১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, রবিবার, ০৫:৩৭:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘সহিংসতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার একমাত্র উত্তর ভালোবাসা’ বাংলাদেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালুর সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে- ড. ইউনূস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ৩-দিনব্যাপী ‘তারুণ্যের উৎসব’ সুন্দরবন দিবসের বিষয়ে তরুণ প্রজন্ম কিছুই জানে না! ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন দুবাই পৌঁছেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত সরকার আইয়ামে জাহেলিয়া প্রতিষ্ঠা করে গেছে- ড. ইউনূস মানবাধিকার লঙ্ঘনে শেখ হাসিনা সরাসরি জড়িত- ভলকার টার্ক হজযাত্রীদের সঙ্গে শিশুদের নিতে সৌদি আরবের নিষেধাজ্ঞা


ট্রাম্প ১৭ স্বাধীন পরিদর্শক জেনারেলকে বরখাস্ত করলো
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০১-২০২৫
ট্রাম্প ১৭ স্বাধীন পরিদর্শক জেনারেলকে বরখাস্ত করলো প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প


মার্কিন প্রশাসনে ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজির) ভূমিকা দীর্ঘকাল ধরে সরকারি দুর্নীতি, অপব্যবহার এবং অকার্যকরতা প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনে এই ভূমিকা হুমকির মুখে পড়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন গত ২৪ জানুয়ারি রাতে ১৭ স্বাধীন ইন্সপেক্টর জেনারেলকে বরখাস্ত করেছে। এটি প্রশাসনের ওপর নজরদারি কমানোর উদ্দেশ্যে নেওয়া একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনা এমন সময়ে ঘটেছে, যখন কংগ্রেসের কিছু সদস্য অভিযোগ করেছেন যে, এ পদক্ষেপ ফেডারেল নজরদারি আইন লঙ্ঘনের ইঙ্গিত দেয়। সূত্র অনুযায়ী, বরখাস্তের কার্যক্রমটি শুক্রবার রাতে শুরু হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়। যদিও বরখাস্তের সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত করা যায়নি, একজন বরখাস্ত হওয়া ইন্সপেক্টর জেনারেলের ইমেইলে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রায় ১৭ জনকে সরানো হয়েছে। ২৫ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, এটি খুব সাধারণ একটি বিষয়। আমি এমন ভালো মানুষ নিয়োগ করবো, যারা আরো ভালো কাজ করবে। তবে প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেন যে, এই পরিবর্তন সম্পর্কে কংগ্রেসকে ৩০ দিনের নোটিশ দেওয়া হয়নি, যা আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলক।

২০২০ সালে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দাবি করেছিলেন যে, তিনি আইজিদের বরখাস্ত করার পূর্ণ অধিকার রাখেন এবং সেই অনুযায়ী তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্সপেক্টর জেনারেলকে তাদের পদ থেকে অপসারণ করেন। বর্তমানে ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রশাসনে ফিরে এলে তার আইজিদের প্রতি বিশ্বস্ততার খোঁজ এবং স্বাধীনতার প্রতি হুমকির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, সরকারের এ স্বাধীন তদারকি সংস্থাগুলোর ভূমিকা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা দেশের গণতন্ত্র এবং অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরিষ্কারভাবে বলেছেন যে, তিনি চান ইন্সপেক্টর জেনারেলরা তার বিশ্বস্ত অনুসারী হোক এবং তিনি তাদের স্বাধীন পর্যবেক্ষক হিসেবে দেখতে চান না। তার নির্বাচনী পরিকল্পনায় তিনি জানিয়েছিলেন যে, আমি প্রতিটি ইন্সপেক্টর জেনারেলের অফিসকে স্বাধীন ও তাদের নিয়ন্ত্রিত দফতর থেকে শারীরিকভাবে আলাদা করে দেবো, যাতে তারা ‘ডিপ স্টেট’-এর রক্ষক না হয়ে পড়ে। ট্রাম্প প্রশাসনের এমন অবস্থান তার রাজনৈতিক আস্থাভাজনদের নিয়োগের মাধ্যমে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী, আইজিরা আর সরকারের ভেতরের দুর্নীতি, অপব্যবহার ও দুর্বলতা চিহ্নিত করার মূল দায়িত্বে থাকবে না। এর পরিবর্তে তারা প্রশাসনের রাজনৈতিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে কাজ করবে।

ইন্সপেক্টর জেনারেলরা মার্কিন সরকারে একটি অবহেলিত, কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা সরকারের অকার্যকারিতা, দুর্নীতি, অপব্যবহার এবং অন্যান্য অপরাধের খোঁজে কাজ করেন। বর্তমানে ৭৪টি ফেডারেল ইন্সপেক্টর জেনারেল বিভিন্ন সরকারি দফতরের তদারকি করে এবং তাদের কাজ সরকারি খরচ এবং কার্যকারিতা কমানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত সফল। গত বছর ফেডারেল আইজিরা এককভাবে প্রায় ৯৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করেছেন, যার ফলে প্রতিটি খরচের জন্য ২৬ ডলারের লাভ হয়েছে। এছাড়া ইন্সপেক্টর জেনারেলরা এমন সব গুরুত্বপূর্ণ তদন্ত পরিচালনা করে, যা শুধু আর্থিক দুর্নীতি নয়, বরং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার ব্যবস্থাপনা ত্রুটির ওপরও আলোকপাত করে। উদাহরণস্বরূপ ২০০৭ সালের একটি মার্কিন বিচার বিভাগীয় রিপোর্টে জানানো হয়, ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এক কেজিবি এজেন্টকে ধরা দেয়নি, যা এর গভীর ব্যবস্থাপনা ত্রুটি উন্মোচন করে।

আইজিরা যদি তাদের কার্যক্রমে স্বাধীন না থাকতে পারেন, তবে সরকারের বিরুদ্ধে যথাযথ তদারকি ও তদন্ত পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়বে। ট্রাম্প প্রশাসন যদি সত্যিই তার বিশ্বস্ত অনুসারীদের আইজির পদে নিয়োগ দেয়, তবে এই স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে, যা সরকারের স্বচ্ছতা এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা কমিয়ে দিতে পারে। যেহেতু আইজিরা শুধু অপরাধমূলক তদন্ত পরিচালনা করেন না, তাই তাদের কাজ আরো বৃহত্তর পরিসরে যেমন- প্রশাসনিক দুর্বলতা ও অপব্যবহার চিহ্নিত করাতেও গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যদি প্রেসিডেন্ট এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর মামলা দায়েরের বিরুদ্ধে সুরক্ষা বৃদ্ধি পায়, তবে আইজিরা তাদের দায়িত্ব পালন করতে আরো কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে।

এছাড়া বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের ‘ট্রাম্প বনাম যুক্তরাষ্ট্র’ সিদ্ধান্তের কারণে প্রেসিডেন্টের দায়মুক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর ফলে ভবিষ্যতে আরো সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য দায়মুক্তি সংক্রান্ত নীতির প্রসার ঘটতে পারে। এ পরিস্থিতিতে আইজিরা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। কারণ তারা যদি তদন্তে বাধাগ্রস্ত হয়, তবে এটি সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের বিরুদ্ধে স্বচ্ছতার অভাব সৃষ্টি করবে। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে আইজির স্বাধীনতা সংকটে পড়লে তার প্রভাব শুধু প্রশাসনিক কার্যকারিতা ও সরকারের স্বচ্ছতা দিয়েই শেষ হবে না, বরং এটি গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি- ন্যায়বিচার এবং দায়বদ্ধতার ওপরও আঘাত হানবে। আইজিরা সরকারের ভেতরের দুর্নীতি, অপব্যবহার ও ত্রুটি শনাক্ত করে তা জনগণের সামনে তুলে ধরে, যা সরকারি খরচ সাশ্রয় এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

ট্রাম্প প্রশাসনে ইন্সপেক্টর জেনারেলদের স্বাধীনতার প্রতি হুমকি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো এবং প্রশাসনিক কার্যকারিতা সংকটে ফেলতে পারে। ইন্সপেক্টর জেনারেলরা সরকারের ভেতরের দুর্নীতি, অপব্যবহার এবং অকার্যকারিতা চিহ্নিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা দেশের সরকারি ব্যয় সাশ্রয় এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাদের স্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকলে, তারা যথাযথভাবে তদন্ত পরিচালনা করতে সক্ষম হয়, যা সরকারের স্বচ্ছতা বজায় রাখে এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, যদি আইজিদের পদে রাজনৈতিক আস্থাভাজন নিয়োগ করা হয়, তবে এটি সরকারের অবিচলিত তদারকি এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। ইন্সপেক্টর জেনারেলদের স্বাধীনতা সংকুচিত হলে, তা শুধু সরকারের কার্যকারিতা এবং স্বচ্ছতার ক্ষতি করবে না, বরং এর ফলে দুর্নীতি এবং অপরাধের বিরুদ্ধে সংগ্রামের একটি শক্তিশালী হাতিয়ারও হারিয়ে যাবে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের ‘ট্রাম্প বনাম যুক্তরাষ্ট্র’ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের দায়মুক্তি সম্প্রসারণের সম্ভাবনা আরো সংকটপূর্ণ করে তুলেছে। যদি সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তে বাধা সৃষ্টি হয়, তবে তা জনসাধারণের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা এবং স্বচ্ছতার অভাব সৃষ্টি করবে।

সিনেটের বিচার বিভাগীয় কমিটির চেয়ারম্যান, রিপাবলিকান সিনেটর চাক গ্রাসলি এক বিবৃতিতে বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, তবে আমাদের জানতে হবে কেন এই পরিদর্শক জেনারেলদের বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, যদিও এই পদক্ষেপের যথাযথ কারণ থাকতে পারে, কংগ্রেসে ৩০ দিনের নোটিশ দেওয়া হয়নি, যা আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলক।

পরিদর্শক জেনারেলদের কাজ ছিল সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে দুর্নীতি, অপব্যবহার এবং ব্যয়বহুল কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নজরদারি রাখা। এসব পদক্ষেপের ফলে জনগণের টাকার সঞ্চয় হয় এবং সরকারি ব্যবস্থাপনা আরো স্বচ্ছ হয়। ডেমোক্র্যাটরা ও পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন যে, ট্রাম্প প্রশাসন এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে সরকারকে অপব্যবহার ও দুর্নীতির জন্য আরো উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। সিনেটর ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার বলেন, ‘গত রাতেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কমপক্ষে ১২টি স্বাধীন পরিদর্শক জেনারেলকে বরখাস্ত করেছেন। এটি একটি ভয়ংকর সাফাই এবং ট্রাম্প প্রশাসনের আইনগত শূন্যতা ও দুর্নীতির প্রতীক।

শেয়ার করুন