৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:৫২:৩১ পূর্বাহ্ন


রাজউক জনস্বার্থ উপেক্ষা করে ড্যাপ সংশোধন করছে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০২-২০২৫
রাজউক জনস্বার্থ উপেক্ষা করে ড্যাপ সংশোধন করছে


ঢাকার ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) সংশোধন এর ক্ষেত্রে ঢাকার বাসযোগ্যতা এবং সামগ্রিক জনস্বার্থ, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ প্রাধান্য পাবার কথা। অথচ আবাসন ব্যবসায়ী, ভবন ডিজাইন সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মহলের প্ররোচনায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) জনস্বার্থ ও ঢাকার বাসযোগ্যতাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও ড্যাপ সংশোধন এর প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। নগর পরিকল্পনাবিদদের পরামর্শকে একদমই আমলে না নিয়ে স্বেচ্ছাচারীভাবে এই কার্যক্রম চলছে। 

এমনটাই শোনা গেলো ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) কর্তৃক অনলাইনে আয়োজিত সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে। এর প্রতিপাদ্য ছিল -”বসবাসযোগ্যতায় তলানিতে থাকা ঢাকার ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) সংশোধন এর প্রক্রিয়া, উদ্দেশ্যে ও স্বার্থের দ্বন্ধ’ আইপিডির পর্যবেক্ষণ”। অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন আইপিডি পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান।

পরিকল্পনাবিদরা আরো বলেন, বিবেচনাহীনভাবে এলাকাভিত্তিক ও প্লটভিত্তিক ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) এবং জনঘনত্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে রাজউক, যাতে ইতিমধ্যেই যানজট ও বায়ুদূষণে প্রায় অচল ও মৃতপ্রায় এই শহরের কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হবে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউক এর অপরিণামদর্শী এই ধরনের উদ্যোগের পেছনে কোন উদ্দেশ্য ও কার স্বার্থ কাজ করছে, সেটার নির্মোহ তদন্ত করতে হবে সরকারকে। ঢাকার বাসযোগ্যতা বাড়াতে পরিকল্পনাবিদদের কারিগরি পরামর্শ এবং সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করেই ইমারত বিধিমালা ও ড্যাপের যৌক্তিক সংশোধন করবার উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। 

আইপিডি পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান তার মুল প্রবন্ধে বলেন, রাজউক কর্তৃক খসড়াকৃত ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় এবং ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার ফ্লোর এরিয়া রেশিও বা এফএআর সংক্রান্ত সংশোধন প্রস্তাবনায় পরিকল্পনাবিদদের মতামতের কোন প্রতিফলন দেখা যায়নি, যা অত্যন্ত হতাশাজনক এবং বাসযোগ্য ঢাকা গড়বার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে কাজ করবে। 

অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান আরো বলেন, অতীতে বিভিন্ন ব্যবসায়িক স্বার্থগোষ্ঠী শহরের পরিকল্পনা ও ইমারত বিধিমালাকে অনৈতিকভাবে প্রভাবিত করবার অপপ্রয়াস চালিয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতা ক্রমান্বয়ে তলানির দিকে গিয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশেও ইমারত বিধিমালা এবং ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) সংশোধন এর নামে ব্যবসায়িক গোষ্ঠী তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষায় তৎপর হয়ে উঠেছে, যা শহরের বাসযোগ্যতা, জনস্বাস্থ্য ও জনস্বার্থকে আরো হুমকিতে ফেলবে। এই তৎপরতায় সরকারি কিছু কর্মকর্তার পাশে কতিপয় পেশাজীবীগণ ও যোগ দিয়েছেন। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। পরিকল্পনা পেশাজীবীদের দেয়া প্রস্তাবনাকে গুরুত্ব না দিয়ে কাদের প্রস্তাবনায় এবং কাদের স্বার্থ রক্ষা করতে এই ধরনের পরিবর্তন করা হচ্ছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

আইপিডির উপদেষ্টা অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, রাজউক বারবার পরিকল্পনার মানদন্ডের সাথে আপোষ করে পরিকল্পনা ও ইমারত সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান করছে। মেরুদন্ডহীন ও দুর্বল এই রাজউকের সংস্কার করা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। আইপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, সমগ্রপৃথিবীতেই পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট আইন মেনেই রিয়েল এস্টেটকে ব্যবসা করতে হয়। পরিকল্পনাকে শ্রদ্ধা না করে পরিকল্পনাকে নিজস্ব ব্যবসায়িক স্বার্থে প্রভাবিত করবার এই ধরনের অপচেষ্টা হলে দেশে পরিকল্পনা করবারই প্রয়োজন নেই রাষ্ট্রের। 

হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ সেন্টার (এইচবিআরসি)'র নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাদেক বলেন, শহরের বাসযোগ্যতা কিংবা গোষ্ঠী স্বার্থে আইনের সংশোধনে শুধু রাজউকই নয়, মন্ত্রণালয় ও এই দায় এড়াতে পারে না। পরিকল্পনার বিষয়ে পরিকল্পনাবিদদের মতামত আমলে না নিয়ে অন্যদের মতামতের মাধ্যমে করলে শহর নষ্ট হতে বাধ্য। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফরহাদুর রেজা বলেন, পার্ক-খেলার মাঠ-বিদ্যালয় না নির্মাণ করে শহরের জনঘনত্ব বাড়ানো শুধু শহরের ধ্ববংসায়নই বাড়াবে। পরিকল্পনাবিদ মুনিম আব্দুল্লাহ বলেন, নাগরিকদের সম্পৃক্ত না করে শুধু ব্যবসায়ীদের দাবীর মুখে করা সংশোধন কোনভাবেই শহরের ও মানুষের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।

শেয়ার করুন