০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১০:১৩:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


নানামুখী সঙ্কট, বাড়ছে ক্রমশ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০১-২০২৫
নানামুখী সঙ্কট, বাড়ছে ক্রমশ


প্রেসক্লাবের সম্মুখে রাস্তা এখন দাবী আদায়ের স্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেছে। বিশেষ করে ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে দুই তিন বা ততধিক ভাগে বিভক্ত মানুষ এসে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে দাড়িয়ে চিল্লানো শুরু করে। অমুক দাবী মানতে হবে। অমুক দাবী যৌক্তিক। ১৫ বছর আমরা বঞ্চিত। আমাদের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে- নানা ব্যানারে নানা আন্দোলন।

এ রাস্তায় চলাচলকারীদের অস্থির করে তুলেছে এ সকল দাবী আদায় কারীগন। কখনও এখান থেকে মার্চও হয় প্রধান উপদেষ্টার অফিস, বাসভবন বরাবর। পুলিশ তটস্ত এদের নিয়ে। আরো একটি স্পট রয়েছে, সেটা শাহবাগে। সেখানেও জমায়েতের পর জমায়েত। এর বাইরেও বিভিন্ন পয়েন্টে চলে আন্দোলন সংগ্রাম। অনেকটাই ফ্রী স্টাইলে- চলছে এভাবেই।   


এরা নানা দাবি দাওয়া নিয়ে ওই দুই স্পটের সড়কে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছে ছাত্র ,শিক্ষক , শ্রমিকেরা।  এর ফলে সাধারণ জনসাধারণকে যাতায়াতে নিদারুন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সাত কলেজের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের বিতর্কে নগরীর কেন্দ্রস্থলে চলছে অরাজকতা, শাহবাগ এলাকায় এবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকরা আন্দোলন করেছে বেতন বিষয়ক দাবি দাওয়ায়। বেক্সিমকোর বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিকরা তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছে শিল্প অঞ্চলে, রেলওয়ে শ্রমিক কর্মচারীদের আন্দোলনে দেশব্যাপী রেল যোগাযোগ স্থগিত হওয়ার উপক্রম। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে সকল সমস্যার সমাধান করে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা ক্রমশই দুরূহ হয়ে পড়ছে।


এরই মাঝে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দল এবং সরকারে থাকা ছাত্র প্রতিনিধিদের বাহাস পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করছে। এইধরণের চতুর্মুখি সমস্যার মাঝে আসছে নিবিড় সেচ কাজের সময়, রোজা।  শীতের শেষে আসবে গ্রীস্মকাল। বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে শুরু হয় জ্বালানি বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি ঘোরতর অবনতির অভ্যাস দিচ্ছেন। অভিজ্ঞতার অভাবের কারণে সরকার মৌলিক সমস্যাগুলো সমাধানে সকল অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ করতে পারছে না। দিন দিন সমস্যাগুলো সঙ্কটে পরিণত হয়ে সরকারের গলার কাটায় পরিণত হচ্ছে। ওদিকে আবার ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার জন্য বসে আছে সুযোগ সন্ধানী মহল।


সাত কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের দীর্ঘ দিনের বিরোধ সংঘাতে রূপ নেয়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র ঐক্যে অনেকটাই ফাটল ধরেছে। পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান না হলে ছাত্রদের রাজনৈতিক দল গঠন করে দেশ পরিচালনায় অংশ গ্রহণ প্রক্রিয়া অংকুরেই বিনষ্ট হতে পারে। নিউ মার্কেট ,নীলক্ষেত ,পলাশী , সায়েন্স ল্যাবটারী মোড় সংবেদনশীল এলাকা।  এমনিতেই ঢাকা মহানগরীতে সাধারণ অবস্থায় তীব্র যানজট থাকে। তার উপর মহাসড়কে আন্দোলনকারীরা কারণে অকারণে অবস্থান নিলে গোটা ঢাকা জুড়ে চলাচল বিপর্যস্ত হয়। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের পরিণতিতে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলেও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিরাজমান বৈষম্য বর্তমান পরিস্থিতির মূল কারণ। অন্তর্বর্তীকালীন ছয়  মাস ধরে নানা কথা নানা আস্ফালন শোনা গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়েই গেছে।


সরকার কিন্তু দুর্নীতিবাজ ,খুনি ,লুটেরা ,সম্পদ পাচারকারীদের কারো বিরুদ্ধেই বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারে নাই। অনেকে নানা ভাবে ভোল পাল্টে নতুন সরকারে সুবিধাজনক পদায়ন বাগিয়ে নিলেও চাকুরী ফিরে পায় নি আওয়ামী সরকারের আমলে অবৈধ ভাবে চাকুরীচুত দুর্নীতি দমন কমিশনের সারা জাগানো কর্মকর্তা শরীফ। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অনেক মহা  দুর্নীতির কর্মকান্ড তার সাহসী অনুসন্ধানে প্রকাশিত হয়েছিল। কক্সবাজার অঞ্চলে নানা মেগা প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রনে মহা দুর্নীতি, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে অবৈধভাবে পরিচয় পত্র /পাসপোর্ট প্রদান, কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পনীর গ্যাস সংযোগ প্রদান /চাকুরী প্রদানে দুর্নীতির হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে তৎকালীন সরকারের দুর্নীতি পরায়ণ আমলাদের রোষানলে পড়েছিল শরীফ। পরিবর্তিত সময়ে পরিবর্তিত দুর্নীতি দমন কমিশন তার চাকুরী ফিরিয়ে দিয়ে তার সূচিত মহা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি বলে মনে করে বোদ্ধাজনেরা।

এদিকে বাজারে ভোজ্য তেলের সঙ্কট। হঠাৎ তৈল দিচ্ছেনা ডিস্টিবিউটকারী কোম্পানীগুলো। কারন বলতে পারে না কেউ। সুযোগে দোকানীদের কাছে যে পরিমান তৈল ছিল, সেটা স্টক করে চড়া দামে বিক্রি করছে। মানুষ বিপাকে। সামনে রোজা। এ সঙ্কট নিরসন না হলে রোজায় মানুষ অস্থির হয়ে পড়বে।

মোদ্দাকথা, যত দিন যাবে নিত্য নতুন সমস্যা সঙ্কটে পড়বে সরকার।  সর্বত্র অরাজকতা সৃষ্টি হবে। এমন অবস্থায় অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশী চাপে দ্রুত নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে সরকার। না হলে অচিরেই রাজনৈতিক দল গুলো এবং সামাজিক শক্তি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করলেও বিস্মিত হবো না।

শেয়ার করুন