০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:৩০:৫০ অপরাহ্ন


গাঁজার ব‍্যবসা তুঙ্গে!
হাবিব রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০১-২০২৫
গাঁজার ব‍্যবসা তুঙ্গে!


নিউইয়র্কে এখন গাজার ব‍্যবসা তুঙ্গে। ২০২৪ সালে লাইসেন্সধারী গাজার দোকানের সংখ‍্যা ছিল ২৭৫টি। ২০২৫ সালে তা বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে ৬২৫। অবশ‍্য বিনা লাইসেন্সের দোকানের পরিমাণ লাইসেন্সধারী দোকানের চেয়ে বেশি বলে জানা গেছে। ২০২২ সালে গাজা বিক্রির পরিমাণ ছিল ৮৪০ মিলিয়ন ডলার। ২০২৪ সালে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১ বিলিয়ন ডলারে। ধারণা করা হচ্ছে চলতি বছর (২০২৫) সালে গাঁজা বিক্রির পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পেয়ে দেড় মিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে।

নিউইয়র্ক সিটিতে গাজা ব্যবসার সফল উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য মেয়র এরিক অ্যাডামস ২০২২ সালে ৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলারের তহবিল অনুমোদন করেছিলেন। সে সময় নিউইয়র্ক সিটি স্মল বিজনেস সার্ভিস কমিশনার কেভিন কিম বলেন, গাঁজা ব্যবসার জন্য নতুন উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করা হবে। এর মধ্যেই বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। একজন নতুন উদ্যোক্তা কীভাবে এ ব্যবসায় সফল হতে পারেন, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। গাজা ব্যবসা দেখভালের জন্য স্মল বিজনেস বিভাগে একজন নতুন পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার কথাও জানান তিনি। অফিস অব ক্যানাবিস ম্যানেজমেন্ট নিউইয়র্কে এ খাতের তহবিল যোগানের জন্য ২০০ মিলিয়ন ডলার বিতরণেরও ঘোষণা দেয়।

উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটিতে গাঁজার ব‍্যবসা বা গাঁজা সেবন এখন আর অপরাধ নয়। এখন থেকে তা পার্কিং ভায়োলেশনের মতো একটি বিষয়। এক আউন্স পর্যন্ত গাজার জন্য ৫০ ডলার জরিমানা গুনতে হবে। আর এক থেকে দুই আউন্সের জন্য ২০০ ডলারের টিকিট ইস্যু হতে পারে। কিন্তু কোনো গ্রেফতার নয়, না কোনো অপরাধের রেকর্ড। এখন থেকে জনসমক্ষে গাজা সেবন ও বহনকে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে না। নিউইয়র্কের তরুণদের অতীত রেকর্ড থেকেও গাঁজার অপরাধ মুছে ফেলা হবে।

গাঁজা নিয়ে অনেক কথা বললাম। এবার গাঁজা নিয়ে একটি গল্প শোনাই। জঙ্গলে এক চিতাবাঘ সিগারেট খাচ্ছিল। এক ইঁদুর এসে বলল-বাঘ মামা নেশা ছেড়ে দাও। আমার সঙ্গে এসো, দেখো জঙ্গল কত সুন্দর। চিতাবাঘ ইঁদুরের সঙ্গে যেতে থাকল। সামনে হাতি ড্রাগ নিচ্ছিল। ইঁদুর হাতিকেও একই কথা বলল। এরপর হাতিও ওদের সঙ্গে চলতে শুরু করল। কিছুদূর এগিয়ে তারা দেখল বাঘ হুইস্কি খাচ্ছে। ইঁদুর তাকেও একই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে বাঘ-হুইস্কির গ্লাস রেখে ইঁদুরকে কষে এক থাপ্পড় দিলো। হাতি তো অবাক! বললো, বেচারাকে মারলেন কেন? বাঘ : এই বেটা কালকেও গাঁজা খেয়ে আমাকে জঙ্গলে তিন ঘণ্টা ঘুরিয়েছিল।

নিউইয়র্কে বর-কনে প্রদর্শনী!

প্রতি ইংরেজি মাসের শেষ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বর-কনে বা দুলহা-দুলহান সমাবেশ আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন নিউইয়র্ক কাজী অফিসের প্রধান ইমাম কাজী কাইয়‍্যুম। তিনি জানান, উত্তর আমেরিকায় নিউইয়র্ক কাজী অফিসের সফল সেবার ৩৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে সিরিয়াস পিতা-মাতা ও অভিভাবকদের বিশেষ অনুরোধে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।

১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব যে কোনো বয়সের বিবাহ ইচ্ছুক সিংগেল, স্টুডেন্ট, স্ট্যাটাস আছে বা নেই, যে কোনো নারী-পুরুষ তাদের প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা পরবর্তী বিয়ের জন‍্য নির্দিষ্ট ফির বিনিময়ে এক কিংবা একাধিক সমাবেশে অংশ নিতে পারবেন। তারা এই সমাবেশে এসে একই টেবিলে সামনাসামনি বসে ও সরাসরি চোখে চোখ রেখে একজন অন‍্যজনের সঙ্গে খোলাখুলি কথাবার্তা বলে জীবন সাথীকে খুঁজে বের করতে পারবেন। বিস্তারিত জানার জন‍্য ৭১৮ ৪৯৬ ৯৩৭৭ এই নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ‍্য, ইমাম কাজী কাইয়‍্যুম বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের ঘোষণা দিয়ে কমিউনিটির দৃষ্টি কাড়েন। ইতোপূর্বে তিনি মুতা বিবাহ বা কেউ স্বল্পকালীন সময়ে বেড়াতে এলে নির্দিষ্ট সময়কালের জন‍্য তাদের বিবাহ ব‍্যবস্থার ঘোষণা দিয়ে আলোড়ন তুলেন। যদিও পরবর্তীতে তা চালু হয়েছে বলে আর শোনা যায়নি। নিউইয়র্কে অন লাইনে তারাবি পড়ানোর শুরুও তার হাত ধরেই। যতদূর জানা যায় এই লাইনে এখনো তিনি একক।

জ‍্যাকসন হাইটস বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন বা জেবিবিএর তৃতীয় একটি ধারা নিয়ে তিনি বেশ কিছুদিন সোচ্চার ছিলেন। যদিও এই তৃতীয় ধারা ব‍্যবসায়ীদের মধ্যে তেমন সাড়া ফেলেনি। তার এই বর কনে সমাবেশ কতটুকু সফল হয় তা ভবিষ‍্যৎই হয়তো বলে দেবে।

নিউইয়র্কের আদালতেই বিচার হবে আদানির

ঘুষকাণ্ডে অভিযুক্ত ভারতের শিল্পপতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে একই সঙ্গে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা চলবে নিউইয়র্কের আদালতে। গত ৩ জানুয়ারি শুক্রবার নিউইয়র্কের ডিস্ট্রিক্ট জাজ এই নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযোগ, বাজারের চেয়ে বেশি দামে সৌরবিদ্যুৎ বিক্রির সুবিধা পেতে অন্ধ প্রদেশ-সহ ভারতের কয়েকটি রাজ্যের সরকারি কর্মকর্তাদের (যার মধ্যে মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধিরাও রয়েছেন) ঘুষ দিয়েছিল গৌতমের মালিকানাধীন ‘আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেড’ (এজিএল)।

ঘুষের অঙ্ক ২৬.৫ কোটি ডলার (২০২৯ কোটি টাকা)। তিনটি অভিযোগের ভিত্তিতে আমেরিকার ন্যায়বিচার দফতর এবং বাজার নিয়ন্ত্রক এসইসি সংস্থা এসইসি (সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন) যথাক্রমে ফৌজদারি ও দেওয়ানি আইনে অভিযোগপত্র পেশ করেছিল। ফৌজদারি অভিযোগগুলির মধ্যে রয়েছে ১৯৭৭ সালে চালু হওয়া মার্কিন ঘুষবিরোধী আইন ‘ফরেন করাপ্ট প্র্যাকটিসেস আ্যাক্ট’ (এফসিপিএ) লঙ্ঘনের পাশাপাশি সিকিউরিটিজ (শেয়ার এবং ঋণপত্র) সংক্রান্ত এবং ওয়্যার (টেলিফোনসহ বৈদ্যুতিক যোগাযোগ মাধ্যম) ব্যবহার করে প্রতারণার ষড়যন্ত্র। দেওয়ানি আইনেও অভিযোগ আনা হয়েছে শেয়ার এবং ঋণপত্রের বাজারের নিয়ম লঙ্ঘনসংক্রান্ত প্রতারণার।

গত ২১ নভেম্বর নিউইয়র্কের ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে ‘প্রমাণসহ অভিযোগপত্র’ (ইনডিক্টমেন্ট) পেশ করেছিল সংস্থা এসইসি এবং ন্যায়বিচার দফতর। গৌতম, তার ভাইপো সাগর, সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর বিনীত জৈন এবং তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, ঘুষ দিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাজারের চেয়ে বেশি দামে সৌরবিদ্যুৎ বেচার বরাত আদায় করেছিলেন। ঘুষের কথা গোপন করে আমেরিকা ব্যাংক এবং আমেরিকার লগ্নিকারীদের থেকে প্রকল্পের জন্য কোটি কোটি টাকা তোলে এজিএল। যা প্রতারণা। সেই অভিযোগের সারবত্তা মেনে নিয়ে এবার আদানিদের বিরুদ্ধে তিনটি দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার একসঙ্গে শুনানির নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ, আদানিদের এর থেকে ২০ বছর ধরে ২০০ কোটি ডলার (প্রায় ১৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা) মুনাফা করার পরিকল্পনা ছিল।

নিউইয়র্কের ঘটনা নিয়ে বই-হেলপ ওয়ান্টেড

ইউনেস্কোর তালিকা অনুযায়ী প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে অন্তত ২২ লাখ বই ছাপা হয়। ২০২৪ সালেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। সে সব বইয়ের মধ‍্য থেকে আলোচিত কিছু বইয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সাময়িকী ‘দ‍্য ইকোনমিস্ট’। সেই তালিকার সেরা ১০টি বইয়ের চারটির লেখক মার্কিন ঔপন্যাসিক। অ‍্যাডেলে ওয়াল্ডম‍্যানের লেখাএই ১০টির একটি বইয়ের নাম-হেলপ ওয়ান্টেড। চরিত্রে বইটি একটি উপন‍্যাস।

বইটির ঘটনাস্থল নিউইয়র্ক। একটি ‘অন্ধকূপের মতো’ দেখতে গুদাম, কয়েকজন কর্মচারী ও একজন নিয়োগকর্তাকে ঘিরে অতিসাধারণ এক উপন্যাস। কিন্তু উপন্যাসটি সম্পর্কে যখন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, বইটি তার এ বছরের পড়ার তালিকায় ছিল, তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, উপন্যাসটি অসাধারণ।

এই উপন্যাস প্রকাশ করেছে ডব্লিউ ডব্লিউ নরটন।

সেরা দশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের লেখকের অন‍্য তিনটি বই হচ্ছে-

ক্রিয়েশন লেক

জনপ্রিয় মার্কিন ঔপন্যাসিক রেচেল কুশনারের নতুন উপন্যাস ‘ক্রিয়েশন লেক’ নিয়ে এ বছর পাঠকের মধ্যে বেশ সাড়া ছিল। বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল উপন্যাসটি। থ্রিলার ধাঁচের এই উপন্যাসের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে ‘স্যাডি স্মিথ’ নামের একজন গোয়েন্দাকে ঘিরে। ৪১৬ পৃষ্ঠার বইটি পকাশ করেছে স্ক্রাইবনার।

ফায়ার এক্সিট

মার্কিন লেখক মর্গান টালটির উপন্যাস ফায়ার এক্সিট এ বছরের পুরোটা জুড়েই আলোচনায় ছিল। একজন মানুষ তার সম্প্রদায় থেকে নির্বাসিত হয়েছে। সেই হৃদয়বিদারক কাহিনি নিয়েই মর্গান লিখেছেন ফায়ার এক্সিট। উপন্যাসটিতে স্থান পেয়েছে খুন, ভালোবাসা ও সামাজিক বন্ধন।

হাম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই রমরমা উত্থান কি শেষ পর্যন্ত মাতৃত্বের ওপরও প্রভাব ফেলবে? একেবারে একঘরে করে ফেলবে মায়েদের? এমন এক জটিল আশঙ্কাকেই মোকাবিলা করা হয়েছে হাম উপন্যাসে। লিখেছেন মার্কিন লেখক হেলেন ফিলিপস। নিজে একজন নারী বলেই কি মাতৃত্বের সংকট এতো গভীরভাবে তুলে ধরতে পারলেন? উপন্যাসটির ভাষা, এর বর্ণনাভঙ্গি ও উপস্থাপনা সম্পর্কে দ্য নিউইয়র্কার বলেছে, ‘অসাধারণ’।

ঘুরে দেখি নিউইয়র্ক

এই কলামে আমরা মাঝে মাঝে আপনাদের নিউইয়র্কের বিভিন্ন এলাকা বা দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখাতে নিয়ে যাবো। এই পর্বে আপনাদের নিয়ে যাবো ব্রঙ্কসে। ব্রঙ্কস নিউইয়র্ক নগরীর একটি পুরনো জনপদের নাম। যার গোড়া পত্তন হয় ১৬০০ শতাব্দীতে। ৪২ বর্গমাইলের এই জনপদটিতে বাস করে নানা বর্ণ আর ধর্মের প্রায় ১৫ লাখ মানুষ যার ৮০ ভাগ মানুষ এসেছিল পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে। ১৬৩৯ সালে জোনাস ব্রঙ্কো নামের একজন সুইডিস অভিবাসীর নামে এই এলাকাটির নামকরণ হয় ব্রঙ্কস। আর পাশেই আছে বোটানিক্যাল গার্ডেন। ২০০৭ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সোসাইটি ব্রঙ্কস জু’কে নগরীর শ্রেষ্ঠ সবুজ বেস্টিত প্রাকৃতিক এলাকা বলে ঘোষণা দিয়েছে।

নগরীর যে প্রান্তেই আপনি বসবাস করেন ৫ ট্রেন নিয়ে চলে আসুন ব্রঙ্কসে। ইস্ট ১৮০ স্ট্রিট সাবওয়ে স্টেশনে নেমে হাঁটা দূরত্বেই পেয়ে যাবেন ব্রঙ্কস জু। ২৬৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এটি আমেরিকার সর্ববৃহৎ জু। এটি ওয়াইন্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটি দ্বারা পরিচালিত। এতে আছে কঙ্গো গরিলা ফরেস্ট, বাটার ফ্লাই গার্ডেন, উটের যাত্রা, বাচ্চাদের চিড়িয়াখানা ইত্যাদি। চিড়িয়াখানা সাটলে উঠে পুরো জু আপনি ঘুরে দেখতে পারবেন। চাইলে আপনি ঘুরে আসতে পারেন উইলিয়ামস ব্রিজ এলাকা থেকে। জায়গাটি ব্রঙ্কসের উত্তর মধ্যম অংশে। এখানে অনেক বাংলাদেশির বসবাস। আপনার বন্ধুবান্ধব পরিচিত কাউকে পেয়েও যেতে পারেন। নিউইয়র্ক সিটি পার্ক বিভাগের মতে, ১৮০০ শতকে এখানে বসবাসকারী একজন কৃষক উইলিয়ামসের নামে এলাকাটির নামকরণন করা হয়। তার অনেকগুলো কৃষি ফার্ম ছিল গান হিল রোড, হোয়াইট হিলস রোড এবং ব্রঙ্কস নদীর পূর্ব তীরে।

ব্রঙ্কসে এসেছেন পার্কচেস্টারে আসবেন না তা কি করে হয়! সম্প্রতি নিউইয়র্কে যে দু-একটি এলাকা দ্রুত লাইম লাইটে চলে আসছে তার অন্যতম হলো ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার। গত কয়েক বছরে সিটির বিভিন্ন এলাকা থেকে বাংলাদেশিরা এসে এই এলাকায় বসতি গড়ে তুলেছেন। সুসংগঠিত বাংলাদেশিরা ইতিমধ্যে এখানে গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশ সোসাইটি, নিজেদের মসজিদ, মার্কেটসহ নানা প্রতিষ্ঠান। নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল বাংলাদেশি বাণিজ্যিক এলাকাকে স্বীকৃতি দিয়ে এখানে একটি এলাকার নামকরণ করেছে বাংলা বাজার তা দেখতে ভুলবেন না কিন্তু। ঘোরাঘুরি করতে করতে ক্ষুধা পেয়েছে তাহলে ঢুকে পড়ুন খলিল বিরিয়ানিতে। নানা পদের বিরিয়ানি আছে এখানে। হালের ক্রেজ বাইডেন বিরিয়ানিরও টেস্ট নিতে পারেন। বাংলা খাবার খেতে মন চাইছে না? তাহলে পাশের চাইনিজে গিয়ে পছন্দমত খাবার অর্ডার দিন। বাচ্চারা পিজা খেতে চাইছে? তাও কোন সমস্যা নয়। একটু দূরে পিজার দোকানও পাবেন। এখানে হরেক রকম পিজা, বার্গার থেকে বাচ্চাদের পছন্দেরটি বেছে নিতে পারেন। আর সবই হালাল। এখানে ইতালিয়ান হালাল খাবারের দোকানও রয়েছে।

হাতে সময় আছে? তাহলে কাছের অরচার্ড বিচ থেকে ঘুরে আসুন। এটাই ব্রঙ্কসের একমাত্র পাবলিক বিচ। প্রায় সব সময়েই ভিড় থাকে। বিচের পাশ দিয়ে হাইকিংয়ের ব্যবস্থা আছে। বিচের আশপাশে আছে অনেকগুলো রেস্তোরাঁ। সমুদ্রের তাজা মাছের অনেক আইটেম পাবেন ওখানে। টেস্ট করতে পারেন।

দিনটি যদি শনিবার হয়, তাহলে ঘুরে আসতে পারেন ফোর্ডাম প্লাজা থেকে। ওখানে ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বসে নাইট মার্কেট। গ্রামীণ মেলার আমেজ পাবেন ওখানে। নানাবিধ খাবারের পসরা নিয়ে বসে দোকানিরা। পাবেন আরো নানা আইটেম। গান বাজনা তো আছেই। শুধু বাচ্চারা নয় বড়রাও আনন্দ খুঁজে পাবেন। ফেরার পথে ব্রঙ্কসে হোয়াইট প্লেইনস রোডে পড়বে এরাবিয়ান এলাকা। একটু থেমে যান। কেনা কাটা করতে পারেন দোকানগুলোতে। মধ্যপ্রাচ্যের নানা রকম পণ্যসামগ্রীতে ঠাসা দোকানগুলো। পাশেই ছোট বড় নানান আরবীয় রেস্টুরেন্ট। আরবীয় খাবারের টেস্ট নিতে ভুলবেন না যেন!

ইস্তাম্বুল ক্যাফেতে পাবেন নানা স্বাদের চা কফি। মরোক্কান মিন্ট চা একবার খেলে আরো একবার খেতে ইচ্ছে করবে আপনার।

বিশ্বনন্দিত মার্কিন কবি এডগার অ্যালান পোর স্মৃতিবিজরিত বাড়িটি কিন্তু ব্রঙ্কসে। এখানে বসেই তিনি লিখেছিলেন তার বিখ্যাত কবিতা-অ্যানাবেল লী। বিশ্বসাহিত্যে ছোটগল্পের রাজা বলা হয় এডগার এলান পো (১৮০৯-১৮৪৯) কে। আধুনিক ছোটগল্পের জনকও বলেন কেউ কেউ। ছোটগল্পের এই কারিগর নাজিল করেছেন অসাধারণ কিছু কবিতাও। অনেক সমালোচকদের মতেই, এনাবেল লি, তার সেরা একটি কবিতা। কারো কারো মতে, জীবনানন্দ দাশ বনলতা সেন লিখতে গিয়ে এ কবিতা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। রহস্য, রোমা, গোয়েন্দা, ভৌতিক, সায়েন্সফিকশন কত কি-ইনা লিখেছেন তিনি। তিনিই প্রথম আমেরিকান লেখক যিনি লেখাকে পেশা হিসাবে নিতে চেয়েছিলেন। বলাবাহুল্য, তার জন্যে ভোগান্তি কম পোহাতে হয়নি। তার আরেকটি বিশ্বখ্যাত আলোচিত কবিতা ‘দ্য র‌্যাভেন’।

তিনি ছিলেন একাধারে কবি, গল্প লেখক, প্রকাশক, সমালোচক ও গোয়েন্দা গল্পের জনক। যুক্তরাষ্ট্রের রোমান্স আন্দোলনের অন্যতম নেতা। গভীর আবেদনময় কবিতা ও ব্যতিক্রমধর্মী ছোটগল্প রচনা করে শুধু মার্কিন সাহিত্য ভুবনে নয়, বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনেও নিজের জন্য একটি গৌরবমণ্ডিত স্থায়ী আসন নির্মাণ করেছেন তিনি। পো’র বিখ্যাত কবিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘হেলেনের প্রতি’, ‘স্বপ্ন’, ‘ইস্রাফিল’, ‘দাঁড়কাক’, ‘অ্যানাবেল লী’ প্রভৃতি। অ্যালান পো তার বেশ কয়েকটি ছোটগল্পে উল্লেখযোগ্য নৈপুণ্যের সঙ্গে রহস্যময়, ভুতুড়ে, মৃত্যুর গন্ধমাখা, খুনখারাবি ভরা, আতঙ্কতাড়িত পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। গোয়েন্দা-গল্পের ক্ষেত্রেও তার অবদান চিরস্মরণীয়। শুধু জীবনানন্দ দাশ না, চার্লস বোদলেয়ার, স্যার আর্থার কোনান ডয়েল, জুল ভার্ন, এইচ জি ওয়েলসের মতো জগদ্বিখ্যাত লেখকরা পোর লেখা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন।

মৃত্যুর আগে পো একা একা বাস করতেন ব্রঙ্কসের এই ছোট্ট কুটিরে। অনেকেই মনে করেন, সে সময় তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিষণ্ন এবং সাধারণ জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন এক আলাদা মানুষ। ১৮৪৯ সালের ৩ অক্টোবর হঠাৎ তাকে পড়ে থাকতে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরের রাস্তায়। জোসেফ ওয়ালকার নামের এক সহৃদয় ব্যক্তি তাকে ওয়াশিংটন কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। ডাক্তাররা তাকে বাঁচাতে পারেন নি, অনন্তের পথেই যাত্রা করেন তিনি। ঠিক কী কারণে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তার কারণ আজও জানা যায়নি। কেউ কেউ মনে করেন, মৃত্যুর আগে অ্যালকোহলে আসক্ত ছিলেন তিনি। যার কারণে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।

৬ জানুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শেয়ার করুন