১৬ জানুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৯:০৭:৫৯ পূর্বাহ্ন


কেন্টের মসজিদে ভাঙচুর : কম্যুনিটিতে আতঙ্ক
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০১-২০২৫
কেন্টের মসজিদে ভাঙচুর : কম্যুনিটিতে আতঙ্ক কেন্ট শহরের ফেডারেল ওয়ে ইসলামিক সেন্টারে মসজিদের জানালায় ভাঙচুর


ওয়াশিংটন স্টেটের কেন্ট শহরের ফেডারেল ওয়ে ইসলামিক সেন্টারে ৪ জানুয়ারি সকালে এক দুর্বৃত্ত কর্তৃক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এক সন্দেহভাজন ব্যক্তি মসজিদের জানালায় পাথর ছুড়ে তা ভেঙে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। শনিবার সকালে একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তি মসজিদের জানালায় পাথর ছুড়ে তা ভেঙে পালিয়ে যায়। সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া এ ঘটনার পর পুলিশ সন্দেহভাজনকে খুঁজছে এবং কমিউনিটি নেতারা এটিকে একটি বিদ্বেষমূলক অপরাধ হিসেবে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগেও এই মসজিদে বারবার চুরির ঘটনা ঘটেছে, যা স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মসজিদ কমিটির সভাপতি আতিফ নাজির বলেন, এটি একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। পুরো কমিউনিটির মধ্যে এটি অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। তিনি জানান, শনিবার সকালে নামাজ পড়তে আসা লোকজন ভাঙা জানালা দেখতে পান। আতঙ্ক প্রকাশ করে তিনি বলেন, আজ এটি ঘটেছে, কাল কী ঘটবে? ফেডারেল ওয়ে ইসলামিক সেন্টার এর আগেও এমন ঘটনার শিকার হয়েছে। গত বছর মসজিদে চুরি হয়েছিল এবং দানবাক্স থেকে অর্থ লুট করা হয়। এর আগে মসজিদে হয়রানির ঘটনাও ঘটেছে। বিশেষত, নামাজের সময় রাস্তায় লোকজন চিৎকার-চেঁচামেচি করেছে এবং অপমানজনক কথা বলেছে। নাজির আরো বলেন, আমরা এই কমিউনিটিতে ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে আছি। আমরা প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছি এবং কমিউনিটির জন্য কাজ করছি।

পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করার চেষ্টা করছে। কেন্ট সিটি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট সতবিন্দর কৌর বলেন, উপাসনার স্থানগুলো যখন লক্ষ্যবস্তু হয়, তা ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত, এটি একটি বিদ্বেষমূলক অপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত। কেন্ট সিটি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট সতবিন্দর কৌর এ ধরনের আচরণকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে অভিহিত করেছেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মসজিদ পরিচালকদের সঙ্গে সমন্বয় করে দোষীকে শাস্তির আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই ঘটনাকে ঘৃণাজনিত অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে তদন্ত চলছে।

ঘটনার পর ভাঙা কাচ সরিয়ে ফেলা হয়েছে, তবে কমিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ঘটনার মানসিক ক্ষতি অনেকদিন ধরে থেকে যাবে। নাজির বলেন, এটি শুধু সম্পত্তির ক্ষতির বিষয় নয়, বরং এটি আমাদের হৃদয়, মন এবং আত্মার ওপর আঘাত করেছে।

কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার-ওয়াশিংটন স্টেট) এ ঘটনাকে একটি বিদ্বেষমূলক অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে তদন্ত করার জন্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। কেয়ার-ওয়াশিংটন স্টেটের নির্বাহী পরিচালক ইমরান সিদ্দিকী বলেন, আমরা স্থানীয়, রাজ্য এবং জাতীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই যে, তারা এ ঘটনার পেছনের বিদ্বেষমূলক উদ্দেশ্য তদন্ত করুক। ভিডিওতে ধরা পড়া ঘটনাগুলো অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ ঘটনার আগে ২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ওয়াশিংটন রাজ্যে একাধিক মসজিদ বিদ্বেষ, ভাঙচুর এবং চুরির শিকার হয়েছে।

ফেডারেল ওয়ে ইসলামিক সেন্টারে ভাঙচুরের এই ঘটনা শুধু সম্পত্তির ক্ষতির বিষয় নয়; এটি একটি সম্পূর্ণ সম্প্রদায়ের হৃদয় ও মানসিকতায় আঘাত করেছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতারা এই ঘটনাকে বিদ্বেষমূলক অপরাধ হিসেবে দেখছেন এবং দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীকে শনাক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। কমিটির সদস্যরা মনে করেন, এটি শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং ধারাবাহিক হয়রানি এবং বিদ্বেষের অংশ, যা সম্প্রদায়ের শান্তি বিঘ্নিত করছে। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এবং এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। ফেডারেল ওয়ে ইসলামিক সেন্টার এবং এর মতো অন্য উপাসনালয়গুলো শুধু ধর্মীয় প্রার্থনার স্থান নয়, বরং সেগুলো কমিউনিটির শান্তি, ঐক্য ও সহযোগিতার প্রতীক। এমন আক্রমণ শুধু সম্পত্তির ক্ষতি নয়, বরং সমাজের নৈতিক ভিত্তিকে আঘাত করে। তাই এ ঘটনার যথাযথ বিচার এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ সবার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শেয়ার করুন