৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৩৯:২২ অপরাহ্ন


দেশকে নাদিয়া আহমেদ
নাটক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হতে পারে
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০২-২০২৫
নাটক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হতে পারে নাদিয়া আহমেদ


বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নাদিয়া আহমেদ। যিনি ৮০-এর দশকে শিশুশিল্পী হিসেবে টেলিভিশনে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এবছর তার অভিনয় জীবনের ২৫ বছর পূর্ণ করেছেন। মাঝে বিরতির পর ২০০০ সালে অভিনয়ে আবার ফিরে এসে তিনি ছোট পর্দার নিয়মিত মুখ হয়ে ওঠেন। একক নাটক থেকে ধারাবাহিক- তার প্রতিটি চরিত্রে রয়েছে আলাদা ঝলক। এই দীর্ঘ সফরে তার অভিজ্ঞতা, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন নাদিয়া। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির

প্রশ্ন: অভিনয় জীবনের ২৫ বছর পূর্ণ হওয়া সম্পর্কে আপনার অনুভূতি কী?

নাদিয়া: এতটা সময় পার করেছি, বুঝতেই পারিনি। আমার জন্য জার্নিটা ছিল বেশ স্মুথ। সবসময় দর্শকের সাপোর্ট পেয়েছি, পরিবারের সাপোর্ট পেয়েছি; বিশেষ করে আমার মায়ের কথা বলতে হয়। তিনি ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। মায়ের আদর্শেই চলার চেষ্টা করেছি এবং আমি তাঁর প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ। সহকর্মী, নির্মাতা, কলাকুশলীদের সমর্থনও ছিল। আমি থিয়েটার শিল্পী নই, যা শিখেছি তা তাদের কাছ থেকেই। নিজেকে আমি পরিচালকের শিল্পী মনে করি, তাদের গাইডলাইনই আমার পথকে আরও মসৃণ করেছে।

প্রশ্ন: শোবিজে আপনার যাত্রা কেমনভাবে শুরু হয়েছিল?

নাদিয়া: ছোটবেলায় নাচ দিয়ে সংস্কৃতি চর্চা শুরু করি। এরপর ‘নতুন কুঁড়ি’ প্রতিযোগিতায় অভিনয় ক্যাটাগরিতে অংশ নিয়ে তৃতীয় পুরস্কার অর্জন করি। তবে সেই সময় অভিনয়ের প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না। আমার প্রথম ভালোবাসা ছিল নাচ। তবে পরবর্তীতে বিটিভি থেকে একটি ধারাবাহিক নাটকের জন্য ডাক পাই এবং সেখানে বৈচি চরিত্রে অভিনয় করি, যা অনেক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তখন থেকেই আমার অভিনয় জীবনের পথচলা শুরু হয়, তবে প্রথমদিকে অভিনয়ের প্রতি তেমন ভালোবাসা তৈরি হয়নি।

প্রশ্ন: অভিনয়ে নিয়মিত কবে থেকে হয়ে উঠলেন?

নাদিয়া: প্রথমে তো অভিনয় করার ব্যাপারে তেমন কোনো আগ্রহ ছিল না। কিন্তু এক সময় বুঝলাম, নৃত্যশিল্পী হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার তুলনায় অভিনয়ে আসা সহজ। তাই মডেলিংয়ের দিকে মনোযোগী হই, এরপর নাটকেও অভিনয় করি। মোহন খানের ‘দূরের মানুষ’ ধারাবাহিকে অভিনয় শুরু করি, তবে প্রথম প্রচারিত হয় ‘ছায়াকায়া’। ২০০৪ সাল থেকে আমি নিয়মিত অভিনয় করতে থাকি।

প্রশ্ন: ২৫ বছরের ক্যারিয়ারে এসে নিজেকে কিভাবে মূল্যায়ণ করেন?

নাদিয়া: শুরু থেকেই একজন শিল্পী হওয়ার চেষ্টা করেছি, এখনও করছি। জীবনে সম্মান এবং ভালোবাসা- এই দুটি জিনিসই আমি পেয়েছি। শিল্পী হিসেবে সম্মান এবং ভালোবাসা পাওয়া অনেক বড় প্রাপ্তি। আমার পরিবার আমার কাজ নিয়ে গর্বিত এবং তাদের ভালোবাসাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। যখন আমার ২৫ বছরের ক্যারিয়ারের নিউজ হলো, তখন অনেকেই বলেছিল, ‘মিডিয়ার লক্ষী মেয়ে’। এই ধরনের ট্যাগ আমার জন্য অনেক বড় সম্মান।

প্রশ্ন: আপনার ক্যারিয়ারে এমন কোনো অপ্রাপ্তি রয়েছে কি?

নাদিয়া: হ্যাঁ, আমি ভিন্ন ধরনের অনেক চরিত্রে অভিনয় করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এখনো সে ধরনের চরিত্রে কাজ করা হয়নি। যদি পরিচালকেরা আমাকে সে ধরনের চরিত্রে ভাবেন, তাহলে ক্যারিয়ারে আরও প্রাপ্তি যোগ হবে।

প্রশ্ন: আপনি অভিনীত কোন চরিত্রটি এখনও মনে দাগ কাটে?

নাদিয়া: সাহিত্যের প্রতি আমার দুর্বলতা রয়েছে। অনেক কাজ করেছি কাজী নজরুল ইসলাম এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনায়। তবে, বিশেষ করে ‘বকুলপুর’ ধারাবাহিকের দিবা চরিত্রটি আমার মনে দাগ কেটেছে। পাঁচ বছর এই চরিত্রে কাজ করেছি এবং এটি দেশের বাইরে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল।

প্রশ্ন: আপনি কেন ওটিটিতে কাজ করছেন না?

নাদিয়া: এ ব্যাপারে নির্মাতারা জানেন। কিছু প্রস্তাব এসেছিল, তবে গল্প বা চরিত্র তেমনভাবে আকর্ষণ করেনি। আমি এমন কোনো কাজ চাই, যেখানে গল্প এবং চরিত্র আমার ভালো লাগবে। তখনই আমি ওটিটিতে কাজ করব।

প্রশ্ন: বর্তমান শোবিজ ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা কেমন মনে হয় আপনার?

নাদিয়া: এখনকার শোবিজ ইন্ডাস্ট্রি কিছুটা নিম্নগামী। ভালো গল্পের অভাব এবং ভালো লেখকের কাজ কমে গেছে। যেসব গল্প আগে পরিবারের কেন্দ্রিক হতো, এখন সেই ধরনের গল্প খুব কম। বর্তমানে গল্পগুলো ভিউ এবং টেনশনের ওপর নির্ভর করছে, যা আসলে নাটকের গুণমানের জন্য ভালো নয়। আমি মনে করি, নাটক এখনও সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হতে পারে।

প্রশ্ন: বর্তমান ভিউ এবং ভাইরাল ট্রেন্ডের বিষয়ে আপনার কী মতামত?

নাদিয়া: এখনকার সময়ে অনেক কিছুই ভিউ এবং ভাইরাল ট্রেন্ডের ওপর নির্ভর করছে। যখন আমি কাজ শুরু করি, তখন এসব ছিল না। আজকাল স্বল্প সময়ে দর্শকদের হাসি বা আনন্দ দেয়ার জন্য কনটেন্ট তৈরি করা হচ্ছে, যা এক ধরনের শর্টকাট। এতে ভালো গল্প বা মূল্যবোধের বিষয় কমে যাচ্ছে। ভিউয়ের ওপর ভিত্তি করে এখন কাজ তৈরি হচ্ছে, যা শিল্পী হিসেবে আমাদের গুণমানের কাজকে প্রভাবিত করছে।

প্রশ্ন: নৃত্যশিল্পী হিসেবে আপনার যাত্রা কেমন ছিল?

নাদিয়া: নাচ দিয়েই আমি শোবিজে এসেছি। মা আমাকে শিশু একাডেমিতে নাচ শিখতে পাঠিয়েছিলেন। তারপর আমি আন্তর্জাতিকভাবে নৃত্যশিল্পী হিসেবে পরিচিতি পেতে শুরু করি। ১৯৮৯ সালে শিশু প্রতিনিধিদলের হয়ে চীনে রাষ্ট্রীয় সফরের সুযোগ পাই। এরপর বিভিন্ন দেশে পারফর্ম করার সুযোগও পেয়েছি। নাচের কারণেই আমি অভিনয়ে এসেছি এবং এর মাধ্যমে আরও অনেক কিছু শিখেছি।

প্রশ্ন: নৃত্যশিল্পী হিসেবে পেশাদারিত্ব নিয়ে আপনার কী মতামত?

নাদিয়া: অনেক নৃত্যশিল্পী আছেন যারা শুধুমাত্র নাচকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন। কিন্তু নৃত্যের ক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের অভাব রয়েছে। অভিনয়শিল্পীর মতো নৃত্যশিল্পীর ক্ষেত্রেও পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তবে, আমি আশা করি, ভবিষ্যতে নৃত্যকেও পেশাদারির মাধ্যমে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।

শেয়ার করুন