ্গের একঝাঁক শিশু-কিশোর তবলা সংগত করে। কবিতা আবৃত্তি করেন সাংস্কৃতিককর্মী ও বাচিক শিল্পী স্বাধীন মজুমদার। একক সংগীত পরিবেশন করেন শাহ মাহবুব ও মিলন কুমার রায়।
কাবেরী দাশের পরিচালনায় দলীয় সংগীত উপস্থাপনা করে সংগীত পরিষদ নিউইয়র্ক এবং সুলেখা পালের নেতৃত্বে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্র শাখা। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দীলিপ মোদক ও ফাহমিদা চৌধুরী লুনা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মুক্তি সরকার। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিল বিজয় দিবস উদযাপন উপপরিষদের আহ্বায়ক প্রতীমা সরকার, সদস্য মাহফুজুল ইসলাম তুহিন ও প্রশান্ত সরকার।
যুদ্ধদিনের স্মৃতিকথায় রথীন্দ্রনাথ বলেন, যে আশা-আকাঙ্খা নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, আজও তা পূরণ হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আমাদেরকে আরেকটি ‘মুক্তিযুদ্ধ’ করতে হবে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা অসীম সাহসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম যুগ যুগ ধরে তাদের অবদান অমর হয়ে থাকবে।
স্ব্রুত বিশ্বাস তার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। এ যুদ্ধ শুধু এদেশের স্বাধীন ভূখ- আদায়ের যুদ্ধ ছিল না; এ যুদ্ধ ছিল বাঙালির আত্মমুক্তি ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার। যে যুদ্ধ এখনো আমাদের করতে হচ্ছে।
যুদ্ধদিনের স্মৃতিকথায় খোরশেদ আনোয়ার বাবলু বলেন, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একাত্তরে এদেশবাসী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল একটি শোষণমুক্ত স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা।
বিপ্লব চাকি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যে চেতনাকে সামনে রেখে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম তা যেন এখন আমরা অনেকেই ভুলতে বসেছি। আমাদের সমাজজীবন নানাভাবে কলুষিত হয়ে গেছে। সমাজ জীবনের চরম অবক্ষয় যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। এ অবক্ষয় থেকে বের হতে হলে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে রেজা রহমান বলেন, মানুষ, মানবতা ও মানবাধিকার বাস্তবায়নে আমাদের সংগঠন অভিন্ন বাঙালি জাতিসত্তা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের আজকের আয়োজন।
সভাপতির ভাষণে সনজীবন কুমার উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগিয়ে তুলতে হবে এবং দেশকে সংবিধানের চার মূলনীতির ভিত্তিতে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহিদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। সব শেষে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গেয়ে অনুষ্ঠান শেষ করা হয়।